বিসিএল

সাউথ জোনের জয়রথ থামিয়ে বিসিএলের চ্যাম্পিয়ন নর্থ জোন

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 14:39 রবিবার, 27 নভেম্বর, 2022

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

বিজয়ের হাফ সেঞ্চুরিতে ভালো শুরু পেলেও মাঝ পথে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলে সাউথ জোন। তবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফাইনালে আসা সাউথকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখেন নাসির হোসেন এবং নাসুম আহমেদ। শিরোপা জিততে শেষ ওভারে ১০ রান প্রয়োজন হলেও সেই সমীকরণে মেলাতে পারেননি হাফ সেঞ্চুরিয়ান নাসির। বরং দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে ফিরে যান অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। তবে সমীকরণ মেলাতে না পারায় ৩ রানে হারতে হয় সাউথ জোনকে। তাতে সাউথ জোনের জয়রথ থামিয়ে বিসিএলের শিরোপা জিতল নর্থ জোন।

মিরপুরে জয়ের জন্য ২৪৫ রান তাড়া করতে নেমে দেখেশুনে ব্যাটিং করতে থাকেন সাউথ জোনের দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও নাইম শেখ। প্রথম ৫ ওভারে তেমন কোন সুযোগ তৈরি করতে না পারলেও ষষ্ঠ ওভারে উইকেট তুলে নেয় নর্থ জোন। রিপন মণ্ডলের বলে কোমড় বরাবর বলে লেগ সাইডে পুশ করে এক রান নেয়ার পর জন্য দৌড় দিয়েছিলেন নাইম। তবে নন স্ট্রাইক প্রান্তে পৌঁছার আগেই সরাসরি থ্রো করে স্টাম্প ভাঙেন আকবর আলী। তাতে আগের তিন ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়া নাইমকে ফিরে যেতে হয় ১১ রানে।

নাইম ফেরার পর জাকিরকে সঙ্গে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন বিজয়। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে আর কোন উইকেট হারায়নি সাউথে জোন। ১ উইকেটে ৪৮ রান তোলা সাউথ জোনের দুই ব্যাটার বিজয় ও জাকির সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রান তোলার গতি বাড়িয়ে দেন। হাত খুলে খেলতে থাকেন বিজয়। সৈকত আলির বলে ছক্কা মেরে ৩৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। বিসিএলের এবারের আসরে যা বিজয়ের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। তাতে মাত্র ১৫ ওভারেই ১০০ তোলে নর্থ জোন।

তাদের দুজনের জুটি ১০০ ছুঁতেই সাজঘরে ফেরেন জাকির। রাকিবুল ইসলামের বলে মিড অফে ঠেলে দিয়ে এক রান নিতে চেয়েছিলেন বিজয়। ডানহাতি এই ওপেনারের ডাকে সাড়া দিয়ে দৌড় দিয়েছিলেন জাকির। তবে পরোক্ষণেই নিজের জায়গায় ফেরেন বিজয়। তাতে নন স্ট্রাইক প্রান্তে ফেরার আগেই রান আউটে কাটা পড়ে সাজঘরে ফিরতে হয় জাকিরকে। দারুণ ব্যাটিং করা বাঁহাতি এই ব্যাটার আউট হয়েছেন ৩৮ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলে। এরপর ধ্বস নামে সাউথ জোনের ব্যাটিং অর্ডারে।

নিজের দ্বিতীয় বলেই আউট হয়েছেন নাঈম ইসলাম। রিপনের গুড লেংথ ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। যদিও আম্পায়ারের এমন সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেননি নাঈম। তাই খানিকটা আক্ষেপ নিয়েই শূন্য রানে ফিরে যেতে হয় তাকে। নাঈম ফেরার পর আউট হয়েছেন বিজয়ও। রাকিবুলের বলে আলতো করে খেলতে গিয়ে তারই হাত ক্যাচ দিয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়া বিজয়কে ফিরতে হয়েছে ৫৯ রানে।

বিজয় আউট হওয়ার পরের বলেই উইকেট দিয়ে এসেছেন তৌহিদ হৃদয়। রাকিবুলের খানিকটা টার্ন করা বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়েছেন তরুণ এই ব্যাটার। নাসিরের সঙ্গে জুটি গড়তে পারেননি মেহেদি হাসান মিরাজও। রাকিবুলের বলে কাট করতে গিয়ে স্লিপে থাকা মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দেন তিনি। মাহমুদউল্লাহর তিন প্রচেষ্টায় ধরা ক্যাচে মিরাজ আউট হয়েছেন শূন্য রানে।

জিয়াউর রহমান ফিরেছেন আহত হয়ে। রিপনের বলে সোজা ব্যাটে খেলেছিলেন নাসির। বলটি সরাসরি হেলমেটে লাগে নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা জিয়াউরের। ততক্ষণাৎ মাঠ ছেড়ে বেড়িয়ে যান জিয়াউর। এরপর অবশ্য জুটি গড়ে তোলেন নাসির ও নাসুম আহমেদ। দারুণ ব্যাটিংয়ে তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৮৫ রান। রাকিবুলের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৩৮ রান করা নাসুম। আহত হয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়া জিয়াউর আবারও উইকেটে আসেন নাসুমের বিদায়ের পর।

ম্যাচ জিততে শেষ ৩৬ বলে নর্থ জোনের প্রয়োজন ছিল ৩৩ রান। এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে ৭৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন নাসির। যদিও ৪৩ রানে জীবন পান ডানহাতি এই ব্যাটার। রিপনের বলে ক্যাচ তুলে দিলেও সেটা লুফে নিতে পারেননি রিপন। এদিকে নাসুমের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামা জিয়াউর আউট হয়েছেন শূন্য রানে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বেড়িয়ে যাওয়া বল খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটকিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন জিয়াউর।

শেষ ওভারে ১০ রান প্রয়োজন হলে প্রথম বলে দুই রান নিতে গিয়ে আউট হন নাসির। ডানহাতি এই ব্যাটার ফেরেন ৬১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে। ব্যাটিংয়ে থাকলেও দলকে জেতাতে পারেননি কামরুল ইসলাম রাব্বি ও শরিফুল ইসলাম। শেষ পর্যন্ত ৩ রানে হারে সাউথ জোন।

এর আগে উইকেটে তেমন ঘাসের ছোঁয়া না থাকলেও খানিকটা বাউন্স আদায় করে নিতে পেরেছেন সাউথ জোনের বোলাররা। মাঝে মাঝে কয়েকটি ডেলিভারি দেখা গেছে নিচু হতেও। এমন অসম বাউন্সে খানিকটা বেগ পেতে হচ্ছিলো নর্থ জোনের দুই ওপেনার শাহাদাত হোসেন দিপু এবং লিটন দাসকে। থিতু হতে না পেরে তাই উইকেটে দিয়ে এসেছেন দিপু। পেসার শরিফুল ইসলামের গুড লেংথ ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন তরুণ এই ওপেনার।

আগের ম্যাচের সেঞ্চুরি তুলে নেয়া দিপু এদিন আউট হয়েছেন মাত্র ৪ রানে। আরেক ওপেনার লিটনও সুবিধা করতে পারেননি। বিসিএলের ওয়ানডে সংস্করণে আরও একবার ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। শরিফুলের বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরার আগে করেছেন ১১ বলে মাত্র ১ রান। আগের দুই ম্যাচে লিটনের ব্যাট থেকে এসেছে ১৩ রান।

এরপর অবশ্য প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন সৈকত আলি এবং ফজলে রাব্বি। তবে নিজেদের ভুল বোঝাবুঝিতে জুটি বড় করতে পারেননি তারা দুজন। মেহেদির হাসান মিরাজের বলে ড্রাইভ করে পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে এক রান নিতে চেয়েছিলেন ফজলে রাব্বি। বাঁহাতি এই ব্যাটারের ডাকে সাড়াও দিয়েছিলেন সৈকত। তবে নাসির হোসেন দ্রুতই থ্রো করায় নিজের সিদ্ধান্ত বদল করেন ফজলে রাব্বি।

বাঁহাতি এই ব্যাটার স্ট্রাইক প্রান্তে ফিরতে পারলেও নিজের নন স্ট্রাইক প্রান্তে ফিরতে পারেননি সৈকত। ফলে মাত্র ২২ রানেই ফিরে যেতে হয় দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা এই ব্যাটারকে। ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর নর্থ জোনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং ফজলে রাব্বি। তারা দুজনে মিলে যোগ করেছেন ৭৮ রান। মাহমুদউল্লাহ ফিরলে ভাঙে তাদের এই জুটি। 

নাসিনের গুড লেংথ ডেলিভারিতে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। আগের ম্যাচে ৯৬ রানের ইনিংস খেলা মাহমুদউল্লাহ এদিন আউট হয়েছেন ৩৯ রান করে। মাহমুদউল্লাহ ফেরার আগের বলেই অবশ্য হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ফজলে রাব্বি। ৮৯ বলে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। 

হাফ সেঞ্চুরির পর অবশ্য ইনিংস বড় করতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার। মিরাজের বলে উইকেটকিপার এনামুল হক বিজয়ের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন ৬৫ রান করা ফজলে রাব্বি। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার ফেরার পরের ওভারে কামরুল ইসলাম রাব্বির উপর চড়াও হন আকবর আলী। 

দুই চার এবং এক ছক্কায় সেই ওভারে ১৭ রান এনেছেন এই ব্যাটার। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা আকবরকে ফেরান মিরাজ। বিজয়কে ক্যাচ দিয়ে ৪৪ রানে আউট হয়েছেন নর্থ জোনের অধিনায়ক। এরপর অবশ্য দ্রুতগতিতে রান তুলেছেন শামিম হোসেন পাটোয়ারী।

শরিফুলের বলে স্ট্রেইভ ড্রাইভ করে লং অফে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে করেছেন ২০ বলে ৩৭ রান। শেষ দিকে ৬ রানে আউট হয়েছেন রাকিবুল হাসান। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৪৪ রান তোলে নর্থ জোন। সাউথ জোনের হয়ে শরিফুল তিনটি, মিরাজ দুটি এবং একটি করে উইকেট নিয়েছেন কামরুল রাব্বি এবং নাসির।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বিসিবি নর্থ জোন-  ২৪৪/৮ (৫০ ওভার) (লিটন ১, দিপু ৪, সৈকত ২২, ফজলে রাব্বি ৬৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৯, আকবর ৪৪, শামিম ৩৭; শরিফুল ৩/৪৫, মিরাজ ২/৩১)

বিসিবি সাউথ জোন- ২৪১/৯ (৫০ ওভার) ( নাসির ৬১, বিজয় ৫৯, নাসুম ৩৮; রাকিবুল ৪/২৯)