টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২

‘ক্লান্ত’ আরভিনের চাওয়া সরাসরি বিশ্বকাপ

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 22:52 শনিবার, 29 অক্টোবর, 2022

|| আবিদ মোহাম্মদ, ব্রিসবেন থেকে ||

সাউথ আফ্রিকার কাছে উড়ে যাওয়ার পর সিডনি থেকে ব্রিসবেন জার্নি। হেরে মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ যেন শারীরিকভাবেও খানিকটা নুয়ে পড়েছে। সাকিব আল হাসানরা নিজেদের চাঙ্গা করার সুযোগ পাচ্ছেন একদিন পরই। প্রতিপক্ষ সবচেয়ে চেনা-জানা জিম্বাবুয়ে। তবে বিশ্বকাপে সিকান্দার রাজারা যেন একেবারে সহজ প্রতিপক্ষ না সেটা পাকিস্তানকে হারিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে রোডেশিয়ানদের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই বাংলাদেশের।

চেনা প্রতিপক্ষ হওয়ায় পরিকল্পনা সাজাতে খুব বেশি বেগ পোহানোর কথা নয় সাকিবের দলের। তাই ভেবেই হয়তো এদিন কেবলই ঐচ্ছিক অনুশীলন। ইয়াসির আলি রাব্বি ও নুরুল হাসান সোহানের ব্যাটিং সঙ্গে শ্রীধরন শ্রীরামের সংবাদ সম্মেলন। গ্যাবায় এদিন বাংলাদেশের কাজ বলতে এটুকুই। সেটা শেষ করে তাই হোটেলে ফিরেছেন ঐচ্ছিক অনুশীলনে আসা ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফরা।

বাংলাদেশ ফেরার পর দুপুর দুইটায় অনুশীলনে নামার কথা জিম্বাবুয়ের। এর আগে ক্রেইগ আরভিনের দায়িত্বটা সংবাদ সম্মেলনে সামলানোর। গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে গ্যাবা স্টেডিয়ামের প্রেস বক্সে নির্ধারিত সময়ের একটু আগেই হাজির আরভিন। খানিকটা আগে আসায় অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না তার হাতে। তারপরও তিনি নিজ আসনে বসেননি, দাঁড়িয়ে ছিলেন গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য।

সবাই আসার পরই প্রশ্ন-উত্তর পর্বে যোগ দিতে আসন গ্রহণ করেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক। কিন্তু এর আগে তিনি আড্ডা-গল্পে মজেছিলেন জিম্বাবুয়ের মিডিয়া ম্যানেজারের সঙ্গে। আলাপ করছিলেন অনুশীলনে কোন কোন দিকে মনোযোগ দেবেন আজ। এর মাঝেই আরভিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ। পরিচয় দিতেই কোন সংকোচ ছাড়াই খোলামনে গল্প শুরু করলেন।

পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ে যে পুরো দল নির্ভার তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল আরভিনের কথায়। সঙ্গে বিশ্বকাপে বড় কিছু করে বসার যে তৃষ্ণা পুরো দলের মাঝে তৈরি হয়েছে তাও দুই-এক বাক্যে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। তাই আপাতত বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসকে ঘিরে বাড়তি মনোযোগ তাদের। কারণ এই দুটি ম্যাচ জিতলে ও সাউথ আফ্রিকা একটি ম্যাচ হারলেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শেষ চারের টিকিট পাবে জিম্বাবুয়ে।

দুটি ম্যাচে চোখ রাখা আরভিন এটাও মানেন কাজটা করতে শতভাগের বেশি দিতে হবে দলকে। সঙ্গে ছোট ছোট ভুলও এড়াতে হবে। তবে সেমিফাইনাল খেলার সপ্নে বিভোর হতেও নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করছেন তিনি। ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত আলাপে আরভিন জানিয়েছেন, বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলো নিয়ে তার ভাবনা। সঙ্গে ম্যাচ বাই ম্যাচ ভেবে যে সাফল্য আসবে তাও জানেন এই অলরাউন্ডার।

অন্য দলের ফলাফল থেকে মনোযোগ সরিয়ে রেখে পুরো মনোযোগ দলের প্রতি দিতে চান আরভিন। ক্রিকফ্রেঞ্জিকে ৩৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতেছি। তবে নিজেদের মাটিতে রাখতে চাই। এমন সুযোগ ক্যারিয়ারে খুব কম আসে যে আপনি সেমিফাইনালে খেলার কথা তৃতীয় ম্যাচে এসেই ভাবছেন।’

‘অবশ্যই ভাবনা আসবে। তবে এখানে নিজেকে আটকানোটা জরুরি। নাহলে ম্যাচ থেকে মনোযোগ সরে যাবে, মাঠে ছোট-খাটো ভুল হবে। এটাই চাচ্ছি না। পুরো দলকে একত্রে রাখার চেষ্টা করছি। কোন দল হারলে বা জিতলে কি হবে সেটাতেও মন দিতে চাইছি না। আমাদের খেলার দিকে মন দিচ্ছি। বাংলাদেশ আমাদের পরের প্রতিপক্ষ, অবশ্য তারা আমাদের কঠিন পরীক্ষা নেবে।’

আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা হয়নি জিম্বাবুয়ের। এবছর প্রাথমিক পর্ব খেলে আসতে হয়েছে মূল পর্বে। এর আগে খেলতে হয়েছে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব। নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে দলটি এখন এই পর্যায়ে। তবে সেমিফাইনালে খেলার চেয়ে আরেকটি বিষয় আরভিনদের অবশ্যই মাথায় আছে।

চলতি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে সেরা চারে থাকলে পরের বিশ্বকাপের সরাসরি টিকিট মিলবে। তবে চারে না থাকলেও রয়েছে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ২০ দলের টুর্নামেন্টে সরাসরি খেলবে স্বাগতিক দুই দল। বাকি ৮ দল দুই গ্রুপের সেরা চার দল। তবে ভাগ্য বদলে দিতে পারে আইসিসি র‍্যাঙ্কিংও।

সেরা দশে থাকা বাকি দুইদলও সরাসরি খেলার সুযোগ পাবে বিশ্বকাপে। অর্থাৎ স্বাগতিক দুইদল সহ মোট আরও ১০টি দল সরাসরি খেলবে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। তবে বারবার কোয়ালিফায়ার পর্ব খেলে নিজেদের প্রমাণ করতে করতে ক্লান্ত জিম্বাবুয়ে। তাই আগামী আসরের নিয়মে সন্তুষ্ট আরভিন।

২০০৭ সালের পর প্রতিবারই কোয়ালিফায়ার খেলেছে দলটি। মাঝের কয়েকটি বিশ্বকাপে সেরা ১২ বা ১৬ তেও আসার সুযোগ হয়নি তাদের। তবে আরভিন বিশ্বাস করেন সময় এখন বদলেছে। সময়ের সঙ্গে সব দলই এখন পারফর্ম করছে, বড় দলগুলোকে হারাচ্ছে। কঠিন বাস্তবতা থেকে তাই এখন সামনের দিকেই মনোযোগ তার।

সংবাদ সম্মেলনে আরভিন বলেন, ‘দেখুন আমরা কোন কিছু প্রমাণ করতে চাইনি। আমি মনে করি জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ডের জয়ে সবকিছুই খোলাসা হয়ে গিয়েছে। এটা খুবই ভালো হবে পরের আসরগুলোতে বাড়তি দলগুলোকে সরাসরি খেলতে দিলে। আর এটা তো হচ্ছেও।’

‘ওয়ার্ল্ড কাপেরও উত্তেজনা বাড়িয়ে দেবে সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। আমাদের জন্য একটা কোয়ালিফায়ার খেলে এসে আরও একটা কোয়ালিফায়ার খেলা খুবই কঠিন। তবে এটাই কঠিন বাস্তবতা। আমাদের দুইবার কোয়ালিফাইয়ার খেলে আসতে হয়েছে।’

জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের এমন বদলে যাওয়ার পেছনে আরভিন অবশ্য কৃতিত্ব দিচ্ছেন প্রধান কোচ ডেভ হটনকে। তার তত্ত্বাবধায়নে পুরো দলের মানসিকতা বদলে গিয়েছে বলেও জানান জিম্বাবুয়ের দলপতি। আরভিন বলেন, ‘ডেভ পুরো দলের মানসিকতা বদলে দিয়েছে। সেটা পারফরম্যান্সেই ফুটে উঠছে।’

‘সে খুব ঠান্ডা মাথায় পুরো দলকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা সত্যি অসাধারণ। আমাদের অনুশীলনের ধরণ বদলে দিয়েছে সে। এমন না যে সে নেটে প্রচুর অনুশীলন করায়, সবার ক্ষমতা বুঝে সে কাজ করে। এটা সবসময় এমন হবে না যে আপনাকে হাজার হাজার বল প্রতিদিন খেলতে হবে।’