টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২

টায়ার, ইয়র্কার এবং হাসানের 'এক্সিকিউশন'

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 15:17 রবিবার, 23 অক্টোবর, 2022

|| কুইন্সটন টুইন ওভাল থেকে আবিদ মোহাম্মদ ||

কারও ক্যামেরা লেন্স বা দৃষ্টি তার দিকে হয়তো দুয়েক বারের বেশি যায়নি। কেউ কেউ হয়তো মনোযোগ দেয়ারও সময় পাননি হাসান মাহমুদের দিকে। মাঠে উপস্থিত ১৫ ক্রিকেটারের মাঝে সবচেয়ে কম আলোচিত বলা চলে ডানহাতি এই পেসারকে। কিন্তু অনুশীলনে তার চেষ্টা ছিল হোবার্টের পাহাড়সমান উঁচু। এই চেষ্টাটাই হয়তো হাসানকে অনুশীলনে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।

যার প্রমাণ হলো স্পট বোলিংয়ের ২৪ বলের ১৩টিতেই লক্ষ্যভেদ। সফল নেট সেশন শেষে ম্যাচ আবহাওয়া অনুশীলনেও একই কাজটাই করেন হাসান। ইয়াসির আলী রাব্বির স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলার সঙ্গে নুরুল হাসান সোহান, আফিফ হোসেনদের কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলেন এই পেসার।

সেখানের ৬ বলের ৩টিতে একদম জায়গা মতো ইয়র্কার করেন হাসান। বাকি দুটি বলের একটিতে নুরুল স্কুপ মেরে চার মারলেও তার বিপক্ষে বড় রান নিতে পারেননি কেউই। তবে নুরুলের হাঁকানো সেই এক শটের পরের দুটি বল স্লোয়ার ডেলিভারিতে ব্যাটারকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেন এই ডানহাতি বোলার।

শুরুর দিকে হাসানের উপর মনোযোগ ছিল না একদমই। কিংস্টন টুইন ওভালের সেন্টার উইকেটে ম্যাচের আবহাওয়া তৈরি করে অনুশীলন করছিল দল। নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার ছিলেন সেখানে। এর উল্টো পাশে নেটে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ব্যাটিং অনুশীলন চালাচ্ছিলেন লিটন।

ঠিক তখন থেকেই একটা টায়ার (চাকা) দিয়ে লক্ষ্য তৈরি করে বা স্পট বোলিং করে যাচ্ছিলেন হাসান। এর মাঝে সাকিব-লিটনের অনুশীলন শেষ হয়েছে। ইয়াসির, নুরুল ও সৌম্যরা নেটে এসেছেন কিন্তু এক পাশে টানা বোলিং করেই যাচ্ছিলেন তিনি।

বল কখনও ঠিক জায়গা মতো পড়ছে না, আবার কখনও ফুল টস পড়ে যাচ্ছে। যখনই ভুল হচ্ছে হাসান থেমে সময় নিচ্ছেন আবার শুরু করছেন। তার এই চেষ্টাতেই যেন চোখ আটকে রইল দীর্ঘক্ষন। ডেথ ওভারে সফল হতে যে হাসান সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করছেন তা দেখেই স্পষ্ট ধারণা মিলছিল।

টায়ারের অর্ধেক অংশ কাটা থাকায় দূর থেকে স্পষ্ট বোঝাও যাচ্ছিল না সেটা কি! এক পর্যায়ে দূর থেকে তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি ইয়র্কার করার চেষ্টা করছি। ব্যাটারের পা লক্ষ্য করছি। এটা টায়ার, দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে না হয়তো।’

হাসান একা অনুশীলন চালিয়ে গেলেও মিনিট পাঁচেক পর অ্যালেন ডোনাল্ড এসে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। শিষ্য কোন ভুল করলে তা ঠিক করেও দিচ্ছিলেন। আবার ছুটে যাচ্ছিলেন তাসকিন-মুস্তাফিজের দিকে। এই দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল নেদ্যারল্যান্ডসের বিপক্ষে পেস বোলিং বিভাগে সামাল দেবেন তারাই।

ম্যাচ আবহ তৈরি করে বাংলাদেশ দল এদিন অনুশীলন করেছে দুই ভাগে। ওপেনারদের নিয়ে একবার, আবার মিডল অর্ডার বা লোয়ার মিডল অর্ডার নিয়ে একবার। ওপেনারদের সময় ফিল্ডিং পজিশন ছিল পাওয়ার প্লে’র, ইয়াসির-আফিফদের ক্ষেত্রে ছিল ডেথ ওভারের ফিল্ডিং।

নিউমোনিয়া থেকে সুস্থ হয়ে হোবার্টে দলের সঙ্গে যোগ দেয়া রঙ্গনা হেরাথও। এদিন শিষ্যদের নিয়ে ছিলেন ব্যস্ত তিনি। মেহেদি হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন ও নাসুম আহমেদকে নিয়ে প্রায় মিনিট বিশেক নেটে সময় পার করেন তিনি। তিন বোলারই মনোযোগই ছিলেন ব্যাটারদের পেছনের পায়ে খেলতে বাধ্য করতে আর লেন্থ বোলিং করতে।

এসবের মাঝে হেরাথের সঙ্গে বোলিংয়ে আরও ভালো করা নিয়ে আলোচনাও করেন মিরাজ। দুজনের কথোপকথন দূর থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। মিরাজ বলছিলেন, 'এই ধরনের পিচে উইকেটে বোলিং করা খুব কার্যকারী। বল লাফিয়ে উঠে, ব্যাটার দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। এটা কাজে লাগাতে পারলে সফল হওয়া সহজ হবে।’

হোবার্টের বেলিরিভ ওভাল নেদ্যাল্যারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এই মাঠের উইকেট থেকে স্পিনাররা বেশ সহায়তা পেয়ে থাকেন। বিশ্বকাপেও স্পিনাররা বেশ সফল। এই কথা মাথায় রেখেই হয়তো মুস্তাফিজ-হাসানরা অনুশীলনে বেশি স্লোয়ার ছেড়েছেন। মিরাজ-মোসাদ্দেরাও টাইট লাইনে বোলিংয়ের চেষ্টা করছিলেন।

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেন, ‘দেখুন, বিশ্বকাপের পাঁচটা ম্যাচের প্রস্তুতি আমরা নিয়ে এসেছি। যার সাথেই খেলি, প্রস্তুতি একই থাকবে, হোক তা নেদারল্যান্ডস বা দক্ষিণ আফ্রিকা বা পাকিস্তান, ভারত, জিম্বাবুয়ে। সবাই যোগ্য দল হিসেবেই এসেছে। নেদারল্যান্ডস আসাতে বাংলাদেশ দল বোধহয় স্বস্তি বোধ করছে- এই ভাবনাও আপনারা তৈরি করেছেন।’

‘আমরা এভাবে কখনোই প্রস্তুতি নিই না। আমার মনেও হয় না পৃথিবীর কোনো দল এভাবে চিন্তা করে। আমাদের দলের ভেতর এমন কোনো অনুভূতি নেই। শ্রীলঙ্কা যদি আসতো, ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি আসতো, যে প্রস্তুতি থাকত, অন্যান্য দলেও একই প্রস্তুতি থাকবে। স্বস্তি কি না এ নিয়ে যেসব আলোচনা চলছে, সেটা অবশ্যই মিডিয়ার তৈরি করা।’

একাদশে স্পিনারদের প্রাধান্য দেয়া হবে কিনা এই প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, ‘আমরা যে ১৫ জন এসেছি, কোনো সন্দেহ নেই- যাকেই দলে নেই, তার কাছ থেকে সেরা পারফরম্যান্স পাব। তাই স্পিনার বেশি খেলাতে চাই নাকি স্পিনার এটা নিয়ে দুর্ভাবনার কিছু নেই। যে-ই খেলবে সেই ভালো করবে, এ বিষয়ে আমি খুবই আশাবাদী।’