টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২

বিশে তিন, শ্রীরামের ভরসা আফিফ

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 16:42 বৃহস্পতিবার, 20 অক্টোবর, 2022

|| ব্রিসবেন থেকে আবিদ মোহাম্মদ ||

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট ধুমধাড়াক্কার খেলা। ২০ ওভারের ম্যাচে ছন্দ পেতে বা হারাতে প্রয়োজন এক থেকে ২ ওভার। পাওয়ার প্লের সঠিক প্রয়োগ ও স্লগ ওভারে দ্রুত রান তোলার সঙ্গে এখানে প্রয়োজন মাঝের ওভারগুলোতেও রানের চাকা সচল রাখা। তাই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে আফিফ হোসেন-নাজমুল হোসেন শান্তদের এই দীক্ষাই দিচ্ছিলেন শ্রীধরণ শ্রীরাম।

বিশ্বকাপকে ঘিরে ব্যাটিংয়ে ২০ ওভারের খেলাটাকে ৩ ভাগে ভাগ করেছেন শ্রীরাম। পাওয়ার প্লের দায়িত্ব সামাল দেবেন ওপেনাররা। এরপর ৮ থেকে ১২ ওভারকে তিনি আরেকটি ভাগে ভাগ করেছেন। যেখানে ৮ রান রেটে ব্যাট করার লক্ষ্য থাকবে মিডল অর্ডার ব্যাটারদের। যার একটা ছাপ শ্রী তৈরি করার চেষ্টা করেছেন বৃহস্পতিবারের অনুশীলনে।

৮ ওভারে দলীয় রান ২ উইকেটে ৬০! উইকেটে আফিফ হোসেন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এই চাপ সামলেই দ্রুত রান তোলার দায়িত্ব তাদের কাঁধে দিয়েছেন বাংলাদেশের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট। তবে তার মূল মনোযোগ আফিফের দিকে। বিগত কয়েক ম্যাচ ধরেই ৪ বা ৫ নম্বরে ব্যাট করছেন তিনি। সব ঠিক থাকলে বিশ্বকাপেও এই পজিশনেই খেলবেন তিনি। তাই মিডল অর্ডারে দ্রুত রান তোলার ভারও মূলত তার ওপর।

৫ এ ব্যাটিং করে ১৪ ইনিংস খেলে আফিফের স্ট্রাইক রেট ১৩০.৬০। এই পজিশনে বাংলাদেশের হয়ে একাধিক ইনিংস খেলা ব্যাটারদের মধ্যে আফিফের স্ট্রাইক রেটই সবচেয়ে বেশি। তাই শ্রীরাম আরও মনোযোগী এই ব্যাটারকে নিয়ে। অনুশীলনে দূর থেকে তাদের কথপকথন শোনা যাচ্ছিল স্পষ্ট।

বাংলাদেশের টেকনিক্যাল কানসালটেন্ট নেটে যা বললেন আফিফকে, একটু দূর থেকেও তা শোনা গেল স্পষ্ট, '৮ থেকে ১২ ওভারের খেলা চলছে, স্কোরবোর্ডে ২ উইকেটে ৬০ রান। মিড অফ-মিড অনও ভেতরে থাকবে'। সঙ্গে সঙ্গে আফিফ চ্যালেঞ্জে নেমেও পড়েন।

ইনসাইড আউট, দারুণ সব ড্রাইভ যেমন খেললেন। শরীর ঘুরিয়ে মিরাজকে একবার উড়িয়েও মেরেছেন। তা নিয়ে দুজনের মধ্যে এ নিয়ে হয়েছে কথা কাটাকাটিও। আউট নাকি ৪! শেষ পর্যন্ত সমাধান হয়েছে ২ রানে। আবার আফিফ ভুল করলে তা শুধরেও দিচ্ছিলেন শ্রীরাম। মোট ৩ ওভারের মত চলে এমন অনুশীলন। অনুশীলন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শ্রীরাম বললেন, মাঝের ওভারগুলোয় দলের ইনিংস গতিময় রাখার পথ খুঁজছেন তারা।

শ্রীরাম বলেন, 'এটা নির্ভর করে ম্যাচের পরিস্থিতির ওপর। এটাই আমরা শেখার চেষ্টা করছি, ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী কীভাবে খেলা যায়। যে অবস্থাই থাকুক… কখনও রান থাকবে ৪ উইকেটে ৬০, কখনও ২ উইকেটে ১২০, সব পরিস্থিতির দাবিই মেটাতে হবে। তবে মূল ব্যাপার হলো, হ্যাঁ, মাঝের ওভারগুলোয় প্রভারপ্রতি ৮ রান তুলতে হবেই।'

'ঝুঁকি অবশ্যই নিতে হবে। তবে সেটা হতে হবে সঠিক ঝুঁকি। উপযুক্ত বোলার বেছে নিয়ে সঠিক জায়গা লক্ষ্য বানিয়ে, নিজের হিটিং এরিয়ার ডাইমেনশন বুঝে হিট করতে হবে। অর্থাৎ, স্রেফ ব্যাটিং করে যাওয়ার চেয়েও অনেক বেশি কিছু করতে হবে। ওরা এসবই শেখার চেষ্টা করছে।’

বুধবার বাংলাদেশ দল ২২ গজে অনুশীলের সুযোগ পায়নি। বৃষ্টিতে পণ্ড হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের ম্যাচ। তাই শ্রীরাম বললেন, নেট সেশনগুলোই সর্বোচ্চ কার্যকর করার চেষ্টা করছেন তারা। তার ভাষ্যমতে, 'আবহাওয়া নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। এটা নিয়ে আমরা কথাও বলেছি। যা পাচ্ছি, সেটিরই সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিটি সেশনই জরুরি। এজন্যই প্রতিটি নেট সেশন গুরুত্বপূর্ণ। নেটে যতটা সম্ভব চাওয়াগুলো পূরণ করার চেষ্টা করছি আমরা। বাস্তবতার কাছাকাছি যতটা থাকা যায়।'

'নেটে স্রেফ বল হিট করাই নয়, কীভাবে হিট করছি, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা। বোলারদের ক্ষেত্রেও একই কথা। প্রয়োগের দিকে মনোযোগ দেওয়া, তাদেরকে চাপে ফেলা, ছোট ছোট লক্ষ্য দেওয়া…সব মিলিয়ে আমরা সঠিকই পথেই আছি। যা পাচ্ছি (সুযোগ), কাজে লাগাচ্ছি।'

আফিফ-শান্ত ছাড়াও লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়েও নেটে কাজ করেছে টিম ম্যানেজম্যান্ট। বিশেষ করে এবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদের ব্যাটিংয়ের দিকে বাড়তি মনোযোগ ছিল তাদের। এবাদতকেও শেষের দিকে দ্রুত রান তোলার জন্য রান বেধে দিয়েছিলেন শ্রী। তাকে লক্ষ্য দেয়া হয় ৬ বলে ৮ রান। যদিও ৩বারের চেষ্টায় এই পরীক্ষায় পাশ করে কোচের বাহবাহও পান এবাদত।

অনুশীলন শুরুর আগে জেমি সিডন্স অবশ্য উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আবারও বলেন অস্ট্রেলিয়ায় জিততে ১৬০ এর বেশি করতে হবে না। তিনি বলেন, 'দেখেছো তো বিশ্বকাপের ম্যাচগুল্ম। এখানে ১৬০-১৭০'ই যথেষ্ট। এর বেশি প্রয়োজন নেই।'