টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২

ওপেনিংয়ে ‘ভাবনাহীন’ বাংলাদেশের ৩ ঘণ্টার অনুশীলনে মধ্যমণি শান্ত-সৌম্য

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 13:56 বৃহস্পতিবার, 20 অক্টোবর, 2022

|| ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে আবিদ মোহাম্মদ ||

ব্রিসবেনের আবহাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়া বড়ই কঠিন। এই রোদ তো এই বৃষ্টি, সঙ্গে শীতের আবহ তো আছেই। এমনিতেই বুধবারে বৃষ্টিতে পণ্ড হয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচ। ২২ গজে নিজেদের ঝালাই করার সুযোগ পায়নি সাকিব আল হাসানের দল। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছিল, বৃহস্পতিবারও থাকবে একইকম আবহাওয়া। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। মেঘলা দিনে, ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় অনুশীলন সেরেছে শ্রীধরণ শ্রীরামের শিষ্যরা। ইঙ্গিত মিলেছে বিশ্বকাপের শুরুতে কি ধরনের পরিকল্পনায় হাঁটতে পারে সাকিববাহিনী।

প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে চলা এই অনুশীলনে পুরোটাই তত্ত্বাবধায়ন করেছেন শ্রীরাম। সঙ্গে ছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনও। এছাড়া বাকি কোচিং স্টাফদের সবাই চেষ্টা করেছেন কিভাবে পুরো দলকে প্রথম ম্যাচের জন্য প্রস্তুত করা যায়। যদিও বাংলাদেশ দল প্রথম ম্যাচ খেলবে হোবার্টে। ২২ অক্টোবর শহরটির উদ্দেশ্যে বিমান ধরবেন সাকিব-ইয়াসিররা।

ফুটবল খেলে গা গরম করে অনুশীলনের শুরুটা করে বাংলাদেশ দল। ২ দলে ভাগাভাগি হয়ে ২০ মিনিটের মতো খেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত- মুস্তাফিজুর রহমানরা। শিষ্যদের সঙ্গে মাঠে নেমেছিলেন নান্নু-সুজনরাও। ক্রিকেটাররা যেসময় গা গরমে ব্যস্ত তখন জেমি সিডন্স ছিলেন নেটেই, সঙ্গে ছিলেন ফিল্ডিং কোচ। এক পর্যায়ে দুজন নেটের এক কোনায় গিয়ে কাগজে লিখে নিচ্ছিলেন পুরো অনুশীলন সেশন কিভাবে চলবে।

এদিন বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে সবচেয়ে বেশি নজর ছিল ওপেনারদের ওপর। যদি ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন ধরেই প্রথম ম্যাচে মাঠে নামতে চায় দল সেক্ষেত্রে লিটন দাসের সঙ্গী কে হবেন? সৌম্য সরকার নাকি নাজমুল হোসেন শান্ত! বড় প্রশ্ন ছিল এটি। আর স্বাভাবিকভাবেই লিটন শুরুতে সবার আগে চলে আসেন মূল নেটে।

নেট থেকে অনেক সময় ধারণা পাওয়া যায় কেমন হতে পারে একাদশ। কিন্তু এখানেও যেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে রেখে দিল টিম ম্যানেজমেন্ট। একসঙ্গে পাঠানো হলো শান্ত ও সৌম্যকে। তবে মূল নেটে নয়। বোলিং প্রান্তের একটু কোণার আরেকটি নেটে। বোলিংয়ের জন্য পাঠানো হল শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদকে।

সৌম্য-শান্তর মাঝে লিটনের সঙ্গী কে হচ্ছেন তা পরখ করতে শিষ্যদের অনুশীলন পাশে দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখলেন সুজন ও নান্নু। যে ওপেনিং নিয়ে এতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এতো আলোচনা তার গোলকধাঁধা যেন রয়েই গেল। শুরুতে দুই ব্যাটারই ব্যাটে-বলে টাইমিং মিলছিল না। তাসকিনও লেগ সাইডে একের পর এক ওয়াইড দিয়ে যাচ্ছিলেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উইকেট বুঝে দুই ওপেনারও ধীরে ধীরে সাবলীল হয়ে উঠতে থাকেন। মিনিট বিশেক পর সেই নেটে চলে আসেন স্পিনাররা। মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ শুরুতে লিটন, সোহান ও আফিফদের বোলিং করলেও সৌম্য-শান্তর নেটে প্রায় আধঘণ্টা বোলিং করেন। সেখানে যোগ দেন সাকিব আল হাসানও স্পিনারদের দেখে শুনে খেলার সঙ্গে বড় শটও খেলেন তারা।

এক পর্যায়ে সৌম্য পাশের নেটে চলে আসলেও অনুশীলন চালিয়ে যান শান্ত। প্রায় দেড় ঘন্টার মতো নেটে ঘাম ঝড়ান এই ব্যাটার। অনুশীলনে তার চেষ্টা বুঝিয়ে দিচ্ছিল ফর্মে ফিরতে বা একটি বড় স্কোরের খোঁজে থাকা এই ব্যাটার কতটুকু মরিয়া। টপ অর্ডার ছাড়া এদিন বাকিরাও অনুশীলনে ব্যাটিং নিয়ে ছিলেন বাড়তি মনোযোগী। অধিনায়ক সাকিবও নেটে মিনিট দশেকের মতো অনুশীলন করেন।

সব মিলিয়ে পুরো অনুশীলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ওপেনিং ইস্যু। যা নিয়ে চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। হচ্ছে আলোচনা, সমালোচনাও। তবে অনুশীলন শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কোচ শ্রীরাম জানিয়েছেন, ওপেনিং নিয়ে কোন সমস্যা নেই। উল্টো এই প্রসঙ্গে কেন আলোচনা হচ্ছে তাই বুঝে উঠতে পারছেন না এই ভারতীয়। পাশাপাশি প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ ঠিক না হওয়ায় সেরা একাদশ খোলাসাও করতে চাননি তিনি।

শ্রীরাম বলেন, 'আমরা জানি না কার সঙ্গে খেলব (প্রথম ম্যাচে)! তবে আমার সেরা একাদশ আমি জানি। তবে প্রতিপক্ষ জানি না… প্রতিপক্ষের ওপর এটা নির্ভর করবে। প্রতিপক্ষ অনুযায়ী পরিবর্তনও হতে পারে।'

ওপেনিং ইস্যুতে একাধিক প্রশ্ন আসায় খানিকটা বিরক্তির সুরেই শ্রী আরও বলেন, 'ওপেনিং নিয়ে আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু চাই-ই চাই কেন? আগেও বলেছি, দল হিসেবে বাংলাদেশের দিকে তাকাতে হবে আমাদের। ওপেনিং নিয়ে আমরা এতটা পড়ে আছি কেন! এত প্রশ্নের মানেই দেখি না। দল হিসেবে বাংলাদেশ নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের। আমাদের শিখতে হবে কীভাবে ম্যাচ জিততে পারি। আমি যেটা বলে আসছি, ম্যাচের পরের ভাগ নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের। দ্বিতীয় ১০ ওভারের ব্যাটিং, দ্বিতীয় ১০ ওভারের বোলিং ভাবতে হবে।'

'যতই আমরা দল হিসেবে খেলব, ততই ছেলেরা নিজেদের ভূমিকা বুঝতে পারবে। বিশ্বজুড়ে তাকান, সব দলই ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে খুবই উন্মুক্ত। ফিঞ্চ চার নম্বরে ব্যাট করছে, ক্যামেরন গ্রিন ওপেন করছে। আমাদেরও ফ্লেক্সিবল হতে হবে। টি-টোয়েন্টিতে ফিক্সড ব্যাটিং অর্ডার জরুরি নয়। ম্যাচ আপ নিয়ে ভাবতে হবে। যেমন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেললে মুজিবের বিপক্ষে দুজন বাঁহাতি রাখাই যাবে না (ওপেনিংয়ে), একজন ডানহাতি লাগবেই। প্রোপার ওপেনারের চেয়েও আরও অনেক বেশি গভীর ভাবনা চলছে এখানে। সেসব ভাবতে হবে। প্রোপার ওপেনার বলতে কী বোঝাচ্ছেন, সেটাই বরং আলোচনার ব্যাপার।'

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয় শূন্য থাকা দল প্রায় প্রতি ম্যাচেই ওপেনিং জুটিতে পরীক্ষা চালিয়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচেও যা বহাল ছিল। তবে শ্রীরামের মতে, ওপেনিং নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এই পজিশনে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তার ভাষ্যমতে, 'নিউজিল্যান্ডে প্রতি ম্যাচেই আমরা ৬ ওভারে ৪০ রান পেয়েছি। ওপেনিং নিয়ে দুর্ভাবনা আছে কেন মনে করছেন, এটাই বরং আমার প্রশ্ন। নিউজিল্যান্ডে প্রতিটি দলের জন্য প্রথম ৬ ওভারে ৪০ রান ছিল প্রায় পার স্কোর এবং বাংলাদেশ প্রতি ম্যাচেই সেটা করেছে। আপনারা তাই কেন মনে করছেন যে ওপেনিং নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে, এটাই আমার প্রশ্ন। আমার মনে হয়, আমরা ওপেনিংয়ে অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে'।