টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২

কাছে তবুও দূরে...

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 21:48 সোমবার, 17 অক্টোবর, 2022

|| ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে আবিদ মোহাম্মদ ||

চাকরির সুবাদে পরিবার থেকে থাকতে হয় দূরে। বছরের অর্ধেকের বেশি সময় বাংলাদেশে বা বাংলাদেশ দলের সঙ্গে সফরেই চলে যায়। মাঝে সময় পেলে নিক লি ছুটে যান স্ত্রীর কাছে। কিন্তু এবার বাংলাদেশ দলের প্রধান ফিটনেস ট্রেনারকে ছুটিতে যেতে হয়নি! বিশ্বকাপ চলাকালীন ব্রিসবেনেই পেয়ে গিয়েছেন স্ত্রীর সঙ্গ। তবে এই সঙ্গ পাওয়ার ক্ষেত্রেও আছে নানা রকমের বিধি-নিষেধ। সেসব অবশ্য হাসিমুখেই বরণ করে নিয়েছেন কিয়ারা গ্রিনও।

রবিবার বিশ্বকাপের মূল লড়াইয়ে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ দল প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ম্যাচটিতে মাঠে বসে খেলা দেখার বা সাকিব-সৌম্যদের সমর্থন দিতে পারেননি প্রবাসী বাংলাদেশীরা। কারণ অ্যালান বোর্ডার ফিল্ডে তাদের প্রবেশের অনুমতি ছিল না। কিন্তু একজনের কড়তালির আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল ম্যাথু হেইডেন স্ট্যান্ড থেকে। কিন্তু সেটা ছিল একজন বিদেশির!

ম্যাচ কভার করতে আসা সাংবাদিকদের নজর বেশ কয়েকবারই কেড়েছেন এই বিদেশি। কারণ বাংলাদেশ দলকে স্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত উজ্জিবিত করছিলেন তিনি। তার এমন সমর্থন দেখে আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করেই বসলাম! পরবর্তীতে জানতে পাওয়া গেল, নিক লির স্ত্রী (কিয়ারা) তিনি।

আইসিসির নিয়ম-কানুনের বেড়াজালে দলের সঙ্গে বসার নিয়ম নেই তার। যে কারণে গ্যালারিতে বসেই খেলা দেখছেন, সমর্থন দিচ্ছেন। আবার মাঝে মাঝে স্বামী লির দিকে আড়চোখেও তাকিয়ে দেখছেন। সঙ্গে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কখন ম্যাচ শেষ হবে! তাহলেই একসাথে হতে পারবেন দুজন।

কিয়ারা অবশ্য শুধু একজন দর্শক বা লির স্ত্রী নন। একজন ক্রিকেটারও। সঙ্গে একটি স্কুলেও চাকরি করেন। যুক্তরাজ্য থেকে ২ সপ্তাহের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন স্বামীর সঙ্গে থাকতে। ছুটি শেষে আবারও বাড়ি ফিরবেন, এর আগ পর্যন্ত প্রতি ম্যাচেই বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দিয়ে যাবেন। ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এসব বিষয় নিয়েই কথা বলেন কিয়ারা।

তিনি বলেন, 'আমি যুক্তরাজ্য থাকি। এই মুহূর্তে এখানে বসে আছি কারণ আমার ভেতরে বসার নিয়ম নেই। তবে ম্যাচ শেষে আবারও দেখা করতে পারব। রাতে আমরা এক হোটেলে বা এক রুমেই থাকি। এখন নিয়মের কারণে ওর কাছে থাকতে পারছি না। দুই সপ্তাহ আছি আপাতত।'

'ও তো বাড়ি বেশি আসে না। আমার এটাতে এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। এখন একটু সুযোগ পেয়েছি তাই ওর সাথে থাকতে এসেছে পড়েছি। সবসময় আসলে এমন সুযোগ পাই না। ওর সাথে দেখাই তেমন হয় না। খুব ব্যস্ত থাকে, বছরের অর্ধেকের বেশি ওর কাজের পেছনে চলে যায়। ৬ বছর ধরে থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।'

স্বামী লি'র বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় সাথে পান না কিয়ারা। তবে তাতে আফসোস করেন না তিনি। মাঝে সুযোগ পেলে এভাবেই ছুটে আসেন, যেমন গেল এশিয়া কাপে করেছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে একবার হলেও ঘুরতে আসতে চান তিনি।

কিয়ারা বলেন, 'আমার বাংলাদেশ দলকে খুব পছন্দ করি। দলের সঙ্গে এশিয়া কাপেও ছিলাম। যদিও চূড়ান্ত ফলাফলটা ভালো ছিল না, তবে সুন্দর অভিজ্ঞতা ছিল। আমি চাই ও (লি) বাংলাদেশ দলের সঙ্গে লম্বা সময় থাকুক। আমি একবার হলেও দেশটাতে যেতে চাই। শুনেছি খুব সুন্দর।'

লি ও কিয়ারার বিয়ের বয়স প্রায় ৬ বছর। তবে এই দম্পতি এখনও কোন সন্তান নেননি। মূলত স্ত্রীকে ক্রিকেটের প্রতি বাড়তি মনোযোগী রাখতেই লি'র এমন চাওয়া বলে জানিয়েছেন কিয়ারা। তার ভাষ্যমতে, 'আমি দক্ষিণ লন্ডনে (ব্রাইটন) থাকি। একটা স্কুলে কাজ করি। পাশাপাশি ক্রিকেটও খেলি। তবে পেশাদার নয়, আঞ্চলিক ক্রিকেট (নারীদের)। এটা সেমি পেশাদার ক্রিকেট, চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটাররা, সঙ্গে বাইরে থেকেও খেলার সুযোগ থাকে। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে সুযোগ পাই।'

বাংলাদেশ দল প্রস্তুতি ম্যাচে আশানুরুপ পারফর্ম করেনি। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়েও দল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভালো করতে পারেনি। তাই সবমিলিয়ে একটু হতাশ হয়েছেন কিয়ারা। তিনি বলেন, 'অনেক প্রতিভাবান একটা দল, কেন যে সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছে না! এটা খুব দুঃখজনক বটে! এবারের বিশ্বকাপে তো অনেক অবিশ্বাস্য ফলাফল হচ্ছে। নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড জিতে গেল। বাংলাদেশেরও মূল খেলায় সুযোগ আছে, আশা করছি ভালো কিছুই হবে।'

প্রস্তুতি ম্যাচ শেষ হওয়ার ১০ মিনিটের মাথায় অবশ্য লি ছুটে আসেন স্ত্রীর কাছে। মিনিট পাঁচেক সময় কাটিয়ে লি চলে যান দলের ড্রেসিং রুমে। যেখানে বাংলাদেশ অপেক্ষা করছিল তার জন্য। এরপর দুজন চলে যান টিম হোটেল।