টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২

২ বছর ও ১২ মিলিয়ন ডলারে বদলে গিয়েছে অ্যালান বোর্ডার ফিল্ড

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 13:23 সোমবার, 17 অক্টোবর, 2022

|| অ্যালেন বোর্ডার ফিল্ড-ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে আবিদ মোহাম্মদ ||

বছর দুয়েক আগেও অ্যালান বোর্ডার ফিল্ড নিয়ে ছিল নানা অভিযোগ। অল্প বর্ষণের মাঠে জমতো পানি, পরিচালনা করা যেতো না ম্যাচ। এক প্রকার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেটের জন্য। তবে বিচক্ষণতার সাথেই এসব সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এসব সমস্যা দূর করতে কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেটকে খরচ করতে হয় প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা বা ১২ মিলিয়ন ডলার।

বিশাল অর্থ খরচে মাঠে পানি নিষ্কাশনের সাথে উন্নত হয়েছে পুরো মাঠও। রাতে ম্যাচ পরিচালনার জন্য লাগানো হয়েছে ফ্লাড লাইট, সঙ্গে পুরো আউট ফিল্ড সেজেছে নতুন রুপে। গতি ও বাউন্সের খোঁজে বদলে ফেলা হয়েছে পুরো উইকেট। কারণ এর আগের উইকেট ছিল খানিকটা ধীরগতির। উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৯০০ মিটার।

পুরো মাঠের এমন উন্নয়নের জন্য বড় অর্থ খরচ হলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেটের প্রধান নির্বাহী টেরি সেভেনসন। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের আগে এই মাঠেই প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছিল নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাথু হেইডেন স্ট্যান্ডে বসে ম্যাচটি দেখছিলেন টেরি। ম্যাচ চলাকালীন ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত আলাপে পুরো মাঠের আদ্যপান্ত জানিয়েছেন তিনি।

মাঠের পরিবর্তন নিয়ে ক্রিকফ্রেঞ্জিকে টেরি বলেন, 'আমরা গেল ১৮ মাস ধরে অ্যালান বোর্ডার ফিল্ডে কাজ করেছি। কিভাবে নতুন করে এটাকে আরও উন্নত করা যায়। ১২ মিলিয়ন (সাড়ে ১২ কোটি প্রায়) টাকা খরচ হয়েছে পুরো স্টেডিয়ামকে নতুনভাবে সাজিয়ে তুলতে। দিবারাত্রি ম্যাচের জন্য আমরা লাইট লাগিয়েছি। আউট ফিল্ড পুরোটাই নতুন করে করা হয়েছে। এখানে শেফিল্ড শিল্ড, ডাব্লিউবিবিএলের (ব্রিসবেন হিট) খেলাগুলো এখানে হয়ে থাকে। আগামী সপ্তাহেও এখানে ম্যাচ আছে।'

মাঠের উইকেট বদলে ফেলার যে সুফল পাচ্ছে কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেট তা হাসিমুখেই শুনেয়েছেন টেরি। উইকেট ৯০০ মিটার উঁচু করতে ১২ মাস সময় লাগলেও আফসোস নেই তার। বরং উইকেট সংখ্যা ৮ থেকে ১১তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে বিঁধায় সবদল এখন বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে পুরো অস্ট্রেলিয়া জুড়েই ১৫-২০ বছর পর পর উইকেট বদলের রীতি চালু রয়েছে।

টেরি বলেন, 'হ্যা পুরো উইকেট বদলে ফেলা হয়েছে। পুরো মাঠ তৈরি করতে লেগেছে প্রায় ১২ মাস। পুরো মাঠটাকে ৯০০ মিটার উঁচু করা হয়েছে যেন পানি বের হয়ে যেতে পারে। এখানে বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি, মূলত এই কারণেই এটা করা। আগে এখানে ৮টা উইকেট ছিল এখন তা ১১টা হয়েছে।

'অনেক কালো মাটির ব্যাবহার করা হয়েছে, প্রচুর রোলিং করেছি। ৬ থেকে ৮ মাস হলো। অস্ট্রেলিয়ায় সব উইকেটই ১৫-২০ বছর পর পর বদলে ফেলা হয়। এটা একদম নতুন উইকেট। মাত্র তো প্রায় ১ বছর হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে আরও বোঝা যাবে কতখানি উন্নতি হয়েছে।'

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মাঠ রয়েছে মাত্র ৩টি। ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে। তবে ৩টি মাঠে একাধিক খেলা হওয়ায় উইকেটের মান দিন দিন খারাপ হচ্ছে। যা নিয়ে দেশের ক্রিকেটে হয় আলোচনা-সমালোচনাও। ভালো উইকেট পেতে বাংলাদেশ কিভাবে এই পথে হাঁটতে পারে এর উত্তর অবশ্য টেরি দিতে পারেননি।

পুরো বিষয়টিকেই তিনি কিউইরেটরের কৃতিত্ব জানিয়ে বলেন, 'উইকেট কিভাবে পুরোপুরিভাবে বদলে ফেলা হয়েছে এটার ব্যাপারে আমার চেয়ে কিউইরেটররা ধারণা দিতে পারবে বেশি। কিন্তু তারা পুরো অস্ট্রেলিয়া জুড়ে দারুণ কাজ করে থাকেন। কখন কথায় কতখানিক পানি দিতে হবে তারা সেটা ভালোভাবেই বোঝেন। যারাই কাজটা করেছে খুব ভালোভাবে করেছে।'

অ্যালান বোর্ডার ফিল্ড মূলত একটি স্পোর্টস কম্পেক্স। কিন্তু ক্রিকেট মাঠের বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তী ক্রিকেটারদের নামে। এই যেমন স্টুরার্ট ল-ম্যাথু হেইডেন স্ট্যান্ড, অ্যান্ডি বিকেল জিম। এমনকি নারী ক্রিকেটারদের সম্মান জানাতেও ভোলেনি কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেট।

টেরির ভাষ্যমতে, 'এখানের অনেক কিছুরই নামকরণ বহুবছর পূর্বে করা হয়েছে। দুইটা স্ট্যান্ড হচ্ছে কুইন্সল্যান্ডের লিজেন্ডের নামে। এখানে আরও নতুন কিছু যোগ করা হয়েছে। আমরা চ্যাম্পিয়ন্স কর্নার তৈরি করেছি নারী ক্রিকেটারদের নামে। মেয়েরা যেসব ট্রফি জিতবে তা সেখানেই থাকবে। আমরা কিউরেটরদের নামেও একটা বিল্ডিং বানিয়েছি। স্কোরবোর্ড ও গেটের নামও দেয়া হবে, শীঘ্রই জানিয়ে দেব।'

অস্ট্রেলিয়া দলে কুইন্সল্যান্ড থেকে একাধিক ক্রিকেটার এসেছেন। সম্প্রতি খেলছেন মার্নাস ল্যাবুশেনের মতো ক্রিকেটার। এছাড়া উসমান খাওয়াজা, ম্যাট রেনশো, বেন কাটিংদের মতো ক্রিকেটাররাও আছেন। এই শহর থেকে এতো ক্রিকেটার উঠে আসার পেছনের গল্পও শুনিয়েছেন তিনি।

টেরি বলেন, 'আমাদের এখান থেকে অনেক নামি-দামি ক্রিকেটার উঠে আসছে এবং এসেছে। কুইন্সল্যান্ড অনেক বড় শহর। আমরা ছোট থেকেই ক্রিকেটারদের কোচিংয়ে বাড়তি মনোযোগ দেই। নতুন ট্যালেন্ট খুজে বের করার চেষ্টা করি। কোচিং প্রোগ্রাম চলে যেন সবাই সর্বোচ্চ সুবিধা পায়। আমাদের সব বিভাগেই অনেক লোক কাজ করছে।'