নারী এশিয়া কাপ

একটি জার্সি ও আনন্দ উল্লাস

মমিনুল ইসলাম

মমিনুল ইসলাম
প্রকাশের তারিখ: 17:39 সোমবার, 03 অক্টোবর, 2022

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট, সিলেট থেকে ||

ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি ভারত, সে তুলনায় একেবারে শিশু মালয়েশিয়া নারী ক্রিকেট দল। দেশটিতে ফুটবল জনপ্রিয় হলেও দিনকে দিন বাড়তে শুরু করেছে ক্রিকেটের প্রসার। এমন দেশের জন্য ভারতের বিপক্ষে খেলতে পারাটা নিশ্চিতভাবেই বড় কিছু। পরিসংখ্যান কিংবা শক্তিমত্তা, কোন দিক থেকেই ভারতের আশেপাশে ছিল না তারা। মাঠে লড়াইয়ের চেষ্টা করেছেন তবে কাজে আসেনি।

শেফালি ভার্মা- সাবিনেনি মেঘনার কাছে বোলাররা পরীক্ষা দিলেও নিজেদের ব্যাটিংটা পরখ করে দেখতে পারেনি এলসা হান্টাররা। বেরসিক বৃষ্টিতে শেষ পর্যন্ত খেলার পরিসমাপ্তি ঘটেছে মালয়েশিয়ার পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই। সিলেট আকাশে বৃষ্টি থামলেও বেলা গড়িয়েছে অনেকটা। ফ্লাডলাইটের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি আইনে ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করেন ম্যাচ অফিসিয়ালসরা।

দুই অধিনায়ককে ম্যাচের সমাপ্তির কথা জানানোর পরই দুই দলের ক্রিকেটাররা একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। হারার পরও মালয়েশিয়ার মেয়েদের মুখ ছিল হাস্যোজ্জ্বল। আনন্দ, উল্লাস কিংবা অনুভূতি প্রকাশের ধরন দেখে বোঝার উপায় নেই কিছুক্ষণ আগেই ভারতের কাছে হেরেছে মালয়েশিয়া। কুশল বিনিময়ের পর যেন হাতের মুঠোয় চাঁদ পেয়ে বসলেন মালয়েশিয়ার মেয়েরা। শুরুতে দুই দলের ফটোশ্যুট।

এরপর স্মৃতি হারমানপ্রীত কৌর, জেমিমাহ রদ্রিগেজদের সঙ্গে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন মালয়েশিয়ার ক্রিকেটাররা। বর্তমান সময়ে মেয়েদের ক্রিকেটে রীতিমতো সুপারস্টার ভারতের অধিনায়ক। এমন একজনকে এত কাছে পেয়ে নিজেদের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তারা। সিরিয়াল ধরে ছবি নিয়েছেন, কেউ কেউ ডায়েরি কিংবা ব্যাটে নিয়েছেন অটোগ্রাফ।

হারমানপ্রীত থেকে চোখ সরিয়ে একটু বায়ে তাকাতেই বড় একটা জটলা চোখে পড়ল। চারপাশে মালয়েশিয়ার ক্রিকেটাররা ঘিরে আছেন, জার্সি দেখে অনুমান করা যাচ্ছিল মাঝে দাঁড়িয়ে ভারতের কোন এক ক্রিকেটার। একটু জায়গা পেতেই বুঝতে দেরি হলো না উনি স্মৃতি মান্ধানা। লাস্যময়ী চেহারার সঙ্গে ব্যাটিংটাও দুর্দান্ত করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। ভারতের ব্যাটিং স্তম্ভের অন্যতম ভরসা স্মৃতি। 

ম্যাচ শেষে দুই দলের ফটোশ্যুট/ ছবি: এসিসিম্যাচ শেষে এক ফ্রেমে দুই দল/ ছবি: এসিসি

বিশ্রামের কারণে ম্যাচে না থাকলেও খেলা শেষে সবার মধ্যমণি ছিলেন তিনি। মৌমাছি যেমন মৌচাককে ঘিরে ধরেন ঠিক তেমন করেই বাঁহাতি এই ওপেনারকে ঘিরে ধরে ছিলেন মালয়েশিয়ার তরুণ ক্রিকেটাররা। সবার ছবি তোলা যখন শেষ পর্যায়ে তখন দেখা গেল দুজন ১৮ নম্বর জার্সিধারিকে। একজন স্মৃতি অন্যজন জামাহিদায়া ইনতান।

বয়স ২৫ পেরিয়েছে, মালয়েশিয়ার হয়ে খেলেছেন ৩৩ টি-টোয়েন্টিও। তবে স্মৃতিকে কাছে পেয়ে ইনতানের উচ্ছ্বাস দেখে মনে হচ্ছিল নিজের আইডলকে যেন কাছে পেয়েছেন। ভারতে এই ক্রিকেটারের সঙ্গে সামনাসামনি ছবি নিলেন, পেছন ঘুরে দুজনের ১৮ নম্বর জার্সি দুটোও ফ্রেম বন্দি করলেন ইনতান। এরপর মালয়েশিয়ার এই ব্যাটারকে সঙ্গে নিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটছিলেন স্মৃতি। 

ড্রেসিংরুমের কাছে যেতেই থেমে যান ইনতান। তবে সরাসরি ড্রেসিং রুমে প্রবেশ করেন ইনতানের সঙ্গে থাকা ব্যাটার স্মৃতি। মিনিট দুয়েক পর যখন স্মৃতি ফিরলেন তখন হাতে একটি জার্সি। সেটি দেখে দৌড়ে গিয়ে সতীর্থের কাছে থেকে মার্কার নিয়ে এলেন ইনতান। এরপর অটোগ্রাফ দিয়ে জার্সিটি ইনতানের হাতে তুলে দিলেন স্মৃতি। ভারতের এই ওপেনার যখন ইনতানের হাতে জার্সি তুলে দিচ্ছিলেন তখন মালয়েশিয়া শিবির রীতিমতো উল্লাসে ফেটে পড়ছিলো।

জার্সি নিয়ে দৌড়ে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন ইনতান। ২৫ বছর বয়সি এই ক্রিকেটারের হাত থেকে জার্সিটি নিয়ে সবাই ছুঁয়ে দেখলেন, কেউ কেউ নিজের গায়ের সঙ্গে জড়িয়ে ঘ্রাণ নেয়ার চেষ্টা করলেন। ড্রেসিং রুমে ফেরার সময়টাও আনন্দ উল্লাসের কমতি ছিল না তাদের। খালি চোখে এটা সবার কাছে জার্সি হলেও এটি নিশ্চিতভাবেই মালয়েশিয়ার মেয়েদের কাছে সামনের দিনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা।