ওয়েস্ট ইন্ডিজ - বাংলাদেশ সিরিজ

শুরু ও শেষের অমিলে বাংলাদেশের আরও একটি হতাশার দিন

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 20:51 শনিবার, 25 জুন, 2022

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

প্রথম দিনের শেষ বিকেলের হতাশা ভুলে প্রথম সেশনে পরিকল্পনার সবটা কার্যকর করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটারদের লাগাম টেনে ধরলেন বাংলাদেশের বোলাররা। দিনের প্রথম সেশনে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে দাপট দেখালেন। তবে লাঞ্চের পরই ধারহীন হয়ে পড়েন খালেদ আহমেদ-মেহেদি হাসান মিরাজরা। বাংলাদেশের ধারহীন বোলিংয়ের ফায়দা লুটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পথ দেখান জার্মেইন ব্ল্যাকউড ও কাইল মায়ার্স। শতরানের জুটি পেরিয়ে ব্ল্যাকউড ফিরলেও অবিচল ছিলেন মায়ার্স। 

শেষ বিকেলে ক্যারিবীয় ব্যাটারদের বাড়তি কোনো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে না পারায় লিড বড় করতে থাকে স্বাগতিকরা। জশুয়া ডি সিলভাকে সঙ্গে নিয়ে বিকেলটা কাটিয়ে দেয়ায় শেষ পর্যন্ত মায়ার্সের সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৩৪০। বাংলাদেশের চেয়ে ১০৬ রানে এগিয়ে থেকে তৃতীয় দিন আবারও ব্যাটিংয়ে নামবে স্বাগতিকরা। তাতে শুরু ও শেষের অমিলে সেন্ট লুসিয়াতে আরও একটি হতাশার দিন পার করলো বাংলাদেশ।

সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগের দিনের বিনা উইকেটে ৬৭ নিয়ে ব্যাটিং নেমে প্রথম দিনের শেষ বিকেলের মতো এদিনও দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে খানিকটা গোছানো বোলিং করার চেষ্টা করেছেন এবাদত হোসেনরা। তবে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দিতে পারছিলেন না তারা। বরং বাংলাদেশের পেসারদের দারুণভাবে সামলে রান তুলছিলেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও জন ক্যাম্পবেল। অবশেষে সফরকারীদের সাফল্য এনে দেন শরিফুল ইসলাম। 

বাঁহাতি এই পেসারের শর্ট পিচ ডেলিভারিতে অতিরিক্ত বাউন্স থাকায় সেটি পুল করতে চেয়েছিলেন ক্যাম্পবেল। তবে ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক না হওয়ায় বল পাড়ি জমায় উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে। তাতে দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা ক্যাম্পবেল সাজঘরে ফেরেন ৪৫ রানে। এরপর অবশ্য রেইমন রেইফারকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়েন তোলেন ব্র্যাথওয়েট। ক্যাম্পবেল হাফ সেঞ্চুরির দেখা না পেলেও এদিন পঞ্চাশ পেরিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক।

১০৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। রেইফারকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করলেও সেটি খুব বেশি বড় হতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের আর্ম বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন ব্র্যাথওয়েট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ফিরেছেন ৫১ রানের ইনিংস খেলে। পরের ওভারের প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান খালেদ আহমেদ। ব্র্যাথওয়েটকে সঙ্গ দেয়া রেইফারকে বোল্ড করেছেন ডানহাতি এই পেসার। রেইফার আউট হয়েছেন ২২ রানে। 

একই ওভারের শেষ বলে আরও এক উইকেট পেয়েছেন খালেদ। ডানহাতি এই পেসারের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন এনক্রুমাহ বোনার। ডানহাতি এই ব্যাটার সাজঘরে ফিরেছেন শূন্য রানে। আগের দিনের হতাশা সামলে দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে বেশ খানিকটা গোছালো বোলিং করেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। পরিকল্পনা মাফিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটারদের আটকে দিয়ে প্রথম সেশনে মাত্র ৭০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন খালেদ-শরিফুল।

লাঞ্চের পর এসে ধার হারায় বাংলাদেশের বোলাররা। আগের সেশনের মোমেন্টাম ধরে রাখতে না পেরে উল্টো রান দেয়ার মিছিলে নেমেছিলেন। নির্বিষ বোলিংয়ে পুরো সেশনে সেভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি সফরকারী বোলাররা। সেই সুযোগটা লুফে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে খেলায় ফিরিয়েছেন কাইল মায়ার্স ও জার্মেইন ব্ল্যাকউড। সাতটি চার ও একটি ছক্কায় দারুণ ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নিয়েছেন মায়ার্স।

এবাদতের বলে চার মেরে ৭৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। একই ওভারের পঞ্চম বলে চার মেরে প্রথম ইনিংসে লিড নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পুরো সেশনে ১১১ রান তুললেও কোনো উইকেট হারায়নি স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় সেশনে নির্বিষ বোলিং করলেও চা বিরতি থেকে ফিরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে আঘাত হেনেছেন মিরাজ। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের দ্রুতগতির লেংথ ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করলে তা ব্ল্যাকউডের থাই প্যাডে গিয়ে আঘাত হানে।

জোরালো আবেদন আউট দেন আম্পায়ার। তবে তৎক্ষণাৎ রিভিউ নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সহ অধিনায়ক। যদিও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি তার। তাতে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে ৪০ রানে সাজঘরে ফিরতে হয় ব্ল্যাকউডকে। ডানহাতি এই ব্যাটারের বিদায়ে ভাঙে মায়ার্সের সঙ্গে তার ১১৬ রানের জুটি। চা বিরতি থেকে ফিরে মিরাজ আঘাত হানলেও সেটা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ।

বরং মায়ার্সের আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ের সামনে অসহায় ছিল বাংলাদেশের বোলাররা। সেই সুযোগে দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মায়ার্স। শরিফুলের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মেরে ১৫০ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। যা তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। দুটিই করেছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। জশুয়াকে সঙ্গে নিয়ে শেষ বিকেলটা দারুণভাবে পার করেছেন মায়ার্স। দ্বিতীয় দিন শেষে মায়ার্স ১২৬ রানে ও জশুয়া অপরাজিত ২৬ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)- 

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস) - ২৩৪/৯ (৬৪.২ ওভার) (তামিম ৪৬, জয় ১০, শান্ত ২৬, বিজয় ২৩, লিটন ৫৩, সাকিব ৮, সোহান ৭, মিরাজ ৯, শরিফুল ২৬, এবাদত ২১*, ফিলিপ ২/৩০, জোসেফ ৩/৫০, সিলস ৩/৫৩)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ (প্রথম ইনিংস) - ৩৪০/৫ (১০৬ ওভার) (ক্যাম্পবেল ৪৫, ব্র্যাথওয়েট ৫১, রেইফার ২২, মায়ার্স ১২৬*, ব্ল্যাকউড ৪০, জশুয়া ২৬*, খালেদ ২/৭৭, মিরাজ ২/৬৮