ওয়েস্ট ইন্ডিজ - বাংলাদেশ সিরিজ

হতাশার ব্যাটিংয়ের পর সাদামাটা বোলিংয়ে বাংলাদেশের হতাশার দিন

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 19:34 শুক্রবার, 24 জুন, 2022

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

উইকেটে ঘাস থাকলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারদের সামলে দারুণ ব্যাটিংয়ে শুরুতে বাংলাদেশকে পথ দেখান তামিম ইকবাল। তবে বাঁহাতি এই ওপেনার ফেরার পর লাঞ্চ পেরিয়ে ছন্দ হারায় বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত-এনামুল হক বিজয় কিংবা সাকিব আল হাসানদের বিদায়ের পর মাঝের সময়টায় সফরকারীদের টেনেছেন লিটন দাস। হাফ সেঞ্চুরির পর লিটন ফিরলে শেষ দিকে বাংলাদেশের রান দুইশ পার করেন শরিফুল ইসলাম ও এবাদত হোসেন। তাদের দুজনের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের পরও বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২৩৪ রানে। হতাশার ব্যাটিংয়ের পর শেষ বিকেলে বল হাতেও সাদামাটা টাইগার বোলাররা। তাতে আলজারি জোসেফ ও জেইডেন সিলসের দারুণ বোলিংয়ের পর ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট-জন ক্যাম্পেবলের আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে দিনটা নিজেদের করে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম দিন শেষে বিনা উইকেটে ৬৭ রান তোলা স্বাগতিকরা পিছিয়ে ১৬৭ রানে।

বাংলাদেশের ২৩৪ রানের জবাব দিতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দারুণ শুরু এনে দেন দুই ওপেনার। শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হন ক্যাম্পবেল। যদিও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ফিরতে পারতেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। খালেদ আহমেদের গুড লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল ক্যাম্পবেলের প্যাডে আঘাত হানে। বাংলাদেশের জোরালো আবেদনে সাড়া দিয়ে আউট দেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ক্যাম্পবেল। 

রিপ্লেতে দেখা যায় খালেদের বল লেগ স্টাম্পের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। তাতেই শেষ রক্ষা হয় ক্যাম্পবেলের। এরপর ব্র্যাথওয়েটকে নিয়ে দারুণ ব্যাটিংয়ে দিন পার করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। প্রথম দিন শেষে ৫ চারে ৩২ রানে অপরাজিত রয়েছেন ক্যাম্পবেল। অধিনায়ক ব্র্যাথয়েট অপরাজিত রয়েছেন ৩০ রানে।

এর আগে সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিং করতে শুরুতেই উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়তে পারতো বাংলাদেশ। আম্পায়ার্স কলে শুরুতেই ধাক্কা খেতে হয়েনি সফরকারীদের। কেমার রোচের ইনসুইং ডেলিভারিতে ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে তামিম ইকবালের প্যাডে আঘাত করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডাররা জোরালো আবেদন করলেও তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার। শেষ মুহূর্তে গিয়ে রিভিউ নেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। বল লেগ স্টাম্পে আঘাত করলেও আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যান তামিম।

পরের বলেই ফ্লিক করে মিড উইকেট দিয়ে চার মেরে নিজের ও বাংলাদেশের রানের খাতা খুলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। এরপর অবশ্য খানিকটা দেখেশুনে ব্যাটিং করতে থাকেন তিনি। ইনিংসের সপ্তম ওভারে ফিরতে পারতেন মাহমুদুল হাসান জয়ও। তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ডানহাতি এই ব্যাটার। রোচের বলে লেগ বিফোর উইকেটের আবেদন হলে আউট দেন আম্পায়ার। তবে তামিমের সঙ্গে কথা বলে তিন সেকেন্ড থাকতে রিভিউ নেন জয়।

রিপ্লে অনুযায়ী রোচের বল লেগ স্টাম্প মিস করে। তাতেই বেঁচে যান তরুণ এই ওপেনার। রোচের পরের বলেও জয়কে লেগ বিফোর উইকেটে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। আবারও রিভিউ নিয়ে টিকে যান জয়। পরের ওভারে রোচের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে পয়েন্ট দিয়ে চার মারেন তরুণ এই ওপেনার। আর পরের ওভারে জেইডেন সিলসের শর্ট অব গুড লেংথ ডেলিভারিতে চার মারেন তামিম।

সেই ওভারের তৃতীয় বলে তামিমের বিরুদ্ধে রিভিউ নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাটে-বলে কোনো সংস্পর্শ না হওয়ায় আবারও রিভিউ হারায় ক্যারিবীয়রা। নিজের অভিষেক ম্যাচে বোলিংয়ে এসেই উইকেটের দেখা পান অ্যান্ডারসন ফিলিপ। ডানহাতি এই পেসারের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন জয়। এদিন ৩১ বলে ১০ রান করেছেন তরুণ এই ওপেনার। এরপর তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে দেখেশুনে ব্যাটিং করতে থাকেন তামিম। 

দিনের শুরু থেকেই খানিকট আক্রমণাত্বক ছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। দারুণ ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরির খুব কাছে গেলেও তা করতে পারেননি তামিম। আলজারি জোসেফের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে কভার দিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাট-বলে টাইমিং করতে না পারায় জার্মেইন ব্ল্যাকউডের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ৯ চারে ৬৭ বলে ৪৬ রান করেছেন তামিম।

বাঁহাতি এই ওপেনারের বিদায়ের পর চারে নেমে শান্তকে সঙ্গ দেন এনামুল হক বিজয়। লাঞ্চের আগে বাংলাদেশকে আর কোনো উইকেট হারাতে দেননি তারা দুজন। লাঞ্চের আগ মুহূর্তে তামিমকে হারালেও দিনের প্রথম সেশনে দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ। তবে তামিমকে না হারালে আরও খানিকটা সুন্দর হতে পারতো বাংলাদেশের প্রথম সেশন।

লাঞ্চ থেকে ফেরার বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করছিলেন শান্ত ও বিজয়। তবে লাঞ্চের পর অষ্টম ওভারে এসে উইকেট হারাতে হয়েছে বাংলাদেশ। ফিলিপের গুড লেংথ বল খানিকটা খাটো হয়ে বিজয়ের প্যাডে আঘাত করে। জোরালো আবেদন আউট দেন আম্পায়ার। শান্তর সঙ্গে আলাপ শেষে রিভিউ নিয়েছিলেন বিজয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি ডানহাতি এই ব্যাটারের। ৮ বছর পর টেস্টে ফেরার ম্যাচে পাঁচটি চারে ৩৩ বলে ২৩ রান করেছেন বিজয়।

ডানহাতি এই ব্যাটারের ফেরার পরের ওভারে সাজঘরে ফিরেছেন শান্ত। কাইল মায়ার্সের গুড লেংথ ডেলিভারিতে ইনসুইং করে বল শান্ত ব্যাটে আঘাত হানে। আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে আউট দেন আম্পায়ার। শান্ত রিভিউ নিলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি বাঁহাতি এই ব্যাটারের। বল লেগ স্টাম্পের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় হালকা স্পর্শ করায় আম্পায়ার্স কলের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরতে হয় ৭৩ বলে ২৬ রান করা শান্তকে।

আম্পায়ারের এমন সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার। ড্রেসিং রুমে রিপ্লে দেখা তামিম ও প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও হতাশা প্রকাশ করেছেন। এদিকে পাঁচে নেমে ২০২২ সালে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ১ হাজার আন্তর্জাতিক রান পূরণ করেছেন লিটন দাস। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি  ও টেস্ট ফরম্যাট মিলে ১৬ ম্যাচের ২১ ইনিংসে ১ হাজার রান পেরিয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ৯৯৬ রান নিয়ে সেন্ট লুসিয়া টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন লিটন।

ফিলিপের অফ স্টাম্পের বাইরের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে পয়েন্ট দিয়ে চার মেরে চলতি বছর হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। এর আগে বাংলাদেশের হয়ে এক পঞ্জিকাবর্ষে হাজার রান করার রেকর্ড আছে শাহরিয়ার নাফিসের। যদিও সেটা শুধুমাত্র ওয়ানডে ফরম্যাটে, ২০০৬ সালে। এদিকে লাঞ্চের পর ৫ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারানোর পরও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি সাকিব ও লিটন। 

দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করলেও জুটি বড় করতে পারেননি তারা দুজন। সিলসের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে পয়েন্ট দিয়ে খেলার চেষ্টা করেছিলেন সাকিব। তবে ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক না হওয়ায় ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। অ্যান্টিগা টেস্টের দুই ইনিংসেই হাফ সেঞ্চুরি করা সাকিব এদিন ফিরেছেন মাত্র ৮ রানে।

সাকিব ফেরার পর দেখেশুনে ব্যাটিং করলেও থিতু হতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান। সিলসের বলে চার মেরে রানের খাতা খোলা সোহান সাজঘরে ফিরেছেন মাত্র ৭ রানে। জোসেফের বাউন্সার লেগ সাইডে ঘুরিয়ে দিতে গিয়ে কিপার জশুয়া ডি সিলভার গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। এরপর অবশ্য মেহেদি হাসান মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় সেশনের বাকিটা সময় পার করেছেন লিটন। দ্বিতীয় সেশনে ৮২ রান তুলতে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

লাঞ্চ সেশনের শেষের সময়টা দারুণভাবে কাটালেও চা বিরতি থেকে ফিরেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মায়ার্সের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট ডেলিভারিতে পয়েন্টের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন মিরাজ। বিকল্প ফিল্ডার হিসেবে মাঠে নামা ডেভন থমাস বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নিয়ে ৯ রানে ফিরতে হয় ডানহাতি এই ব্যাটারকে। মিরাজের ফেরার পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন।

সিলসের বলে ফ্লিক করে চার মেরে ৬৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ সেঞ্চুরি। এরপর অবশ্য ইনিংস বড় করতে পারেননি লিটন। জোসেফের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে মিড উইকেট দিয়ে খেলতে গিয়ে ব্র্যাথওয়েটের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৫৩ রানে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটার। লিটন ফেরার পর দারুণ জুটি গড়ে তোলেন শরিফুল ও এবাদত হোসেন। 

তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৩৬ রান। ৫ চারে ১৫২.৯৪ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা শরিফুল ফিরলে ভাঙে তাদের এই জুটি। সিলসের বলে তুলে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শরিফুল। এরপর দ্রুতই খালেদ আহমেদ ফিরলে ২৩৪ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। এদিন ক্যারিয়ার সেরা ২১ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন এবাদত।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (প্রথম দিন শেষে)- 

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস) - ২৩৪/৯ (৬৪.২ ওভার) (তামিম ৪৬, জয় ১০, শান্ত ২৬, বিজয় ২৩, লিটন ৫৩, সাকিব ৮, সোহান ৭, মিরাজ ৯, শরিফুল ২৬, এবাদত ২১*, ফিলিপ ২/৩০, জোসেফ ৩/৫০, সিলস ৩/৫৩)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ (প্রথম ইনিংস) - ৬৭/০ (১৬ ওভার) (ক্যাম্পবেল ৩২*, ব্র্যাথওয়েট ৩০*)