ওয়েস্ট ইন্ডিজ - বাংলাদেশ সিরিজ

ভাগ্য বদলাতে ব্যাটারদের সঙ্গে চ্যালেঞ্জটা ফিল্ডারদেরও

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 01:07 শুক্রবার, 24 জুন, 2022

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

ধারাবাহিক ব্যর্থতার সঙ্গে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে ছবিটাকে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের প্রতিচ্ছবি হিসেবে ধরা যেতেই পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দারুণভাবে উন্নতি করেছেন বাংলাদেশের পেসাররা। তাসকিন আহমেদ কিংবা এবাদত হোসেনদের নেতৃত্বে পেস ইউনিট বাংলাদেশকে যতটা সামনে টানতে চেয়েছেন টপ অর্ডাররা যেন ছবির মতো ততই মুখ থুবড়ে পড়েছেন। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বরাবরই ছন্নছড়া বাংলাদেশ। সর্বশেষ কয়েক টেস্টে সেটা যেন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

মাউন্ট মঙ্গাইনুয়ের ইতিহাসের পর টপ অর্ডার ব্যাটাররা বাংলাদেশকে কেবল পেছনেই ঠেলেছেন। ইতিহাস গড়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জেতার পরের ম্যাচেই পুরোনো চিত্রপটে ফেরে টাইগাররা। ক্রাইস্টচার্চে সেদিন মাত্র ২৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল তৎকালীন মুমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। এরপর থেকে ব্যর্থতার সেই চক্রেই আটকে রয়েছে টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডের পর সাউথ আফ্রিকার মাটিতেও মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং ইউনিট।

ডারবানে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট হারানোর আগে একশ পেরোনো বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট হারায় মাত্র ১৬ রানে। শেস পর্যন্ত টাইগাররা অল আউট হয়েছিল ৫৩ রানে। পোর্ট এলিজাবেথে এসেও সেই চিত্র বদলাতে পারেননি তামিম ইকবাল-মাহমুুদুল হাসান জয়রা। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩৮ রানে সাজঘরে ফিরেছিল বাংলাদেশের ৫ ব্যাটার। সাউথ আফ্রিকার কঠিন কন্ডিশনের দোহায় দিয়ে রক্ষা পেলেও ঘরের মাঠে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে পারেননি ব্যাটারা। শ্রীলঙ্কার তরুণ পেস ইউনিটের সামনে সেদিন ২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম সেদিন বাংলাদেশের হাল ধরলেও অ্যান্টিগাতে সাকিব আল হাসানের দল ছিল একেবারে পুরোনো ছন্দে। নতুন অধিনায়কের অধীনে টাইগাররা ৬ উইকেট হারিয়েছিল ৪৬ রানে। নিজেদের সর্বশেষ ১৬ ইনিংসের ১২টিতেই একশ পেরোবার আগে ৪ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ৫০ পেরোনোর আগে ৪ উইকেট হারিয়েছে ১০বার। এই সময়ে সবচেয়ে বাজে গড় (১৮.১৯) বাংলাদেশের চার টপ অর্ডার ব্যাটারের।

এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর বাংলাদেশের টপ অর্ডারদের চ্যালেঞ্জটা উইকেটে মাটি কামড়ে টিকে থাকার। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে সাকিবও জানিয়েছেন, তাদের চোখটা দিনের প্রথম দুই ঘণ্টায়। সাকিব বলেন, ‘দেখেন, এতদিন আগের ম্যাচ ছিল যে আসলে ঐখানে থেকে কিছু নেয়ার আছে বলে মনে হয় না। আমরা গতকাল ভালো একটা অনুশীলন সেশন পার করেছি।’

‘আজকে লক্ষ্য থাকবে যে ভালো একটা অনুশীলন সেশন করে কালকে ভালোভাবে ম্যাচটা শুরু করতে। এবং আমরা শুধু ফোকাস করতে পারি কালকের ম্যাচের প্রথম দুই ঘণ্টায় আমরা ব্যাটিং করি আর বোলিং করি । তারপরে থেকে আসলে ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী আসলে আমাদের খেলতে হবে। কিন্তু প্রথম দুইটা ঘণ্টা আমরা ভালোভাবে শুরু করার চেষ্টা করবো।’

টিকে থাকার সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাটারদের রান করার চ্যালেঞ্জটাও থাকছে। সর্বশেষ কয়েক সিরিজ ধরেই ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক। টপ অর্ডারে তাদের দুজনের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় সাগরের মাঝে আটকে থাকা বাংলাদেশের জাহাজটা ক্রমশই ডুবতে শুরু করেছে। লম্বা সময় ধরেই ব্যাট হাতে ছন্দে নেই মুমিনুল হক।

সর্বশেষ ১৩ ইনিংসে পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার। এই সময়ে শূন্য রানে ফিরেছেন চারবার। আর দুই অঙ্কের কোটা ছুঁয়েছেন মাত্র একটি ম্যাচে। সেটিও চলতি বছরের শুরুর দিকে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে। সর্বশেষ ৯ ইনিংসের নয়টিতেই দুই অঙ্ক পেরোকে পারেননি মুমিনুল। ১৩৪ বছর আগে সর্বশেষ এমন অপ্রত্যাশিত রেকর্ডের সাক্ষী হয়েছিলেন জর্জ বোনোর। এমন পারফরম্যান্সের পর আর কখনও টেস্ট খেলতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটার।

যদিও সেন্ট লুসিয়া টেস্টে টিকে যাচ্ছেন মুমিনুল। বাংলাদেশের সাবেক টেস্ট অধিনায়কের এমন স্বস্তির খবরে কপাল পুড়ছে শান্তর। সর্বশেষ ৬ টেস্টের ১১ ইনিংসে ব্যাটিং করলেও পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস নেই বাঁহাতি। এই সময়ে ত্রিশ পেরিয়েছেন মোটে দুবার। ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হওয়ায় ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পর টেস্ট দল থেকেও জায়গা হারাচ্ছেন শান্ত। বাঁহাতি এই ব্যাটারের জায়গায় সেন্ট লুসিয়া টেস্টে দেখা যেতে পারে এনামুল হক বিজয়কে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে সেন্ট লুসিয়াতেই ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলেছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার।

ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ও ইয়াসির আলী রাব্বির ইনজুরিতে আরও একবার বাংলাদেশ টেস্ট দলে ফিরেছেন বিজয়। টপ অর্ডার এই ব্যাটারের প্রত্যাবর্তনের গুঞ্জন বিরাজ করছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের। নাম প্রকাশ না করলেও একাদশে পরিবর্তনের একটা আভাস দিয়ে রেখেছেন অধিনায়ক সাকিব। তাতেই কপাল খুলতে পারে বিজয়ের। এদিকে আরেক পরিবর্তনে ‍মুস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় এবাদত-খালেদ আহমেদের সঙ্গী হতে পারেন তরুণ শরিফুল ইসলাম।

একাদশের পরিবর্তন নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমাদেরও মাথায় বেশ কিছু চিন্তা আছে কিন্তু আজকে অনুশীলন সেশন শেষ হলে আমরা বসে মিটিং করে দল চূড়ান্ত করে আমাদের ইচ্ছে আছে সবাইকে জানিয়ে দেয়া। যাতে করে সবাই জানছে যে কারা খেলছে আর কারা খেলছে না।’

ছবি: সংগৃহীতছবি: সংগৃহীত

ব্যাটারদের সঙ্গে সেন্ট লুসিয়াতে বাংলাদেশের ফিল্ডারদেরও চ্যালেঞ্জটা থাকছে সমানভাবে। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর বল বাই বল ডাটা অনুসারে ২০২১ সালের জানুয়ারির পর থেকে হাফ চান্স ছাড়াই টেস্টের ২০ ইনিংসে ৪০ ক্যাচ ছেড়েছে বাংলাদেশ। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ছেড়েছেন শান্ত। স্লিপ ফিল্ডার হিসেবে পরিচিত হলেও ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে পাঁচটি ক্যাচ ছেড়েছেন তিনি।

গত বছর থেকে পরিসংখ্যান টানলে বাংলাদেশের চেয়েও বেশি ক্যাচ ছেড়েছে ইংল্যান্ড।এই সময়ে ২৬ ইনিংসে ৫৭ ক্যাচ ফেলেছে ইংলিশ ফিল্ডাররা। এমন পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা খানিকটা স্বস্তি খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করলেও মুখ ফিরিয়ে নেবে চলতি বছরের ক্যাচ মিসের ব্যর্থতার গল্প। এবছর ১১ ইনিংসে ২২ ক্যাচ ছেড়েছে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। যার পাঁচটা ছেড়েছে সর্বশেষ অ্যান্টিগা টেস্টে।

এতসবের সঙ্গে সাকিবের দলের চ্যালেঞ্জ থাকছে বিরুদ্ধে কন্ডিশনে প্রতিরোধ গড়ার। এত এত চ্যালেঞ্জে উতরে যেতে ব্যাটার-বোলার-ফিল্ডারদের দায়িত্ব নেয়ার সঙ্গে সেন্ট লুসিয়ায় বাংলাদেশের বোধহয় তাকিয়ে থাকতে হবে কোনো এক মিরাকেলের দিকে।