বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ

১১২ রানে পিছিয়ে থেকে দিন শেষ করলো বাংলাদেশ

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 20:53 শুক্রবার, 17 জুন, 2022

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

শেষ বেলায় ব্যাট হাতে ২ রান করে না ফিরলে দিনটি মেহেদী হাসান মিরাজেরই বলা যেত। চা বিরতির আগে-পরে মিলিয়ে ১০.৫ ওভারের টানা স্পেলে ৪ উইকেট নিয়েছেন এই ডানহাতি স্পিনার। এরপর খালেদ আহমেদের বলে জার্মেইন ব্ল্যাকউডের দারুণ এক ক্যাচও নিয়েছেন তিনি। আর তাতেই ক্যারিবীয়দের ইনিংস গুটিয়ে গেছে ২৬৫ রানে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৬৫ রানের লিডের পর বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দারুণ। বিশেষ করে ওপেনার তামিম ইকবাল শুরু থেকেই ব্যাট হাতে সাবলীল ছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ২২ রানে তিনি আলজারি জোসেফের করা অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন।

তামিম ফেরার পর নাইটওয়াচম্যান হিসেবে মিরাজকে পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। যদিও তিনি বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি। মাত্র ২ রান করে তিনি জোসেফের বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে দিনের বাকি সময়টা সামাল দিয়েছেন জয়। বাংলাদেশ এখনও ক্যারিবীয়দের চেয়ে পিছিয়ে আছে ১১২ রানে। জয় ১৮ ও শান্ত ৮ রানে অপরাজিত আছেন।

এর আগে ২ উইকেটে ৯৫ রান নিয়ে অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দিনের শুরু থেকেই দারুণ বোলিং করেছেন টাইগার পেসাররা। উইকেটের দেখা মিলতে পারতো দিনের পঞ্চম ওভারেই। এবাদত হোসেনের করা শেষ বলটি এনক্রুমাহ বোনারের ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়েছিল উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের হাতে।

যদিও বাংলাদেশের ফিল্ডাররা আবেদনই করেননি। ফলে উইকেট বঞ্চিত হতে হয় টাইগারদের। কিছুক্ষণ পরই লিড পেয়ে যায় ক্যারিবীয়রা। ব্যক্তিগত ২২ রানে আরও একবার জীবন পান বোনার। খালেদ আহমেদের করা ওভারের চতুর্থ বলটি বোনারের ব্যাটে লেগে চলে যায় উইকেটকিপার ও স্লিপের ফাঁক গলে।

বল চলে যাওয়ার পর দুজনই একে অপরের দিকে চেয়েছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর ১৭৪ বলে নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। পানি পানের বিরতির পর ৩৩ রান করা বোনারকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে উইকেটের স্বাদ দেন সাকিব আল হাসান।

মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগে অবশ্য বাংলাদেশের বোলারদের আর কোনো সুযোগ দেননি ব্র্যাথওয়েট ও ব্ল্যাকউড। দুজনই বলের যোগ্যতা বুঝে উইকেটের চারপাশে খেলেছেন। ক্যারিবীয়রা ৩ উইকেটে ১৫৯ রান নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যায়।

বিরতি থেকে ফিরে দারুণ বোলিং করলেও উইকেটের দেখা পাচ্ছিলেন না টাইগার বোলাররা। সেই সময় সাইড লাইনের বাইরে থেকে খালেদ আহমেদকে বলের সিম দেখিয়ে পরামর্শ দিতে দেখা যায় পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডকে। এর খানিক বাদেই বোলিংয়ে এসে উইকেটে খুঁটি গেড়ে বসা ব্র্যাথওয়েটকে আউট করেন এই পেসার। ৯৪ রান করে খালেদের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক।

এরপরই শুরু হয় মিরাজের ম্যাজিক। ৭ রান করা কাইল মেয়ার্সকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান মিরাজ। যদিও বাংলাদেশের জোড়ালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল মিড স্টাম্পে ইমপেক্ট করে লেগ স্টাম্পে আঘাত করেছে। ফলে সাজঘরে ফিরতে হয় মেয়ার্সকে।

খানিক বাদেই জশুয়া দা সিলভাকে নিয়ে ১২১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ব্ল্যাকউড। একটু পরেই সিলভাকে (১) স্পিনে বিভ্রান্ত করে কট বিহাইন্ড করে আউট করেন মিরাজ। দ্বিতীয় সেশনে ২৫ ওভারে ৭২ রান দিয়ে বাংলাদেশ তুলে নিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ৩ উইকেট। ফলে বলাই যায় সেশনটি ছিল বাংলাদেশের বোলারদের।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের ৯৭তম ওভারে বোলিং করছিলেন মিরাজ। তৃতীয় বলটি কাট করতে চেয়েছিলেন ব্ল্যাকউড। যদিও ব্যাটে বলে না হলে তা সরাসরি আঘাত হানে প্যাডে। এরপর বাংলাদেশের জোড়ালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। যদিও রিভিউ নেয়ার সুযোগ ছিল। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল অফ স্টাম্পে পিচ করা বল লেগ স্টাম্পে আঘাত করতো। রিভিউ না নেয়ায় উইকেট বঞ্চিত হতে হয় বাংলাদেশকে।

চা বিরতির পর শূন্য রানেই আলজারি জোসেফকে শূন্য রানে আউট করেন মিরাজ। এরপর কেমার রোচকে বেশিক্ষণ থিতু হতে দেননি এবাদত হোসেন। রানের খাতা খোলার আগেই এই পেসারের বল এগিয়ে খেলতে যেতে থার্ড স্লিপে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন রোচ। একপ্রান্ত আগলে রেখে দারুণ খেলতে থাকা ব্ল্যাকউড চড়াও হতে চেয়েছিলেন খালেদের ওপর।

অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বল এক্সট্রা কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন। যদিও মিরাজের ডাইভিং ক্যাচে ৬৩ রানেই ফিরতে হয় ব্ল্যাকউডকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ ব্যাটার জেইডেন সেলসকে এলবিডব্লিউ করে মিরাজ ফেরালে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ১০৩/১০ (৩২.৫ ওভার) (তামিম ২৯, লিটন ১২, সাকিব ৫০, এবাদত ৩; সেলেস ৩/৩৩, জোসেফ ৩/৩৩, রোচ ২/২১)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ (প্রথম ইনিংস)- ২৬৫/১০ (১০২.৫ ওভার) (ব্র্যাথওয়েট ৯৪, ব্ল্যাকউড ৬৩, ক্যাম্পবেল ২৪, বোনার ৩৩; মিরাজ ৪/৫৯, খালেদ ২/৫৯)

বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস)- ৫০/২ (২০ ওভার) (তামিম ২২, জয় ১৮*, শান্ত ৮*; জোসেফ ২/১৪)