বাংলাদেশ - শ্রীলঙ্কা সিরিজ

শুরুর বিপর্যয় সামলে মুশফিক-লিটনের রেকর্ড জুটির প্রতিরোধ

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 09:35 সোমবার, 23 মে, 2022

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

সকালের শুরুতে শ্রীলঙ্কার দুই পেসারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। শঙ্কা জেগেছিল প্রথম সেশনেই অল আউট হয়ে যাওয়ার। তবে সেটা হতে দেননি লিটন দাস এবং মুশফিকুর রহিম। সময় যত গড়িয়েছে বাংলাদেশ ততই ম্যাচে ফিরেছে। রোদ প্রখর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাবলীল ব্যাটিংয়ে প্রথম দিনের দাপটটা ততই বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। ২৪ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত দিন শেষ করে ৫ উইকেটে ২৭৭ রান নিয়ে। রেকর্ড জুটি গড়ার সঙ্গে সেঞ্চুরি পেয়েছেন লিটন ও মুশফিক।

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। দিনের প্রথম বলেই মাহমুদুল হাসান জয়ের বিপক্ষে আবেদন করেছিলেন পেসার কাসুন রাজিথা। তবে তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার। যদিও পরের বলেই জয়কে ফেরান ডানহাতি এই পেসার। এবার অবশ্য আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে হয়নি রাজিথাকে। ডানহাতি এই পেসারের লেংথ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে শূন্য রানেই সাজঘরে ফেরেন জয়।

এদিন রানের খাতা খুলতে পারেননি তামিম ইকবালও। আসিথা ফার্নান্দোর লেংথ ডেলিভারিতে এজ হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে ফেরেন চট্টগ্রাম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান। তামিমের ফেরার পরের বলে চার মেরে রানের খাতা খোলেন মুমিনুল হক। তাতে বড় ইনিংসের আশা জেগেছিল অফ ফর্মে থাকা বাঁহাতি এই ব্যাটারকে নিয়ে। তবে সেটা ধরে রাখতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার।

আসিথার আউট সাইড অফ স্টাম্পের লেংথ ডেলিভারিতে খানিকটা দেরিতে ব্যাট চালিয়েছিলেন মুমিনুল। তাতে এজ হয়ে উইকেটকিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় ৯ রান করা এই ব্যাটারকে। এদিকে সর্বশেষ ৬ ইনিংসে ব্যাটিং করে দুই অঙ্কের কোটা স্পর্শ করতে পারেননি মুমিনুল। ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মাঝে খানিকটা থিতু হওয়ার চেষ্টা করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। রাজিথার বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় ৮ রান করা এই ব্যাটার।

চট্টগ্রামে ভালো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসেও। শান্ত ফেরার পরের বলেই বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটেন সাকিব। রাজিথার ফুল অব সুইং ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তৎক্ষণাৎ রিভিউ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। তাতে গোল্ডেন ডাকে ফিরতে হয় সাকিবকে।

বাংলাদেশকে চেপে ধরা শ্রীলঙ্কা দুঃসংবাদ পায় প্রথম সেশনের শেষ দিকে। ইনিংসের ২৩তম ওভারের প্রথম বলের সময় হঠাৎই বুকে ব্যথা নিয়ে মাঠ ছাড়েন কুশল মেন্ডিস। পরবর্তীতে চেকআপের জন্য তাকে দ্রুতই হাসপাতালে নেয়া হয়। ২৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়ে তোলেন লিটন। দিনের শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করেছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। পুরোটা সময় স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করলেও হাফ সেঞ্চুরির ঠিক আগে জীবন পেয়েছেন তিনি।

আসিথার শর্ট বলে হুক করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন লিটন। তবে সেটা লুফে নিতে পারেননি কামিন্দু মেন্ডিস। জীবন পেয়ে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ভুলেননি লিটন। আসিথার বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরে ৯৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। লিটনের পর হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন মুশফিকও। জয়াবিক্রমার টসড আপ ডেলিভারিতে কভার দিয়ে চার মেরে ১১২ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিক। টেস্ট ক্রিকেটে এটি তার ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি।

দিনের প্রথম সেশনে ৫ উইকেট হারালেও দ্বিতীয় সেশনে দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ। লিটন-মুশফিকের দারুণ ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮৭ রান তুলে স্বাগতিকরা। সেটা বজায় থাকে তৃতীয় সেশনেও। নিয়মিত বোলারদের দিয়ে লিটন-মুশফিকের জুটি ভাঙতে না পারায় এদিন নিজেই বোলিংয়ে আসেন দিমুথ করুনারত্নে।

ডানহাতি এই স্পিনারের আউট সাইড অফ স্টাম্পের বল মুশফিকের প্যাডে আঘাত করলে আবেদন করে শ্রীলঙ্কা। তবে সেই আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। যে কারণে শেষ মুহূর্তে রিভিউ নেন করুনারত্নে। পরবর্তীতে রিপ্লেতে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে যায়। তাতে রিভিউ হারায় শ্রীলঙ্কা। এদিকে জীবন পেয়ে হাফ সেঞ্চুরি করা লিটন সেটিকে শেষ পর্যন্ত রূপ দিয়েছেন সেঞ্চুরিতে। চট্টগ্রাম টেস্টে খুব কাছে গিয়ে সেঞ্চুরি হাতছাড়া করলেও এদিন ভুল করেননি লিটন। দারুণ ব্যাটিংয়ে ১৪৯ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি।

সেঞ্চুরির পর মুশফিককে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রেকর্ড গড়েছেন লিটন। ঢাকা টেস্টে এদিন ছাড়িয়ে গেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল ও মুশফিকের ১৯১ রানের জুটি। ২০০৭ সালে কলম্বোতে লঙ্কানদের বিপক্ষে ১৯১ রানের জুটি গড়েছিলেন মুশফিক ও আশরাফুল। লম্বা সময়ের খরা কাটিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন মুশফিক।

ব্যাট হাতে সমালোচনার জবাবটা দিয়েছিলেন দারুণভাবে। চট্টগ্রামের পর ঢাকা টেস্টেও সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। দলের বিপর্যয়ের মুখে ২১৮ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন মুশফিক। এটি তার ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পর শেষ বিকেলটা দারুণভাবে কাটিয়েছেন লিটন ও মুশফিক। আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৫৩ রানে অবিচ্ছিন্ন রেখেছেন তাদের দুজনের জুটি। প্রথম দিন শেষে লিটন ১৩৫ ও মুশফিক ১১৫ রানে অপরাজিত রয়েছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (প্রথম দিন শেষে)-

বাংলাদেশ: ২৭৭/৫ (৮৫ ওভার) (শান্ত ৮, মুমিনুল ৯, লিটন ১৩৫*, মুশফিক ১১৫*; রাজিথা ৩/৪৩, আসিথা ২/৮০)