সাক্ষাৎকার

যার যত ধৈর্য্য সে তত সফল: হনুমা বিহারী

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 17:37 শুক্রবার, 01 এপ্রিল, 2022

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

রাজসিক টেস্ট ক্রিকেট মানেই ধৈর্য্যের পরীক্ষা। নিজের দক্ষতা এবং সক্ষমতা প্রমাণের সুযোগও বটে। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে হনুমা বিহারীকে দেখতে মুখিয়ে ছিলেন বিরাট কোহলি। অধিনায়ককে অবশ্য হতাশ করেননি ডানহাতি এই ব্যাটার। প্যাট কামিন্স-মিচেল স্টার্কদের আগুনে বোলিং, সঙ্গে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট। সিডনি টেস্টে কোনো কিছুই দমিয়ে দিতে পারেনি তাকে।

আজিঙ্কা রাহানে-চেতেশ্বর পূজারাদের মতো সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ধৈর্য্যের পরীক্ষায় লেটার মার্কটাও বেশ ভালোভাবেই পেয়েছেন ২৮ বছর বয়সি এই ব্যাটার। জাতীয় দলের হয়ে খেলার ফাঁকে বাংলাদেশও ঢু মেরেছেন হনুমা। দ্বিতীয়বারের মতো খেলছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল)।

আগেরবারের মতো এবারও গায়ে জড়িয়েছেন আবাহনী লিমিটেডের জার্সি। ডিপিএল চলাকালীন ক্রিকফ্রেঞ্জিকে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের উন্নতির গ্রাফ, ভারতের তরুণদের উঠে আসার প্রক্রিয়ার সঙ্গে ওয়ানডে বিশ্বকাপে তামিম ইকবালের দলে সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেছেন হনুমা।

ক্রিকফ্রেঞ্জির পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:

ক্রিকফ্রেঞ্জি: দ্বিতীয়বারের মতো প্রিমিয়ার লিগ খেলতে বাংলাদেশে এসেছেন। এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞতা কেমন?  

হনুমা বিহারি: দ্বিতীয়বারের মতো এখানে এসেছি। খুব ভালো লাগছে। এটি দারুণ একটি প্রতিযোগিতা। আমার মনে হয় আমরা দল হিসেবে খুব ভালো করছি। জয় আপনাকে সবসময় সহায়তা করে। আবারও বাংলাদেশে ফিরে ভালো লাগছে এবং আমি উপভোগ করছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আবাহনী দলে আপনার সঙ্গে জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার আছেন, বেশ কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটারও আছেেন। আফিফ, নাইম বা শামিমদের কাছ থেকে কেমন দেখলেন?

হনুমা: তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে তারা দারুণ। তারা খুবই পটেনশিয়াল। তারা ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করলে সব সময়ই বাংলাদেশকে ইতিবাচক কিছু দেবে। বাংলাদেশের হয়ে তারা লম্বা সময় খেলবে। খুব ভালো অ্যাথলেট। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কয়েকজনের ফিল্ডিং খুব প্রভাবিত করেছে আমাকে। আমি নিশ্চিত তারা খুব দ্রুতই বাংলাদেশকে সার্ভিস দেবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার কাছে থেকে আফিফ-নাইমদের অনেক কিছুই শেখার আছে। তারা এই মুহূর্তে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিয়মিত হলেও লঙ্গার ভার্সনের খেলা নিয়ে আপনার সঙ্গে কোন আলাপ হয়েছে কি?

হনুমা: অনেক সময় তাদের সেই সক্ষমতা থাকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানসিকতার উন্নতি করতে হয়। সামনে অনেক দিন আছে, নিশ্চিত তারা সব বিভাগেই উন্নতি করবে। যেখানেই খেলুক না কেন তারা ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করবে। আপাতত লঙ্গার ভার্সন নিয়ে কোন কথা হয়নি, তবে সীমিত ওভারের ক্রিকেট নিয়ে কিছু কথাবার্তা হয়েছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: কি কথা হয়েছে? তারা কি আপনার কাছে কোন উপদেশ বা কিছু শিখতে চেয়েছিলেন?

হনুমা: ওয়ানডে ফরম্যাটে কিভাবে আরও পাকাপোক্ত হওয়া যায়। টি-টোয়েন্টি ধুম ধারাক্কার খেলা, টেস্ট ধৈর্য্যের খেলা। কিন্তু ওয়ানডে ফরম্যাটটা এর মাঝামাঝি। কখনও আপনাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে, কখনও মেরে খেলতে হবে। আবার কখনও পরিস্থিতি বুঝে ব্যাটিং করতে হবে। এসব নিয়েই কথাবার্তা হয়েছে। ছোট আড্ডার মতো, তবে শেখার জন্য অনেক সময় আছে। এখন তো ওরা তরুণ, ওদেরকে নিজেদের মতো খেলতে দেয়া উচিৎ।  

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি জাতীয় দলের হয়ে শুধু এক ফরম্যাটে খেলেন। অনেক সময় একটা সিরিজের পর আরেক সিরিজে টেস্ট খেলতে অনেক সময় লেগে যায়। এটা কি ইতিবাচক নাকি অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে দেয় একজন ক্রিকেটারকে? যদি না সে খেলার মাঝে থাকে।  

হনুমা: এটার (এক ফরম্যাটে খেলার তত্ত্ব) আসলে কোনো তত্ত্ব নেই। নির্বাচকরা যদি আপনাকে দলে নেয় আপনি অবশ্যই খেলবেন। এখন পর্যন্ত আমি কেবল টেস্ট ম্যাচ খেলছি। আমি বিশেষভাবে অনুশীলনের চেষ্টা করছি যাতে আমি আমার সেরাটা দিয়ে পারফর্ম করতে পারি। এটা আসলে পুরোটাই মানসিক ব্যাপার।

ভিন্ন ফরম্যাটের খেলার ক্ষেত্রে আপনার মানসিকতা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নির্দিষ্ট স্কিলের কিছু নেই। আমি আমার স্কিলের ওপর ভিত্তি করে কঠোর পরিশ্রম করছি। আমি আমার সক্ষমতার সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করছি। তবে আপনি যদি ম্যাচের মধ্যে থাকেন তাহলে এটা কোন সমস্যা না। যদি এক টেস্ট থেকে আরেক টেস্টের মাঝে আপনি ২২ গজে নাই খেলে থাকেন তাহলে অনেক ক্ষেত্রে সেটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। 

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার মতো আমাদের দেশেও অনেক ক্রিকেটার আছেন যারা শুধু এক ফরম্যাটেই খেলেন। তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি থাকবে? 

হনুমা: এটা আসলে ধৈর্য্যের ব্যাপার। আসলে বড় ইনিংস খেলার ধৈর্য্য থাকতে হবে। আমার মনে হয় সেটা আমি কয়েক বছর ধরে করে আসছি। এজন্য আমি দেশের হয়ে টেস্ট খেলার জন্য সুযোগ পেয়েছি। বাংলাদেশের সবাইকেও যারা এক ফরম্যাটে খেলেন তাদের এই ধৈর্যটা থাকতে হবে, না হলে হবে না। আমি শুরুতেই একবার বলেছি টেস্ট ক্রিকেট মাজনেই ধৈর্যের খেলা। যার যত বেশি ধৈর্য, সে তত সফল হবে। তাই আমি তাদের এটাকেই সবচেয়ে বেশি আয়ত্ত করতে বলব। 

ক্রিকফ্রেঞ্জি: জাতীয় দলে এক ফরম্যাটে খেলতেও আপনি আইপিএলেও খেলেছেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি এই লিগ থেকে প্রতিবছর নতুন নতুন প্রতিভাবান ক্রিকেটার উঠে আসছে। বলতে চাচ্ছি, বিজয় হাজারে, দুলিপ ট্রফি বা সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফির পাশাপাশি ভারতের ক্রিকেট বদলে যাওয়ার পেছেনে আইপিএল কতটুকু প্রভাব রেখেছে?  

হনুমা: আমি মনে করি আইপিএল তাদের জন্য ভালো একটা মঞ্চ। তারা কয়েক বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে আসছে। কিন্তু এটা সেভাবে নোটিস করা হয় না। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করে তারা আইপিএলে সুযোগ পায়। যেকোনো পরিস্থিতিতে কিংবা যেকোনো প্রতিযোগিতায় তারা পারফর্ম করার জন্য ক্ষুধার্ত থাকে। আমার মনে হয় ভারতীয় ক্রিকেটও রানের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে এবং দলের জন্য এটাই তাদের মেইন প্রায়োরিটি। এখন পর্যন্ত তারা খুব ভালো করছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি তো বাংলাদেশে খেলেছেন বা খেলছেন, এখানের ঘরোয়া ক্রিকেট খুব কাছ থেকে দেখছেন। দেখে কি মনে হলো? আর বাংলাদেশে শুধু টি-টোয়েন্টি লিগ বলতে বিপিএলই আছে। ভারতে আইপিএলের পাশাপাশি অনেক টি-টোয়েন্টি লিগে আছে, বাংলাদেশের কি এই পথে হাঁটা উচিৎ? 

হনুমা: এটা আসলে খুবই কঠিন। ভারতে অনেকগুলো দল এবং রাজ্য। যে কারণে আপনি এটি এফোর্ট করতে পারবেন। আপনি বাংলাদেশে খেয়াল করে দেখুন, মাত্র ১১টি দল অংশগ্রহণ করছে। যেখানে ভারতে ত্রিশের ওপরে দল। বাংলাদেশের জন্য এমনভাবে জেলা লিগ আয়োজন করা কঠিন। গতবার যখন এসেছিলাম তখনকার চেয়ে এখনকার খেলোয়াড়রা স্কিলফুলি অনেকটা ভালো। তারা যেভাবে খেলতে তাতে ধারাবাহিকতাও রয়েছে। এটা দেখে ভালো লাগছে যে বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি জাতীয় দলে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল এবং আজিঙ্কা রাহানের অধীনে খেলেছেন। কোন অধিনায়ককে সবার ওপরে রাখবেন? 

হনুমা: আমি সবচেয়ে বেশি খেলেছি কোহলির অধীনে, তাকেই এগিয়ে রাখব। অধিনায়ক হিসেবে সে খুবই আক্রমণাত্বক। সে জিততে পছন্দ করে এবং শেষ পর্যন্ত লড়াই করে। সে এই ধরনের মানসিকতায় বিশ্বাসী এবং সবার মাঝে সেটা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। তার সঙ্গে মানিয়ে নেয়া সহজ। মাঠের বাইরে সে খুব মজা করে। মাঠে থাকলে তার আক্রমণাত্বক ইনটেন্স রাখে। কিন্তু মাঠের বাইরে সে দারুণ এবং মানিয়ে নেয়া যায়।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ২০২৩ বিশ্বকাপ হবে ভারতে। সব ঠিক থাকলে অধিনায়ক থাকবেন রোহিত শর্মা। উপমহাদেশে বা আপনাদের ঘরের মাঠে খেলা, ১২ বছর পর কি আবারও বিশ্বকাপ ঘরে ওঠার স্বপ্ন দেখছেন?

হনুমা: হ্যাঁ, কেন নয়? কন্ডিশনটা আমাদের একেবারে পরিচিত এবং আমরা এখানে খেলে অভ্যস্ত। আমরা এখানে আইপিএল খেলি। আমি নিশ্চিত তারা ভালো রান পাবে এবং ট্রফি জিতবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে তো বললেন, সম্প্রতি সময় এবং সব মিলিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে আপনার চোখে বাংলাদেশ কেমন দল?

হনুমা: আমার মনে হয় গত কয়েক বছরে তারা ব্যাপকভাবে উন্নতি করেছে। তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় জিতেছে এটা অনেক বড় অর্জন। বিশ্বকাপে অন্য দলগুলোর সঙ্গে তারা দারুণভাবে ফাইট দেবে এবং সর্বাত্মকভাবে ট্রফি জেতার চেষ্টা করবে। অবশ্যই, বাংলাদেশ এমন একটি দল বিশ্বকাপে যাদের ওপর নজর রাখতে হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) ভারতীয় ক্রিকেটারদের আইপিলের বাইরে টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার অনুমতি দেয় না। যারা খেলে থাকেন তাদের অবসর নিতে হয়। বিসিসিআইয়ের কি এই বিষয়ে ছাড় দেয়া উচিৎ বা এই নিয়ম থেকে সরে আসা উচিৎ?  

হনুমা: এটা আসলে বিসিসিআইয়ের সিদ্ধান্ত। আমার মনে হয় আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। বিসিসিআইয়ের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। আমরা সেই নিয়ম পালনে বাধ্য। সেটাকে আমাদের সম্মান করতে হবে। আমার কমেন্ট করার কিছু নেই, সবটা বিসিসিআইয়ের হাতে।