বিপিএল ২০২২

সিডন্স যেন 'মৌচাক'

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 18:39 সোমবার, 07 ফেব্রুয়ারি, 2022

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

জেমি সিডন্স কি আসছেন? কখন আসবেন?... আজ কি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি? এই আলোচনাই চলছিল সিলেট ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ম্যাচ কভার করতে আসা বেশিরভাগ সাংবাদিকের কন্ঠেই। কারণ গুঞ্জন ছিল সোমবার বিপিএলের ম্যাচ দেখতে সিলেট স্টেডিয়ামে আসতে পারেন সিডন্স। সেটাই হয়েছে, তিনি এসেছেন। কিন্তু আসার পর এই অস্ট্রেলিয়ান যেন বনে গেলেন 'মৌচাক'।

সিডন্স কেন 'মৌচাক', এর উত্তরে একটু পরে আসা যাক। ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল ৪টা বা তার এর একটু বেশি। মাত্রই শেষ হয়েছে ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ম্যাচ। তখনই হুট করে প্রেস বক্সে হইহুল্লোড়! খবর এসেছে সিলেট স্টেডিয়ামের ২ নম্বর মাঠ দেখতে এসেছেন সিডন্স!

আসলে সিডন্স তখন আসেননি, এসেছেন দুপুরে। মাঠে বসে দেখেছেন সিলেট পর্বের প্রথম ম্যাচ। এরপর পুরো সিলেট স্টেডিয়াম ঘুরে দেখেছেন, সঙ্গে ছিলেন বিসিবির নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। মূলত এই অস্ট্রেলিয়ান ঘুরে দেখছিলেন পুরো মাঠের সব সুযোগ-সুবিধা।

প্রেসিডেন্ট বক্স থেকে বের হয়ে সিডন্সের প্রথম গন্তব্য স্টেডিয়ামের ইনডোর। সেখানে নির্বাচককে সঙ্গে নিয়ে পুরোটা ঘুরে দেখেন তিনি। এরপর তিনি ২ নম্বর মাঠের প্রেসিডেন্টস বক্সে পুরো মাঠ পরিদর্শন করেন এবং সৌম্য সরকারের ব্যাটিং মন দিয়ে দেখতে থাকেন।

সৌম্যকে সে সময় নেটে বোলিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন নাবিল সামাদ। তার বোলিং দেখে বাশারকে তিনি প্রশ্ন করেন 'হু ইজ দিস বোলার'? উত্তরে বাশার নাম বললে, নাবিলের বোলিংয়ের প্রশংসা করেন সিডন্স। এমন সময়ই গণমাধ্যমকর্মীরা ঘিরে ধরেন তাকে।

সবাই একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন সিডন্সকে, উত্তরে তিনি একটাই কথা বলেন শুধু... 'নো মিডিয়া টুডে'... এমন সময় এতো সংবাদকর্মীর ভিড় দেখে খানিকটা ভরকেও যান সেই অজি। সেখান থেকে কোনোমতে নিচে নেমে মূল গেটের দিকে হাঁটা দেন সিডন্স।

তার পিছু নেয় গণমাধ্যমকর্মীরা। সিডন্স চারপাশে এতো লোকবল দেখে মোবাইলে তার পরিবারকেও ভিডিও কল করে পুরো চিত্র তুলে ধরেন এবং বলেন, 'লুক হোয়ের আই অ্যাম, টু ম্যাচ ক্রাউড অ্যান্ড দ্যা হাইপ ইস ইন্টেন্স'। দুই নম্বর মাঠ থেকে মূল গেটে পৌঁছাতে লেগেছে অন্তত ৫-৭ মিনিট।

এই পুরো সময়টা গণমাধ্যমকর্মীরা ঘিরে রাখেন সিডন্সকে। শুধু দাঁড়িয়ে এক মিনিট কথা বোলার জন্য তাকে বেশ কয়েকবার অনুরোধও করা হয়, কিন্তু তাতে রাজি হননি এই অস্ট্রেলিয়ান। তবে হাঁটার সময় ক্রিকফ্রেঞ্জির প্রশ্নের জবাবে সিডন্স বলেন, '১০ বছর আগেও তো এতো গণমাধ্যমকর্মী ছিল না, এখন তো দেখি সব বদলে গিয়েছে। শুধু দেশটির ক্রিকেট নয়, বেড়ে গিয়েছে মিডিয়ার আগ্রহও।'

বাংলাদেশে সিডন্স পা রেখেছেন ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে। মাঝে একদিন গিয়েছিলেন মিরপুরে বিপিএল দেখতেও। এই সময়টুকুর মাঝে কোন পুরনো শিষ্যের (সাকিব-তামিম বা মুশফিক) সঙ্গের কোন আলাপ হয়েছে কিনা এর উত্তরে সিডন্স বলেন, 'আমি আসলে এসেছি কয়েকদিন হলো, এখনও কারও সঙ্গে কথা হয়নি।'

২০০৭ সালে বিশ্বকাপের পর অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের প্রধান কোচ হয়ে এসেছিলেন সিডন্স। আইসিএলসহ অনেক অধ্যায়ের সাক্ষী তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের দল হয়ে ওঠা, সাকিব-তামিম-মুশফিকদের ধারাবাহিক পারফর্মার হওয়ার শুরুটাও তার অধীনে।

তখন ডেভ হোয়াটমোরের হাত থেকে ছন্দে থাকা একটা দলকেই হাতে পেয়েছিলেন সিডন্স। তার অধীনে ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপেও খেলে বাংলাদেশ। তবে বিশ্বকাপের পর তিনি পদত্যাগ করেন। প্রায় ১১ বছর পর আবারও বাংলাদেশে ফিরেছেন তিনি।

এবার ভিন্ন ভূমিকায় ফিরলেও কোন পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন কিনা এর উত্তরে সিডন্স বলেন, 'আমি এখন কোন কিছু খোলাসা করতে চাইছি না। কি পরিকল্পনা আছে বা কি চিন্তা করছি, এই মুহূর্তে মিডিয়ার সাথে এখন কথা বলব না। সময় হলে সব জানিয়ে দেয়া হবে, আমাকে রাস্তা ছেঁড়ে দিন সবাই।'

সিডন্স-হাবিবুল বাশাররাই নন, সিলেটে এদিন বিপিএলের ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও। নতুন ব্যাটিং পরামর্শকের সঙ্গে কোন আলাপ হয়েছে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্রিকফ্রেঞ্জিকে বলেন, 'ও এসেছে কয়েকদিন হলো। ওকে আমরা গাইডলাইন দিয়ে দিয়েছি। কে কোন ফরম্যাটে খেলে তাও বলে দিয়েছি। তা দেখেই ও কাজ করবে। আপাতত কোন কিছু খুলে বলতে চাইছি না।'