বিপিএল ২০২২

বাংলাদেশে শিখতে আসা মঈনের 'শিক্ষক' সোহেল ইসলাম

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 15:04 রবিবার, 06 ফেব্রুয়ারি, 2022

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

মাঠের একদিকে উঁচু-নিচু টিলা, অন্যদিকে চা-বাগান। সবুজ পাহাড়ি টিলা আর নয়নাভিরাম চা বাগানবেষ্টিত এই মাঠকে বলা হয় আউটার স্টেডিয়াম। এখানেই চলছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সিলেট পর্বের জন্য দলগুলোর অনুশীলন। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া অনুশীলনে প্রথমে আসে টেবিলের শীর্ষে থাকা দুই দল ফরচুন বরিশাল এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

গা গরম শেষে সিলেট স্টেডিয়ামের গ্রাউন্ড-২ এর সেন্টার উইকেটে ব্যাটিং অনুশীলনে ব্যস্ত দুই দলের ক্রিকেটাররা। এক পাশের নেটে বরিশাল, অপরপাশে কুমিল্লা। আবার এই নেটের দুই পাশের কোনায়ও অনুশীলনের ব্যবস্থা রয়েছে। বাঁপাশের নেটে নিজেদের ঝালাইয়ে ব্যস্ত পারভেজ হোসেন ইমন, লিটন দাস এবং মাহমুদুল হাসান জয়। তাদের সঙ্গে কাজ করছেন মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। ডান সাইডের নেটে তখনও বরিশালের ক্রিকেটাররা ঘাম ঝড়াচ্ছেন।

বিপিএলের সিলেট পর্বে মাঠে নামার আগে দুই দলের অনুশীলন চলাকালে চোখ আটকে গেল সেন্টার উইকেটে। যেখানে ব্যাটিং করছেন সাকিব আল হাসান ও মঈন আলী। দুই দলের মিডল অর্ডারের দুই স্তম্ভ। সাকিব যেখানে চার-ছক্কা হাঁকাতে ব্যস্ত সেখানে মঈন আলী করছেন উল্টোটা। কুমিল্লার স্পিনারদের দেখে শুনে খেলে সিঙ্গেল-ডাবলস নেয়াই যেন তার প্রাথমিক কাজ।

২ ফেব্রুয়ারি বিপিএল খেলতে ঢাকায় এসেছেন মঈন। ঢাকা পর্বে এক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েও ব্যাটিংয়ে নামা হয়নি। যদিও সেদিন ম্যাচ শুরুর আগে মিরপুরের ইন্ডোরে প্রায় ৪০ মিনিটের মতো ব্যাটিং সেরেছিলেন। এরপর চলে এসেছেন সিলেটে। লক্ষ্য বিপিএল দিয়ে আসন্ন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রস্তুতি নেয়া।

সিঙ্গেল-ডাবলসের অনুশীলনের মাঝে মঈন বাড়তি মনোযোগী ছিলেন সুইপ শট নিয়ে। বলতে গেলে এটি তার এক প্রকার ট্রেডমার্ক শটও। কিন্তু সেই শট খেলতে গিয়েই যেন বার বার বিপদে পড়তে হচ্ছিল তাকে। কখনও ব্যাটে-বলে টাইমিং হচ্ছে না। বেশ কয়েকবার ব্যাটের কানায় লেগে বল টপ এজ হচ্ছে। দূর থেকে দেখে বিরক্তই মনে হল তাকে। তারপরও সুইপ শটে টাইমিং করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেলেন অন্তত মিনিট দশেক।

অনুশীলনের মাঝে আবার একটু বিরতি নিয়ে সাকিবের অনুশীলনেও চোখ দিচ্ছেন মঈন। এই উইকেটে সাকিব স্পিনের বিপক্ষে কিভাবে খেলছেন তাই হয়তো বুঝে ওঠার চেষ্টা করছিলেন তিনি। প্রায় ৪০ মিনিটের মতো অনুশীলন শেষে ড্রেসিং রুমে ফেরাকালে তিনি শরণাপন্ন হলেন সোহেল ইসলামের।

কুমিল্লার এই সহকারী কোচ ও মঈনের দূর থেকে কথোপকথন এবং অঙ্গভঙ্গি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেল যে সুইপ শট নিয়েই দীক্ষা দিচ্ছেন তিনি। এই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, 'আমরা কথা বলছিলাম সুইপ করা নিয়ে। বাংলাদেশে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ শট।'

'এটা নির্ভর করে উইকেটের ওপরও। ঢাকায় যেমন, সুইপ করা কঠিন। তবে কিছু ক্রিকেটার সহজাতভাবেই সুইপ ভালো খেলে। আমি এটাও বলছিলাম যে আমি কিভাবে খেলি (সুইপ), স্পিনে আমার ব্যাটিংয়ের ধরন কেমন, আলোচনা করছিলাম যে কোনটা সবচেয়ে উপযুক্ত পথ' আরও যোগ করেন তিনি।

২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছিলেন মঈন। এর পাঁচ বছর পর ২০১০ সালে ঢাকা লিগের সুপার সিক্স পর্ব মোহামেডানের হয়ে খেলতে আবারও এখানে আসেন তিনি। সেবারই সোহেলের সাথে পরিচয় হয় তার। সে সময় দলটির সহকারী কোচ ছিলেন সোহেল। মঈন আরও বলনে, 'সে (সোহেল) খুব ভালো চেলে, অনেক দিন ধরে চিনি তাকে। খুব ভালো কোচও। আমি এখানে এসেছি শিখতে। শিখতে চাই, উন্নতি করতে চাই নিজের খেলায়।'

মইনের বয়স এখন ৩৪। খেলতে চান আরও ৫-৬ বছর, জিততে চান আরও বেশি বেশি শিরোপা। চলমান বিপিএলে কুমিল্লার হয়ে শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশে পা রেখেছেন তিনি। ইংলিশ এই অলরাউনার বলেন, 'আমার জন্য অবশ্যই ভালো। কারণ আমি স্পিন করি। এখনও উন্নতি করতে চাই। বয়স এখন ৩৪, তবু সবসময় উন্নতি করতে চাই। দল হিসেবেও আমরা ভালো করছি।'

'৬ ম্যাচের ৪টি আমরা জিতেছি, একটি বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। আত্মবিশ্বাসী ও ভালো খেলতে থাকা একটি দলে আসতে পারা সবসময়ই ভালো। আর, আমি ট্রফি জিততে চাই। বয়স এখন ৩৪, হয়তো আর ৫-৬ বছর আছে (ক্যারিয়ারের)। বিশ্বজুড়ে যত বেশি সম্ভব ট্রফি আমি জিততে চাই। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সেও এটাই আমার লক্ষ্য, টুর্নামেন্ট জয়ের চেষ্টা করা' আরও যোগ করেন তিনি।

বিপিএলের পরই হবে আইপিএল। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই টি-টোয়েন্টি লিগের প্রস্তুতির জন্য বিপিএলকে বেঁছে নিয়েছেন মঈন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেটা বললাম আগে, এখানে ভালো খেললে দুনিয়ার প্রায় সব জায়গায় ভালো খেলা যায়। বিশেষ করে, স্পিন খেলায়। বিভিন্ন ঘরানার স্পিনার এখানে। আমার এখানে আসার কারণগুলির মধ্যে এটিও একটি, ফর্ম ধরে রাখা ও আইপিএলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। এই অভিজ্ঞতা অবশ্যই কাজে লাগবে।'