সালতামামি

ফিরে দেখা বাইশ গজের ২০২১

হাসিব সিয়াম

হাসিব সিয়াম
প্রকাশের তারিখ: 20:52 শুক্রবার, 31 ডিসেম্বর, 2021

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

৩৬৫ সূর্যাস্ত পেরিয়ে একুশ এখন বিদায়ের ক্ষণ গুনছে। অপেক্ষা বর্তমান বদলে স্মৃতির পাতায় নাম তোলার। একুশ যদি কোনো বই হয় তাহলে এর বড় অংশ জুড়ে থাকবে করোনা মহামারী। যেখানে ডেলটা কিংবা ওমিক্রণ একেকটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এসবের ভিড়ে ক্রিকেট শিরোনামের অধ্যায়টা পাঠকের জন্য খুঁজে পাওয়া হয়তো দুষ্কর। তবে পৃষ্ঠায় কম হলেও এখানে রোমাঞ্চে কোনো কমতি নেই। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কিংবা আইপিএল থেকে টি-টেন সবই আছে একুশের পাতায়। যেখানে বছর জুড়ে বাইশ গজে ঘটেছে নানান রংয়ের গল্প। চলুন দেখে নেয়া যাক ক্রিকেটে একুশের সেরা মুহূর্তগুলো।

এভাবেও ফিরে আসা যায়

গেল বছরের শেষের দিকে অ্যাডিলেড টেস্টে কোনো এক দুঃস্বপ্নই যেন তাড়া করেছিল ভারতকে। সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩৬ রানে অল আউট হয়েছিল ভারত। তবে সময়ের মতোই বিশের এমন লজ্জা পাতা উল্টে মুছে ফেলেছিল বিরাট কোহলির দল। পরের টেস্টেই মেলবোর্নে অজিদের হারিয়ে একুশের শুরুটা রাঙিয়ে ছিল আজিঙ্কা রাহানে-ঋষভ পান্তরা। শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল ভারত। এভাবে ঘুরে দাড়িয়ে সিরিজ জয় টেস্ট ক্রিকেটেরই এক নতুন উপখ্যান।

অবশেষে কিউইদের শিরোপা জয়

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জেতা হয়নি নিউজিল্যান্ডের। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে এসে সুপার ওভার ড্র করেও নিয়মের বেড়া জালে পড়ে ইংলিশদের কাছে ট্রফি হাতছাড়া হয়েছিল কিউইদের। এবার ইংল্যান্ডের মাটিতেই সাদা পোশাকের মুকুট জিতেছে নিউজিল্যান্ড। তবে সেই আক্ষেপ ঘুচেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। আইসিসির প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নিউজিল্যান্ড। গত জুনে সাউদাম্পটনে ফাইনালে ভারতকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিল উইলিয়ামসনের দল। 

ঘরের মাঠে টাইগারদের ক্যাঙ্গারু বধ

আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪-১ এ টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। যেখানে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অজিদের ২৩ রানে হারায় টাইগাররা। যা অজিদের বিপক্ষে প্রথম কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয় ছিল। এরপর ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে মিরপুরে ইতিহাস গড়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।

পোলার্ডের ছয় ছক্কা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এক ওভারে ছয় ছক্কা মারেন কাইরন পোলার্ড। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক টি-টোয়েন্টিতে আকিলা ধানাঞ্জয়ার বিপক্ষে এমন কীর্তি গড়েন। একই ম্যাচে আবার হ্যাট্রিক উইকেট নেয়ার রেকর্ড  গড়েছিলেন এই লঙ্কান স্পিনার।

বিশ্বমঞ্চে নতুন পাকিস্তানের ভারত জয়

বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের জয় যেন আরাধ্য কোনো বস্তু! অবশেষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেই জয়ের দেখা পেয়েছে বাবর আজমের দল। তাও আবার ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। রীতিমতো ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের এই বিশ্ব আসরে পা রেখেছিল পাকিস্তান।

ক্যাম্ফারের ডাবল হ্যাট্রিক

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ডাবল হ্যাট্রিক করেন কার্টিস ক্যাম্ফার। ইনিংসের দশম ওভারে এই আইরিশ অলরাউন্ডার টানা চার বলে কলিন অ্যাকারম্যান, রায়ান টেন ডেসকাট, স্কট এডওয়ার্ডস এবং ভন ডার মারউইকে ফিরিয়ে এই কীর্তি গড়েন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি ছাড়া হ্যাট্রিক আছে কেবল ব্রেট লির। 

অস্ট্রেলিয়ার আরাধ্য টি-টোয়েন্টি শিরোপা জয়

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথম শিরোপা জয়। ওয়ানডেতে বিশ্বকাপ ট্রফি পাওয়া হলেও অরাধ্য ছিল টি-টোয়েন্টির শিরোপা। এবার অ্যারন ফিঞ্চের নেতৃত্বে সেটাও ছুঁয়ে দেখল অজিরা। এর আগে ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ এবং ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। যা ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যকবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড।

রিজওয়ানের স্বপ্নের বছর

এ বছর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রায় ৭৪ গড়ে ১ হাজার ৩২৬ রান করেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। যা টি-টোয়েন্টি  ক্রিকেট ইতিহাসে এক পঞ্জিকা বর্ষে কোনো ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। পাশাপাশি ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক পঞ্জিকা বর্ষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। যেখানে তিনি ১২ টি হাফ সেঞ্চুরির পাশাপাশি তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়েছেন একবার।

শেষের আক্ষেপেও দুর্দান্ত জো রুট

এ বছর ১৪ টেস্টে ১৭০৮ রান করেছেন জো রুট। যা সাদা পোশাকের ক্রিকেটে এ বছরের কোনো ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আর টেস্ট ইতিহাসে এক পঞ্জিকা বর্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। তার ওপরে আছেন কেবল মোহাম্মদ ইউসুফ। ২০০৬ সালে এই পাকিস্তানি ব্যাটার করেছিলেন ১৭৮৮ রান।

মুম্বাইয়ে প্যাটেলের কীর্তি

মুম্বাই টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে সবগুলো উইকেট একাই নিয়েছেন এজাজ প্যাটেল। এই বাঁহাতি স্পিনার ১১৯ রানের বিনিময়ে শিকার করেছেন ১০ উইকেট। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো ঘটেছে এমন ঘটনা। এই তালিকার বাকি দুই জন হলেন জিম লেকার এবং অনিল কুম্বলে।