বাংলাদেশ ক্রিকেট

গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিককে ছাড়াই শুরু বাংলাদেশের অনুশীলন

মমিনুল ইসলাম

মমিনুল ইসলাম
প্রকাশের তারিখ: 21:29 শনিবার, 13 নভেম্বর, 2021

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

দেখতে দেখতে কার্তিকও শেষ হওয়ার পথে। তবে কার্তিক শেষে এসেও জরাজীর্ণ শহরে সেভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি শীত। ভ্যাপসা গরমে মানুষের জীবন যখন বিপর্যস্ত তখন জ্যামের শহরে উঁকি দিল প্রশান্তির বৃষ্টি। শুক্রবার দিনগত রাত থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। যা বয়ে গেছে শনিবারের পুরোটা দিন। তাতে খানিকটা শীতের আমেজ পাওয়া গেল। যখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে সবকিছু ঝিমিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় তখন মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক টুকরো রোদ উঁকি দিল।

বেলা তখন কেবলই বারোটা পেরিয়েছে, মিরপুরের একাডেমি মাঠে অনুশীলনে ব্যস্ত জাতীয় ক্রিকেট লিগের রংপুর ও সিলেট বিভাগের ক্রিকেটাররা। এমন সময় স্টেডিয়ামের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করেন মুস্তাফিজুর রহমান। আগেরদিন অনুশীলনের সূচি প্রকাশ করায় সেটা খানিকটা অনুমেয়ই ছিল। মাঠে ঢুকেই ফিজের গন্তব্য একাডেমির জিম। সেখানে প্রায় ঘণ্টাখানেক ঘাম ঝড়িয়েছেন কাটার মাস্টার।

সময় যত গড়িয়েছে মিরপুরে ক্রিকেটারদের আনাগোনা ততই বেড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাধ্য ছাত্রের মতো অনুশীনের জন্য বেধে দেয়া সময়ের আগেই ড্রেসিং রুমে হাজির আফিফ হোসেন ধ্রুব, নাইম শেখ, তাসকিন আহমেদ ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লবরা। একই পথে হেঁটেছেন সাইফ হাসান, পারভেজ হোসেন ইমন, নাজমুল হোসেন শান্তরা। ক্রিকেটারদের মতো এদিন মিরপুরে পা পড়ে কোচিং স্টাফদেরও।

দুপুর ১ টা ২০ মিনিটের দিকে ট্রেনার নিক লির দেখানো পথে মিরপুরের মাঠে পা পড়ে ক্রিকেটারদের। লির মতো মাঠে উপস্থিত ছিলেন ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্স, বোলিং কোচ ওটিস গিবসন। বিশ্বকাপের ব্যর্থতা পেরিয়ে বাংলাদেশের পরবর্তী লক্ষ্য ঘরের মাঠে পাকিস্তান সিরিজ। বাবর আজমদের বিপক্ষে শিষ্যদের প্রস্তুত করতে অনুশীনের শুরুর দায়িত্বটা নিক লির কাঁধে। মাঠে নেমে ড্রেসিং ‍রুমের ঠিক সামনে খানিকটা ওয়ার্মআপ করে নেন অনুশীলনে আসা ক্রিকেটাররা।

পাকিস্তানকে টেক্কা দিতে কোচিং স্টাফ যখন ক্রিকেটারদের প্রস্তুত করতে ব্যস্ত তখনও দল ঘোষণা করেননি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচকরা। অনুশীলনে গিবসন-প্রিন্সদের দেখা গেলেও ক্যামেরার লেন্স খুঁজে পায়নি প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ও ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুককে। এই দুই কোচকে নিয়ে খটকাটা কেটেছে সন্ধ্যে নামার ঠিক একটু আগে।

বিশ্বকাপে ব্যাটিং ব্যর্থতার সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হতাশার জায়গা ছিল ফিল্ডারদের ক্যাচ মিস। এবারের আসরে ১৩টির অধিক ক্যাচ ছেড়েছে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। এমন পারফরম্যান্সের পর প্রশ্ন উঠেছিল ফিল্ডিং কোচের কার্যকারীতা নিয়ে। অনেকে অবশ্য চাকরিচ্যূতও চেয়েছিল। সমর্থকদের সেই প্রত্যাশাও পূরণ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হলেও রায়ানের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করছে না বিসিবি। প্রায় ঘণ্টা তিনেকের বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এমনটা নিশ্চিত করেছেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান।

তিন ঘণ্টার বৈঠকে তিন নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, হাবিবুল বাশার সুমন ও আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে ছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন, আকরাম এবং রাসেল ডমিঙ্গো। ধারণা করা হচ্ছিলো দল নির্বাচন নিয়েই কোচের সঙ্গে বৈঠক সেরেছে নির্বাচকরা। যে কারণে দল ঘোষণা হবে ভেবে প্রতীক্ষায় ছিলেন মাঠে আসা সংবাদকর্মীরা। সেটি অবশ্য হয়ে উঠেনি। বৈঠক শেষে নির্বাচকরা মুখ না খুললেও আকরাম জানিয়েছেন দল ঘোষণা হবে ১৬ নভেম্বর।

দুপুর নাগাদ নির্বাচকরা ও ডমিঙ্গো যখন স্কোয়াডের কাটাছেঁড়া নিয়ে ব্যস্ত তখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ওয়ার্মআপে মনোযোগী অনুশীলন ক্যাম্পে আসা ক্রিকেটাররা। প্রায় ২৫ মিনিটের ওয়ার্ম আপ শেষে ক্রিকেটারদের সঙ্গে টিম মিটিং সেরে নেন কোচিং স্টাফরা। গিবসনের সঙ্গে সেখানে কথা বলছেন সুজনও। অনুশীলন শুরুর ৪০ মিনিট পেরিয়ে গেলে বাধ সাধে বৃষ্টি। তাতে শুধু মাত্র ওয়ার্ম আপ করেই ড্রেসিং রুমে ফিরতে হয় ক্রিকেটারদের।

একটু পর ‍বৃষ্টি কমে গেলে অনুশীলন সারতে ইনডোরের পথে পা বাড়ায় ক্রিকেটাররা। বৃষ্টিস্নাত মিরপুরে দিনের বাকি অনুশীলনটুকু সেরে নেন তাসকিন-নাইমরা। বৃষ্টি বাধার পরও দল অনুশীলন ক্যাম্পের যোগ দিলেও এদিন ক্যামেরার লেন্স খুঁজে পায়নি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। সেই সঙ্গে ছিলেন না অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম এবং দুই ওপেনার সৌম্য সরকার-লিটন দাস।

ছুটি কাটিয়ে ১১ নভেম্বর ফেরার কথা থাকলেও মাঠের অনুশীলনে দেখা যায়নি তাঁদের। তাতে দলের অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ মুশফিককে ছাড়াই প্রথম দিনের অনুশীলন সেরেছে বাংলাদেশ। এদিকে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে সকালে বাংলাদেশে পা রেখেছে পাকিস্তান। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বাদ পড়লেও বিশ্বকাপের অন্যতম শক্তিশালী দল ছিল তারা। সিরিজ শুরুর আগে মাত্র ৫ দিনের অনুশীলনে বাবরদের বিপক্ষে লড়াই করার পূর্ণ প্রস্তুতি হবে তো?