টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

আসালঙ্কা ও রাজাপাকশার কাছেই হারল বাংলাদেশ

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 15:34 রবিবার, 24 অক্টোবর, 2021

|| আবিদ মোহাম্মদ, শারজাহ ||

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

বাংলাদেশ- ১৭১/৪ (ওভার ২০) (নাইম ৬২, মুশফিক ৫৭*)

শ্রীলঙ্কা- ১৭২/৫ (ওভার ১৮.৫) (আসালাঙ্কা ৮০*, রাজাপাকশা ৫৩) (সাকিব ২/১৭)

বড় লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কা শুরুতেই হারিয়ে বসে কুশল পেরেরা। ধাক্কা সামাল দিয়ে পাওয়ার প্লে'তে পাথুম নিসাঙ্কা এবং চারিথ আসালঙ্কার পাল্টা আক্রমণ। তাতেই প্রথম ৬ ওভারে এল ৫৪ রান। এরপর সাকিবের ঘূর্ণিতে বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরা। ৪ ব্যাটসম্যানের বিদায়ে যখন শ্রীলঙ্কা ব্যাকফুটে সেসময় লঙ্কানদের হাল ধরলেন আসালঙ্কা এবং ভানুকা রাজাপাকশা। দুজনের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হল লিটন দাসের জোড়া ক্যাচ মিস। তাতেই শেষ বাংলাদেশের জয়ের আশা। সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬ উইকেটের পরাজয় দিয়ে মাঠ ছাড়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। 

১৭১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কাকে শুরুতেই বিপফে ফেলেন নাসুম আহমেদ। বাঁহাতি এই স্পিনারকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন কুশল পেরেরা। তার বিদায়ে ক্রিজে এসে পাল্টা আক্রামন চালান চারিথ আসালঙ্কা। এই ব্যাটসম্যানকে দারুণ সঙ্গ দেন পাথুম নিসাঙ্কা। দুজন মিলে শুরুর ৬ ওভারে যোগ করেন ৫৪ রান। 

পাওয়ার প্লে শেষে নবম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন সাকিব আল হাসান। পৌঁছে যান শহীদ আফ্রিদিকে টপকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকাতেও। খানিক পর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে বিদায় করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। সে সময় ম্যাচের নাটাই বাংলাদেশের হাতেই ছিল।

১০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ তখন ৮০ রান। কিন্তু এরপরই ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টে দেন আসালঙ্কা এবং রাজাপাকশা। ১৩তম ওভারে আফিফ হোসেনের বিপক্ষে ১৩ রান নেয় এই জুটি। দলীয় ৯৮ রানে স্কয়ার লেগে লিটনের হাতে জীবন পান রাজাপাকশা। আর সেই ওভারেই হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন আসালাঙ্কা। 

এরপরের ওভারে মাহমুদউল্লাহর বিপক্ষে এই জুটি নেয় ১৬ রান। ১৫তম ওভারে এসে মুস্তাফিজুর রহমানের বিপক্ষ সুযোগ তৈরি করলেও তা হাতছাড়া করেন লিটন। উইকেটে থিতু হওয়া আসালঙ্কার ক্যাচ ফেলে দেন তিনি। দুই ব্যাটসম্যানই জীবন পেয়ে আর পেছনে ফিরে তাকাননি।

১৬তম ওভারে সাইফউদ্দিনের বিপক্ষে ২২ রান নিয়ে ম্যাচ হাতের নাগালে নিয়ে আসেন এই দুজন। এরপর দেখে শুনে স্কোরবোর্ডে রান যোগ করতে থাকলেও ১৮.২ ওভারে নাসুমের বলে বোল্ড হন রাজাপাকশা। সে সময় লঙ্কানদের জয় পাওয়া ছিল মাত্র সময়ের ব্যাপার। দাসুন শানাকাকে সঙ্গে নিয়ে ৭ বলে হাতে রেখেই দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান আসালাঙ্কা। ৪৯ বলে ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। 

বাংলাদেশের ইনিংস:

বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের জন্য ১৭২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। নিজের প্রথম ওভারে কুশল পেরেরাকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন নাসুম আহমেদ। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন চারিথ আসালাঙ্কা ও পাথুম নিশানকা।

তাদের দুজনের ৬৯ রানের জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। ২৪ রান করা নিশানকাকে সাজঘরে ফিরিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ মালিক হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন বাঁহাতি এই স্পিনার। তাতে ৩৯ উইকেট নেয়া শহীদ আফ্রিদিকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। একই ওভারে আভিঙ্কা ফার্নান্দোকে ফেরান সাকিব।

পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে উইকেট তুলে নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। আগের বলে চার মারলেও পরের বলে তুলে মারতে গিয়ে নাইম শেখের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৬ রান করা হাসারাঙ্গা। 

নাইম-মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের বড় সংগ্রহ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে ওপেনিং জুটি ভালো শুরু এনে দিতে পারেনি বাংলাদেশকে। তারপরও দলীয় নৈপুণ্যে দুই ম্যাচ জিতে রানার্স আপ হয়ে সুপার টুয়েলভের টিকিট পায় বাংলাদেশ। আর এখানে এসেই ওপেনিং জুটি থেকে মোটামোটি বড় রান পায় বাংলাদেশ। লিটন দাস-নাইম শেখের ৪০ রানের জুটির সঙ্গে মুশফিকুর রহিম ও নাইমের ৭৩ রানের জুটি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলকে এনে দেয় ১৭১ রানের বড় সংগ্রহ। ওপেনার নাইম শেখ করেন সর্বোচ্চ ৬২ রান। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৫৭ রানে। 

সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টস হারলেও শুরুতে ব্যাটিং করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে হতাশ করেননি ওপেনাররা। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগের বলে লিটন ফিরলেও বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে তখন ৪০ রান।

১৬ বলে ১৬ রান করে বিদায় নেন তিনি। তবে আউট হওয়ার পর লাহিরু কুমারার সঙ্গে বাকবিতণ্ডাতেও জড়ান এই ওপেনার। আগের দুই ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করা সাকিব অবশ্য এদিন ইনিংস বড় করতে পারেননি। চামিকা করুনারত্নের বল স্টাম্প ছেঁড়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। ৭ বলে করেন ১০ রান।

২ উইকেট হারালেও মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন নাইম। লম্বা সময় পর মুশফিকেও ছন্দে ব্যাটিং করতে দেখা যায়। এই দুজন মিলে বাংলাদেশকে দলীয় ১০০র ওপর নিয়ে যান। নাইম তুলে নেন চলতি বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। তবে ব্যক্তগত ৬২ রানের সময় বিনুকা ফার্নান্ডোর বাউন্সারে আউট হন এই ওপেনার।

সঙ্গী হারালেও অপরপ্রান্তে থাকা আফিফকে নিয়ে দলকে টেনে নিয়ে যান মুশফিক। দেখা পান ২০১৯ সালের ভারত সফরের পর এই ফরম্যাটে প্রথম হাফ সেঞ্চুরির। সে সময় বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৮.১ ওভারে ৩ উইকেটে ১৫০ রান। অবশ্য এর ২ বল পরই রান আউট হন আফিফ। ৬ বলে ৭ রান করে ফেরেন তিনি।

আফিফের বিদায়ে ক্রিজে আসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৯তম ওভারের শেষ বলে একটি বাউন্ডারিও হাঁকান তিনি। ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ১৫৯ রান। শেষ ওভারে এই জুটি মিলে আরও নেন ১২ রান। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৭১ রানে। শেষ ১০ ওভারে আসে ৯৯ রান।