বাংলাদেশ - নিউজিল্যান্ড সিরিজ

রোমাঞ্চ জাগিয়ে বাংলাদেশের জয়

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 15:31 শুক্রবার, 03 সেপ্টেম্বর, 2021

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

শেষ দুই বলে ম্যাচ জিততে ১৩ রান প্রয়োজন ছিল নিউজিল্যান্ডের। এমন সময় নো বল দিয়ে বসেন মুস্তাফিজুর রহমান। সেই বল থেকে লেগ সাইড দিয়ে চার মারেন টম লাথাম। যদিও ফ্রি বল কাজে লাগাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। পঞ্চম বলে মাত্র ২ রান নিলে ম্যাচ জিততে শেষ বলে প্রয়োজন হয় ৬ রানের।

পুরো ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করলেও সেই সমীকরণ মেলাতে পারেননি লাথাম। ২০তম ওভারে মুস্তাফিজ ১৫ রান দিলেও নিউজিল্যান্ড থামে ১৩৭ রানে। তাতে ৪ রানের জয়ে সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

উইকেট বিবেচনায় ১৪২ রানের লক্ষ্য অনেক বড়। তারপরও দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কপালে। গেল ম্যাচের ভুলগুলো দ্রুত শুধরে ১৫ ওভার পর্যন্ত ভালোই এগোচ্ছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু রান রেটের চাপে শেষটা ইতিবাচক করতে পারেনি সফরকারীরা। শেষ পর্যন্ত ২১ রানের জয়ে ২-০তে এগিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ।

লক্ষ্য তাড়ায় ভালো কিছুর আভাস দিয়েও আরেক দফা ব্যর্থ নিউজিল্যান্ড উদ্বোধনী জুটি। প্রথম ওভারেই শেখ মেহেদীর বলে আউট হতে হতে বেঁচে যান রাচিন রবীন্দ্র। তৃতীয় ওভারে সাকিবকে হাঁকান দারুণ এক ছক্কা। কিন্ত পরের বলেই পুল করতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড।

আগের ম্যাচে গোল্ডেন ডাকের পর এ দিন থেমেছেন ১০ রানে। ২ রানের ব্যবধানে আরেক ওপেনার টম ব্লান্ডেলকে (৬) স্টাম্পিংয়ে পরিণত করেন শেখ মেহেদী। তাতে ১৮ রানেই ২ উইকেট হারায় সফরকারীরা। সেখান থেকে অধিনায়ক টম লাথাম ও উইল ইয়াংয়ের ৪৭ রানের জুটি।

ইয়াংকে থার্ড ম্যানে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ক্যাচে পরিণত করে জুটি ভাঙেন সাকিব। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে নিয়ে পরের পথটা পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা লাথামের। ১৪তম ওভারে ডিপ স্কয়ার লেগে সাইফউদ্দিনকে হাঁকান দারুণ এক ছক্কা। কিন্তু যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি গ্র্যান্ডহোম (৮)।

এই অলরাউন্ডারের বিদায়ের পর হেনরি নিকলসও ফেরেন দ্রুত। সে সময় নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ১৬ ওভারে ৯৪ রান, ৫ উইকেট হারিয়ে। ১২ রেটে তখনও কিউইদের করতে হবে ২৪ বলে ৪৮ রান। কিন্তু রান রেটের চাপে যেন এলোমেলো হয়ে গেল সফরকারীরা।

১৭তম ওভারে কোল ম্যাকনকি এবং টম ল্যাথাম মিলে সাকিবের বিপক্ষে নেন ১১ রান। তখনও কিউইদের প্রয়োজন ১২ বলে ৩৭ রান। পরের ওভারে মুস্তাফিজকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন কিউই অধিনায়ক

এরপর শেষ ১২ বলে নিউজিল্যান্ডের ২৮ রান প্রয়োজন হলে ১৯তম ওভারে সাইফউদ্দিনের বিপক্ষে ৮ রান নিতে সক্ষম হন কিউই ব্যাটসম্যানরা। শেষ ওভারে ২০ রান দরকার হলেও মুস্তাফিজের ওভার থেকে নিতে পেরেছে ১৫ রান। তাতে ৪ রানের ব্যবধানে হারতে হয় তাঁদেরকে। ৬৫ রানে অপরাজিত ছিলেন দলটির অধিনায়ক লাথাম।

এর আগে টস ভাগ্যে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে সময় নেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দুই ওপেনার লিটন দাস এবং নাইম শেখ ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের ব্যাটে ভালো শুরু পায় বাংলাদেশ দল। প্রথম দুই ওভারে স্কোরবোর্ডে মাত্র ৬ রান নিলেও কলিন ডি গ্রান্ডহোমের হাতে জীবন পান লিটন।

এরপর পাওয়ার প্লে'তে আর পেছনে ফিরে তাকাননি এই ওপেনার। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের দেখে শুনে খেলে ৬ ওভারে এই জুটি স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৩৬ রান। টম ল্যাথাম বোলিংয়ে নিয়মিত পরিবর্তন এনেও বিপদে ফেলতে পারেননি।

রান রেট ৬ এর কাছাকাছি রেখে ৯ ওভারে দলীয় ৫০ রানে পৌছায় বাংলাদেশ। এ নিয়ে ৯ ইনিংস পর ওপেনিং জুটিতে ৫০ রান যোগ করে বাংলাদেশ। সবশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওপেনাররা ১০২ রানের জুটি গড়েছিলেন।

প্রথম ৯ ওভারে প্রতিপক্ষের বোলারদের বড় কোন সুযোগ না দিলেও ১০ম ওভারের প্রথম বলে রচিন রবীন্দ্রকে ছক্কা হাঁকালেও তৃতীয় বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হন লিটন। ২৯ বলে ৩৩ রান করেন এই ওপেনার। এরপরের বলেই তিনে নামা মুশফিকুর রহিম প্রথম বলেই ফেরেন স্টাম্পিং হয়ে।

টানা দুই উইকেট হারিয়ে বসা বাংলাদেশকে বিপদমুক্ত করতে ক্রিজে এসে দ্রুত ৭ বলে ১২ রান করলেও কোল ম্যাককনকিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়েন সাকিব। এরপর ক্রিজে নেমে নাঈমকে ভালো সঙ্গ দেন মাহমুদউল্লাহ।

পরের ৪ ওভারে দুজন মিলে যোগ করেন ৩১ রান, সঙ্গে দলকে এনে দেন ১০০ রানের পুঁজি। ১৫ ওভারে স্বাগতিকদের রান তখন ৩ উইকেটে ১০৩। তবে ১৬তম ওভারের ৫ম বলে রবিন্দ্রকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ৩৯ বলে ৩৯ রান করে ফেরেন নাইম।

পরের ওভারে এক রানে ফেরেন আফিফ। ১৭ ওভারের সময় ক্রিজে আসেন নুরুল হাসান। ওভার শেষে ৫ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ১১০। সেখান থেকে দলকে টেনে নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ এবং নুরুল। ১৯তম ওভারে এই জুটি যোগ করে ১৩ রান।

২০তম ওভারে এই জুটি আরও যোগ করে ১১ রান। তাতেই ১৪০ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। শেষ বলে ক্যাচ আউট হন নুরুল হাসান। ৮ বলে ১৩ রান করেন এই উইকেটরক্ষক, মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ৩২ বলে ৩৭ রানে। রাচীন নেন ৩ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ- ১৪১/৬ (ওভার ২০) (মাহমুদউল্লাহ ৩৭*, নাইম ৩৯) (রাচীন ৩/২২)

নিউজিল্যান্ড- ১৩৭/৫ (ওভার ২০) (লাথাম ৬৫*, ইয়াং ২২, ম্যাককনি ১৫*, মেহেদি ২/১২, সাকিব ২/২৯)