ইংল্যান্ড - ভারত সিরিজ

বুমরাহ-শামিতে রোমাঞ্চের শুরু, সিরাজের থ্রিলারে শেষ

মমিনুল ইসলাম

মমিনুল ইসলাম
প্রকাশের তারিখ: 23:53 সোমবার, 16 আগস্ট, 2021

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

তখন কেবলই সোমবার উঁকি দিয়েছে। জ্যামাইকায় কেমার রোচের ব্যাটিং দৃঢ়তায় পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র এক উইকেটের জয় তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই রোমাঞ্চের রেশ কাটতে না কাটতেই লর্ডসে রোমাঞ্চের পদধ্বনি। লর্ডস টেস্টের রোমাঞ্চের আভাসটা মিলেছিল চতুর্থ দিন শেষেই। তবে রোমাঞ্চে বাড়তি উত্তেজনা লেপে দেয় জসপ্রিত ‍বুমরাহ ও মোহাম্মদ শামির ব্যাটিং। এই দুইজনের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ের বড় পূুজি পায় ভারত। 

শেষ পর্যন্ত সেই পুঁজিই ভারতের জয়ের হাতিয়ার হয়ে উঠে। ইংল্যান্ডের লর্ডস টেস্ট জয়ের স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয় প্রায় সেখানেই। তাতে শেষ ৬০ ওভারে টিকে থেকে টেস্ট ড্র করার বিকল্প ছিল না স্বাগতিকদের। শেষ পর্যন্ত সেটিও করে দেখাতে পারেনি জো রুটের দল। মাত্র ৯৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যায় ইংল্যান্ড। শুধু ছিটকেই যায় না, শেষ পর্যন্ত  হেরেই যায় তাঁরা। যদিও ইংলিশদের ড্র করার স্বপ্ন জিইয়ে রেখেছিলেন জস বাটলার।

অলিভার রবিনসনের সঙ্গে ৭৬ বলের জুটি গড়েন তিনি। তবে মোহাম্মদ সিরাজের বাইরের বল খেলতে গিয়ে ইংল্যান্ডের ডুবন্ত জাহাজকে আরও খানিকটা ডুবিয়ে ফেরেন বাটলার। মার্ক উড কিংবা জেমস অ্যান্ডারসন দাঁড়াতে না পারায় দিনের ৮.১ ওভার বাকি থাকতেই ১২০ রানে অল আউট হয় ইংল্যান্ড। বুমরাহ ও শামি মিলে যে রোমাঞ্চের শুরু করেছিলেন শেষটায় দারুণ এক থ্রিলারে শেষ করেন সিরাজ। পঞ্চম দিনের রোমাঞ্চের আগে কোণঠাসা হয়ে থাকা ভারত শেষ পর্যন্ত ১৫১ রানের জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০তে।

লর্ডস টেস্ট শেষ হতে তখনও দিনের ৬০ ওভার বাকি, জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ২৭২ রান। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম ওভারেই নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন ররি বার্নস। বুমরাহর লেগ সাইডের বল সিরাজের হাতে ক্যাচ তুলে নিয়ে ডাক মেরে সাজঘরে ফেরেন তিনি। চলতি বছর টেস্টে ১২ ইনিংস খেলা বার্নসের এটি পঞ্চম ডাক।

টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার ডমিনিক সিবলিও। পরের ওভারে শামির লেগ কাটার বুঝতে না পেরে পান্তের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। বার্নসের মতো তিনিও ফিরেছেন ডাক মেরে। পরপর দুই ওভারে ২ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন জো রুট ও হাসিব হামিদ। প্রথম ইনিংসে গোল্ডেন ডাক মারলেও এবার দলের বিপর্যয়ে ছিলেন খানিকটা সাবলীল।

যদিও ইংলিশদের বিপর্যয়ের দিনে তাঁকে বড় ইনিংস খেলতে দেননি ইশান্ত শর্মা। দারুণ এক ডেলিভারিতে হাসিবকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন অভিজ্ঞ এই পেসার। অন ফিল্ড আম্পায়ার আউট দিলেও ততক্ষণাৎ রিভিউ নেন হাসিব। তবে সেটি কাজে আসেনি তাঁর। আম্পায়ার্স কলের গ্যাড়াকলে পড়ে সাজঘরে ফিরতে হয় ৯ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে।

জনি বেয়ারস্টোও ফিরেছেন ব্যর্থতার পাল্লা ভারি করেই। হাসিবের মতো করে বেয়ারস্টোকেও লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন ইশান্ত। টিকে থাকতে রিভিউয়ের সহায়তা নিয়েছিলেন বেয়ারস্টো। তবে তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের। জো রুট থিতু হয়েও দলকে বিপদে ফেলে সাজঘরে ফেরেন। বুমরাহর ফুলার গুড লেন্থ বলে এজ হয়ে আউট হন ইংল্যান্ডের এই অধিনায়ক।

প্রথম ইনিংসে ১৮০ রানে অপরাজিত থাকা রুট ৩৩ রান করে ফিরলে উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা ভারতের সমর্থকরা। প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে থেকে রুটের ক্যাচ নিয়েই ভো দৌঁড় দেন কোহলি। তাতে খানিকটা ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় স্বাগতিকরা। বেশ কয়েকবার আউট হওয়া থেকে বেঁচে গেলেও শেষ পর্যন্ত মঈন আলিকে ফেরান সিরাজ। রুটের মতো ১৩ রান করা মঈনেরও ক্যাচ নেন প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা কোহলি।

মঈন আউট হওয়ার পরের বলেই সাজঘরে ফেরেন স্যাম কারান। সিরাজের বলে কোহলি হাতে ক্যাচ দিয়ে ইংল্যান্ডের ডুবন্ত জাহাজকে আরও খানিকটা ডুবিয়ে দিয়ে আসেন গোল্ডেন ডাক মারা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। এরপর অবশ্য খানিকটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন বাটলার ও রবিনসন। এই দুজনের ৭৬ বলে জুটি ভাঙেন বুমরাহ। দারুণ এক স্লোয়ারে ৯ রান করা রবিনসনকে ফিরিয়ে ৩০ রানের জুটি ভাঙেন তিনি।

পরের ওভারে ইশান্তর পরিবর্তে সিরাজকে বোলিংয়ে আনেন কোহলি। বোলিংয়ে এসেই অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেয়ার পাশাপাশি ভারতকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান ডানহাতি এই পেসার। রবিনসনের বিদায়ের পর নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন ইংল্যান্ডের জয়ের প্রদীপ হয়ে জ্বলতে থাকা বাটলার।

সিরাজের শর্ট অব লেন্থ বলে আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে পান্তের হাতে কট বিহাইন্ড হন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ২৫ রান করে বাটলার ফিরলে লর্ডস টেস্ট ড্র করার স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয় ইংলিশদের। সিরাজের ওই ওভারের পঞ্চম বলে জেমস অ্যান্ডারসন বোল্ড হয়ে ফিরলে ১৫১ রানের জয়োল্লাসে মাতে ভারত। ​

এর আগে ৬ উইকেটে ১৮১ রান নিয়ে পঞ্চম দিনের ব্যাটিং শুরু করে ভারত। লর্ডস টেস্টের চতুর্থ দিন শেষেই খানিকটা কোণঠাসা ছিল সফরকারীরা। সেটি আরও খানিকটা জোরালো হয়েছে দিনের শুরুতেই ঋষভ পান্তের বিদায়ে। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসের ভুলের পুনরাবৃত্তি করলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।

রবিসনের লেন্থ বল ডিফেন্স করতে গিয়ে বাটলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। খানিকটা আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে আগের দিনের সঙ্গে মাত্র ৮ রান যোগ করে সাজঘরে ফেরেন পান্ত। ২২ রানের ইনিংস খেলতে মাত্র একটি চার মেরেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। পান্তের বিদায়ে ভারত আরও খানিকটা কোনঠাসা হয়ে পড়লে সেটা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন শামি ও ইশান্ত।

দ্রুত রান তুলতে গিয়ে রবিনসনের স্লোয়ার বলে বোকাবনে যান ইশান্ত। ডানহাতি এই পেসারের দারুণ এক স্লোয়ারে ২ চারের সাহায্যে ১৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। দিনের প্রথম সেশনেই অল আউট হওয়ার শঙ্কায় থাকা ভারতকে লড়াই করার মতো দারুণ এত পূঁজি এনে দেন শামি ও বুমরাহ। তাঁদের জুটি থেকে এসেছে ৮৯ রান। নবম উইকেট জুটিতে ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের যা সর্বোচ্চ।

যেখানে ইংল্যান্ডের বাঘা বাঘা বোলারদের বিপক্ষে দারুণ ব্যাটিং করে রান তুলেছেন ভারতের এই দুই টেলএন্ডার। মঈনকে ছক্কা মেরে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন শামি। তাঁকে দারুণভাবে সঙ্গ দেয়া বুমরাহ অপরাজিত ছিলেন ৩৪ রান করে। দিনের দ্বিতীয় সেশনে খানিকটা ব্যাটিং করে ৮ উইকেটে ২৯৮ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। তাতে লর্ডস টেস্ট জিততে ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৭২ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

ভারত (প্রথম ইনিংস)- ৩৬৪/১০ (ওভার ১২৬.১) (রাহুল ১২৯, রোহিত ৮৩, কোহলি ৪২, জাদেজা ৪০, অ্যান্ডারসন ৫/৬২)

ইংল্যান্ড (প্রথম ইনিংস)- ৩৯১/১০ (ওভার ১২৮) (রুট ১৮০*, বেয়ারস্টো ৫৭, বার্নস ৪৯, সিরাজ ৪/৯৪)

ভারত (দ্বিতীয় ইনিংস)- ২৯৮/৮ (ডিক্লে, ওভার ১০৯.৩) (রাহানে ৬১, শামি ৫৬*, পূজারা ৪৫, উড ৩/৫১)

ইংল্যান্ড (দ্বিতীয় ইনিংস)- ১২০/১০ ( ওভার ৫১.৫) (রুট ৩৩, বাটলার ২৫, সিরাজ ৪/৩২)

ফলাফল- ভারত ১৫১ রানে জয়ী এবং সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে