জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ সিরিজ

ফর্মে ফিরেই বাংলাদেশকে সিরিজ জেতালেন সাকিব

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 13:04 রবিবার, 18 জুলাই, 2021

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

৭৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে বাংলাদেশকে একাই টেনে তুলেন সাকিব আল হাসান। ম্যাচ ও সিরিজ জিততে শেষ দুই ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১২ রান। এদিকে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে সাকিবের প্রয়োজন ছিল ১০ রান। কিন্তু ৪৯তম ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৬ রান নিলে আর টেন্ডাই চাতারা একটি ওয়াইড দিলে ভেস্তে যায় সাকিবের সেঞ্চুরির স্বপ্ন।

চাতারার ওভারে ৯ রান তুলে নিলে বাংলাদেশ জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। পরের ওভারে ব্লেসিং মুজারাবানির প্রথম বলে চার মেরে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন সাকিব। যদিও ৯৬ রানে অপরাজিত থেকে সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপে নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। ৩ উইকেটের জয়ে এক যুগ পর জিম্বাবুয়ের মাটিতে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা।

জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল মাত্র ২৪১। রান রেটের চাপ খুব বেশি ছিল না সফরকারীদের জন্য। যে কারণে সাবধানী শুরু করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। দ্বিতীয় ম্যাচ শুরুর আগেরদিন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক জানিয়েছিলেন, দলের জন্য বড় ইনিংস খেলতে চান। সেই লক্ষ্যে শুরুটাও ভালো করেছিলেন তিনি।

যদিও থিতু হয়েও বড় ইনিংস বড় খেলতে পারেননি তামিম। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দাঁড়িয়ে থাকা সিকান্দার রাজার দুর্দান্ত এক ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন বাঁহাতি এই ওপেনার। প্রথম ম্যাচে শূন্য রান করা তামিম এদিন ফিরেছেন ৩৪ বলে ২০ রান করে। ব্যক্তিগত ১৩ রানের ব্রেন্ডন টেলরের হাতে জীবন পেয়েও বড় ইনিংস খেলতে না পারার আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে।

তামিমের পথে হেঁটেছেন প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়া লিটন। থিতু হওয়ার পরও এদিন ইনিংস বড় করতে পারেননি। রিচার্ড এনগারাভার বলে পুল করতে গিয়ে মিড অনে দাঁড়িয়ে থাকা টেলরের হাতে ক্যাচ দেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। তাতে সমাপ্তি ঘটে তাঁর ৩৩ বলে ২১ রানের ইনিংসের।

বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে আবারও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। প্রথম ম্যাচে থিতু হয়েও ১৯ রান করে ফিরেছিলেন তিনি যে কারণে এদিন বড় ইনিংস খেলার বিকল্প ছিল না তাঁর। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চু্রি তুলে নেয়ার পর থেকেই ব্যাট হাতে ব্যর্থ মিঠুন।

এদিন জ্বলে ওঠার বদলে আবারও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। লুক জংওয়ের বলে ওয়েসলে মাধেভেরের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে ৩ বলে ২ রান করে সাজঘরে ফেরেন মিঠুন। এরপর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও ব্যর্থ হলে ৭৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। যদিও নিজেদের ভুলে সাজঘরে ফিরতে হয় মোসাদ্দেককে।

এনাগারাভার বলে লেগ সাইডে খেলতে চাইলেও সুবিধা করতে পারেননি। রেজিস চাকাভা বল ধরতে না পারায় রানের জন্য দৌঁড় দেন মোসাদ্দেক। তাতে সাকিব সাড়া দিলে দুজনই প্রান্ত বদলের জন্য দৌঁড় দেন। কিন্তু সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় রান আউটে ফিরতে হয় মোসাদ্দেককে।

এই অলরাউন্ডারের বিদায়ের পর বাংলাদেশকে আশার আলো দেখিয়েছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিবের জুটি। খানিকটা জমে গিয়েছিল তাঁদের দুজনের জুটি। সেটাতে বাংলাদেশ খানিকটা বিপর্যয় সামলে ওঠে। কিন্তু জুটির রান পঞ্চাশ ছোঁয়ার পরই সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। উইকেটের পেছনে থাকা চাকাভার হাতে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন ৩৫ বলে ২৬ রান মাহমুদউল্লাহ।

বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাট হাতে রান না পেলেও এদিন ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিলে অবশ্য অন্য প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন সাকিব। তাতে ওয়ানডেতে চার ম্যাচ পর হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান সময়ের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। রাজার বলে চার মেরে ৫৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাকিব।

চলতি বছরের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন তিনি। এদিকে থিতু হতে পারেননি মেহেদি হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন ধ্রুবও। বিপদের সময় ঝুঁকি নিয়ে ওয়েসলে মাধেভেরের বলে তুলে মেরেছিলেন তিনি। তবে ঠিকঠাক মতো টাইমিং না হওয়ায় ডিয়ন মায়ার্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় ১৫ বলে ৬ রান করা মিরাজকে।

এক-দুই রান করে নিয়ে সাকিবের সঙ্গে জুটি জমানোর চেষ্টা করেছিলেন আফিফ। তবে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুলের মাশুল হিসেবে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসতে হয় তাঁকে। রাজার বলে বেড়িয়ে এসে খেলতে গিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে এই অলরাউন্ডারকে। আফিফ বলের লাইন মিস করলেও উইকেট ভাঙতে ভুল করেননি চাকাভা। তাতে ২৩ বলে ১৫ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় তাঁকে।

এরপর সাইফউদ্দিনকে নিয়ে বাকি কাজটা সারেন সাকিব। এই দুজনের অনবদ্য ৬৯ রানের জুটিতে ৫ বল বাকি থাকতেই জয় পায় টাইগাররা। ৯৬ রানে অপরাজিত থাকা সাকিবকে দারুণভাবে সঙ্গ দেয়া সাইফউদ্দিন করেছেন ৩৪ বলে অপরাজিত ২৮ রান। জিম্বাবুয়ের হয়ে জংওয়ে দুটি উইকেট পেয়েছেন।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪০ রান সংগ্রহ করে করে জিম্বাবুয়ে। স্বাগতিকদের হয়ে মাধেভেরে ৫৪, টেলর ৪৬, মায়ার্স ৩৪ ও রাজা করেছেন ৩০ রান। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট পেয়েছেন শরিফুল ইসলাম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

জিম্বাবুয়ে: ২৪০/৯ (৫০ ওভার) (মাধেভেরে ৫৬, টেলর ৪৬, চাকাভা ১৬, মারুমানি ১৩, মেয়ার্স ৩৪, রাজা ৩০; শরিফুল ৪/৫৪ সাকিব ২/৪২)

বাংলাদেশ: ২৪২/৭ (ওভার ৪৯.১) (তামিম ২০, লিটন ২১, সাকিব ৯৬*, মাহমুদউল্লাহ ২৬, আফিফ ১৫, সাইফউদ্দিন ২৮*)