জিম্বাবুয়ে - বাংলাদেশ সিরিজ

বাংলাদেশকে অপেক্ষায় রাখলো জিম্বাবুয়ে

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 14:35 শনিবার, 10 জুলাই, 2021

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

ব্যাটসম্যানরা উইকেট থেকে বাড়তি সুবিধা পাওয়ায় হারারে টেস্ট পঞ্চম দিনে যাবে সেটা খানিকটা অনুমেয়ই ছিল। হারারে টেস্টের শেষ দিনে বাড়তি রোমাঞ্চের জন্য বড় উপঢৌকন হতে পারতেন ব্রেন্ডন টেলর। চতুর্থ দিনের তৃতীয় সেশনে তাঁর ব্যাটিং অন্তত শেষ দিনে সেই বাড়তি রোমাঞ্চেরই আভাস দিচ্ছিলো। তবে সেটা ভেস্তে গেছে জিম্বাবুয়ের অধিনায়কের বিদায়ে। একেবারে শেষ বিকেলে তাকুদজাওয়ানাশে কাইতানো বিদায় নিলে রোমাঞ্চের আভাসটা আরও খানিকটা রঙ হারায়।

৩ উইকেটে ১৪০ রান করে চতুর্থ দিন শেষ করে স্বাগতিকরা। তাতে হারারে টেস্ট জিততে শেষ দিনে রেকর্ড ৩৩৭ রান করতে হবে জিম্বাবুয়েকে। কারণ এই মাঠে এত বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার রেকর্ড নেই কারও। এর আগে ১৯৯৮ সালে সর্বোচ্চ ১৯২ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতেছিল পাকিস্তান। সিরিজের একমাত্র টেস্টটি ড্র করতে হলে পুরো দিন ব্যাট করতে হবে স্বাগতিকদের। এদিকে সারাদিনে জিম্বাবুয়ের সাত ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরাতে পারলেই টেস্ট সিরিজ জিতে নেবে বাংলাদেশ।

জয়ের জন্য ৪৭৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই মিল্টন শুম্বাকে হারায় জিম্বাবুয়ে। দলীয় ১৫ রানের সময় শুম্বাকে ইয়াসির আলি রাব্বির হাতে ক্যাচ বানিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন আহেমদ।  ২ চারের সাহায্যে ১৯ বলে ১১ রান করে ফিরতে হয়েছিল শুম্বাকে। এরপর ওপেনার কাইতানোর সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়েন তিনে নামা টেলর। 

ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিলেন জিম্বাবুয়ের এই অধিনায়ক। ১০টি চারের সাহায্যে মাত্র ৩৩ বলেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। এরপর খানিকটা দেখেশুনে খেললেও ঠিকই দ্রুত রান তুলেছেন। আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে দারুণ এক রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছিলো টেলরকে। ৭৩ বলে ৯২ রান করায় জিম্বাবুয়ের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ার সুযোগ ছিল তাঁর হাতে। 

ছাড়িয়ে যেতে পারতেন ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৬ বলে শন উইলিয়ামসের করা দ্রুততম সেঞ্চুরিটিকে। তবে সেটা ভেস্তে গেছে মিরাজের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে তাঁরই হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরলে। ৯২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলার দিনে ১৬টি চার মেরেছেন টেলর। টেলরের বিদায়ে ভাঙে কাইতানোর সঙ্গে ৯৫  রানের জুটি। যেখানে বেশিরভাগ রানই করেছেন টেলর।

৯৫ রানের জুটির মাঝে ৯২ রান এসেছে জিম্বাবুয়ের এই অধিনায়কের ব্যাট থেকে। এই সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন তিনি। এর আগে প্রথম ইনিংসেও ৮১ রান করা টেলরকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেছেন মিরাজ। শুরু থেকে ধীরগতির ব্যাটিং করলেও শেষ বিকেলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরতে হয় কাইতানোকে।  ১০২ বলে ৭ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরান সাকিব। 

এদিকে চলতি বছরের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে হাফ সেঞ্চুরি ‍তুুলে নিলেও ইনজুরির কারণে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে খেলা হয়নি সাদমানের। এপ্রিল-মে’তে শ্রীলঙ্কা সফরের দলে থাকলেও একাদশে সুযোগ পাওয়া হয়নি তাঁর। তবে তামিম ইকবালের ইনজুরিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে কপাল খুলে বাঁহাতি এই ওপেনারের। নিজের ফেরার টেস্টের প্রথম ইনিংসে সুবিধা করতে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরেন তিনি।

নিজের জায়গা পোক্ত করার সুযোগ পেয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান সাদমান। এদিকে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছিলেন শান্ত। শ্রীলঙ্কা সফরে ১৬৩ রানের ইনিংস খেলে ব্যর্থতার খোলস থেকে বেড়িয়ে আসার আভাস দিয়েছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তবে সেই ইনিংসের পরও নিজের ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেননি।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসেও হতাশ করেছিলেন তিনি। তবে সাদমানের সঙ্গে রেকর্ড ১৯৬ রানের জুটি গড়ার সঙ্গে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে একাদশে নিজের জায়গা ধরে রাখার কাজটা সারলেন শান্ত। এই দুজনের সেঞ্চুরিতে ১ উইকেট ২৮৪ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। তাতে ম্যাচ জিততে জিম্বাবুয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৭৭ রান।

এর আগে ১ উইকেটে ৪৫ রান নিয়ে চতুর্থ দিন ব্যাটিং শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাদমান ও সাইফ হাসান। তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলের মতো এদিনও নির্ভতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা দুজন। উইকেট থেকে বাড়তি সুবিধা না পাওয়ায় জিম্বাবুয়ের বোলাররা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সেভাবে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি। পরীক্ষায় ফেলতে না পারলেও দিনের প্রথম সেশনে ঠিকই সাইফের উইকেট তুলে নেয় স্বাগতিকরা।

২২ রানে অপরাজিত থেকে চতুর্থদিন ব্যাটিং শুরু করা সাইফ এদিন সাজঘরে ফিরেছেন ৯৫ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে। রিচার্ড এনগারাভার লেন্থে ফেলা আউট সাউড অফ স্টাম্পের বল কাট করতে গিয়ে গালিতে ডিয়ন মায়ার্সের হাতে ক্যাচ আউট হয়েছেন তিনি। ৪৩ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি খেলতে ৬টি চার মেরেছেন ডানহাতি এই ওপেনার।

সাইফ বিদায় নিলেও সাদমান ও শান্তর জুটিতে প্রথম সেশনে দাপট দেখায় বাংলাদেশ। যেখানে মাত্র একটি উইকেট হারিয়ে ৩২ ওভারে ১২৪ রান তোলে সফরকারীরা। মধ্যাহৃ বিরতিতে যাওয়ার আগে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান সাদমান। বাঁহাতি এই ওপেনার হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন ১০১ বলে। এদিকে মধ্যাহৃ বিরতি থেকে ফিরে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া শান্ত। 

হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিতে ৬০ বল মোকাবেলা করতে হয়েছে তাঁকে। হাফ সেঞ্চুরির পর দুজনই খানিকটা দ্রুতগতিতে রান তুলতে থাকেন। মিল্টন শুম্বার আগের বলে মিড অফ দিয়ে চার মারার পরের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ফ্লিক করেন সাদমান। তাতে ‍দৌঁড়ে দুই রান নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি।  ১০১ বলে হাফ সেঞ্চুরি পেলেও পরের ৫০ রান করতে লেগেছে ৮০ বল।

৫৫ রানে অবশ্য মায়ার্সের হাতে জীবন পেয়েছিলেন সাদমান। তবে সেটি লুফে নিতে পারেননি মায়ার্স। শান্ত আরও খানিকটা দ্রুত সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কায় সেঞ্চুরি পাওয়া শান্ত খেলেছেন ১০৯ বল। যেখানে হাফ সেঞ্চুরির পরের ৫০ করতে লেগেছে ৪৯ বল। যদিও এর মাঝে একবার জীবন পেয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। 

ব্যক্তিগত ৭০ রানের শুম্বার বলে প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা টেলরের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন তিনি। যদিও সেটা লুফে নিতে পারেননি জিম্বাবুয়ের এই অধিনায়ক। দুজনই সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার খানিকবাদে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। তাতে ১১৫ ও শান্ত অপরাজিত থাকেন ১১৭ রানে। জিম্বাবুয়ের হয়ে একমাত্র উইকেটটি নিয়েছেন এনগারাভা।

এদিকে বাংলাদেশের হয়ে জুটির রেকর্ড স্পর্শ করেছেন সাদমান ও শান্ত। তাঁদের দুজনের ১৯৬ রানের জুটিতে ছাড়িয়ে গেছেন জাভেদ ওমর বেলিম ও হাবিবুল বাশার সুমনকে। ২০০৩ সালে পেশোয়ারে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে ১৬৭ রানের জুটি গড়েছিলেন তাঁরা। দ্বিতীয় উইকেটে যা কিনা প্রায় ১৭ বছরে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি ছিল। আর সেটিকেই ছাড়িয়ে গেছেন সাদমান ও শান্ত।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস): ৪৬৮/১০ (ওভার ১২৬) ( মুমিনুল ৭০, লিটন ৯৫, মাহমুদউল্লাহ ১৫০, তাসকিন ৭৫, মুজারাবানি ৪/৯৪)

জিম্বাবুয়ে (প্রথম ইনিংস): ২৭৬/১০ (১০৭ ওভার) (কাইতানো ৮৭, শুম্বা ৪১, টেলর ৮১, মেয়ার্স ২৭; মিরাজ ৫/৮২, সাকিব ৪/৮২, তাসকিন ১/৪৬)

বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস): ২৮৪/১ (৬৭.৪ ওভার) (সাদমান ১১৫*, সাইফ ৪৩, শান্ত ১১৭*)

জিম্বাবুয়ে (দ্বিতীয় ইনিংস): ১৪০/৩ (৪০ ওভার) (শুম্বা ১১, টেইলর ৯২, মায়ার্স ১৮*, তাসকিন ১/২৩, মিরাজ ১/৪৫, সাকিব ১/৩৯)