জিম্বাবুয়ে - বাংলাদেশ সিরিজ

সাকিব-মিরাজের ঘূর্ণিতে হারারে টেস্টে চালকের আসনে বাংলাদেশ

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 15:00 শুক্রবার, 09 জুলাই, 2021

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

সকালের সূর্য্য নাকি পুরো দিনের আভাস দেয়। তেমনটা হলে হারারেতে হতাশাময় তৃতীয় দিন কাটানোর কথা ছিল বাংলাদেশের। সেটি না হয়ে উল্টো বোলিংয়ে দুর্দান্ত এক দিন পার করেছে বাংলাদেশ। দিনের প্রথম সেশনে উইকেট থেকে তেমন সহায়তা না পেলেও বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে উইকেট থেকে ফায়দা নিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ। শেষ বিকেলে জিম্বাবুয়েকে একেবারে চেপে ধরেন তাঁরা দুজন।

তাতে সাকিব ও মিরাজের ঘূর্ণিতে মাত্র ২৭৬ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ফলে প্রথম ইনিংসে ১৯২ রানের বড় লিড পায় বাংলাদেশ। সফরকারীদের হয়ে মিরাজ পাঁচটি ও সাকিব চারটি ‍উইকেট নিয়ছেন। এরপর ১৯২ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে সাবলীল ব্যাটিং করেন সাদমান ইসলাম ও সাইফ হাসান। তাতে ১৭ ওভারে কোন ‍উইকেট না হারিয়ে ৪৫ রান তোলে তাঁরা। ফলে ২৩৭ রানের লিড নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করার সঙ্গে হারারে টেস্টের নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ।

এর আগে ১ উইকেটে ১১৪ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের সকালে ব্যাটিংয়ে নামেন জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটসম্যান তাকুদজোয়ানাশে কাইতানো ও টেলর। দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলের মতো এদিনও দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন তাঁরা দুজন। এমনিতেই উইকেটে বোলারদের জন্য তেমন কোন সহায়তা ছিল না। সেই সঙ্গে দিনের প্রথম সেশনে তেমন ধারালো কিংবা বৈচিত্রপূর্ণ বোলিং করতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা।

তাতে দিনের প্রথম সেশনে দাপট দেখায় জিম্বাবুয়ে। যেখানে মাত্র এক উইকেট হারিয়ে ৯৫ রান তোলে স্বাগতিকরা। যদিও স্বাগতিকদের বড় আক্ষেপ দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা ব্রেন্ডন টেলরকে হারানো। বাংলাদেশের বোলারদের দারুণভাবে সামলে দ্রুতগতিতে রান তুলছিলেন জিম্বাবুয়ের এই অধিনায়ক।

যদিও তিনি উইকেট বিলিয়ে দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। মিরাজের বলে স্লগ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে থাকা ইয়াসির আলি রাব্বির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৯২ বলে ৮১ রান করা টেলর। ইনিংসটি খেলতে ১২টি চার ও একটি ছক্কা মেরেছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। 

প্রথম সেশনে হতাশায় কাটলেও দ্বিতীয় সেশনেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। যদিও দ্বিতীয় সেশনের শুরুটা দারুণ করেছিলেন তাইকানো ও অভিষিক্ত ডিয়ন মায়ার্স। শুরু থেকেই ইতিবাচক ব্যাটিং করতে থাকেন মায়ার্স। যদিও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। সাকিবের বলে সুইপ করতে গিয়ে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে উইকেট ছুঁড়ে আসেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান। সমান সংখ্যক একটি করে চার ও ছক্কায় ২১ রান করেছেন মায়ার্স। 

এরপর সাকিবের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে শূন্য রানেই সাজঘরে ফেরেন টিমাইসেন মারুমা। দারুণ এক ডেলিভারিতে রয় কাইয়াকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। তাতে দ্বিতীয় সেশনে ২৯ ওভারে মাত্র ৩৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। তখনও বাংলাদেশের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ১৫৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়া কাইতানো।

সাতে নেমে তাঁকে সঙ্গ দিতে থাকেন রেজিস চাকাভা। ১৭ ওভার উইকেটে থাকলেও সেই জুটিতে তাঁরা খুব বেশি রান যোগ করতে পারেননি। কাইতানোর বিদায়ে ভাঙে তাঁদের দুজনের ৩২ রানের জুটি। ৩১১ বলে ৮৭ রানের চোয়ালবদ্ধ এক ইনিংস খেলে বিদায় নিলে দারুণ এক রেকর্ড হাতছাড়া করেন তিনি। ওপেনিং ব্যাট করতে নেমে ৮৭ রানের ইনিংসে গ্রান্ট ফ্লাওয়ারকে ছাড়িয়ে গেলেও হাতছাড়া করেছেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও ডেভিড হটনকে স্পর্শ করার সুযোগ। 

মাত্র ১৩টি রান করতে পারলেই মাসাকাদজা ও হটনের পর জিম্বাবুয়ের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়তে পারতেন কাইতানো। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর জিম্বাবুয়ের লোয়ার অর্ডারে একেবারে ধস নামে। সর্বশেষ ১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৭৬ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। 

এদিন ব্লেসিং মুজারাবানিকে বোল্ড আউট করে ৫ উইকেট স্পর্শ করেন মিরাজ। যা তাঁর ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো পাঁচ উইকেট। তাতে স্বদেশী তাইজুল ইসলামকে ছুঁয়েছেন এই অফ স্পিনার। আটবার পাঁচ উইকেট নিতে তাইজুলের ৩৩ ম্যাচ লাগলেও মিরাজ ছুঁয়েছেন ২৭ টেস্টে।

 এদিকে ১৯২ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যর্থ হলেও এদিন দুই ওপেনার ছিলেন খানিকটা সাবলীল। জিম্বাবুয়ের পেসাররাও সেভাবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে পারেনি। তাতে কোন উইকেট না হারিয়েই ৪৫ রান তোলে তৃতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ। ২২ রানে অপরাজিত থাকা সাদমানের সঙ্গে চতুর্থ সকালে ব্যাটিংয়ে নামবেন ২০ রানে অপরাজিত থাকা সাইফ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস): ৪৬৮/১০ (ওভার ১২৬) ( মুমিনুল ৭০, লিটন ৯৫, মাহমুদউল্লাহ ১৫০, তাসকিন ৭৫, মুজারাবানি ৪/৯৪)

জিম্বাবুয়ে (প্রথম ইনিংস): ২৭৬/১০ (১০৭ ওভার) (কাইতানো ৮৭, শুম্বা ৪১, টেলর ৮১, মেয়ার্স ২৭; মিরাজ ৫/৮২, সাকিব ৪/৮২, তাসকিন ১/৪৬)

বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস): ৪৫/০ (ওভার ১৭) (সাদমান ২২*, সাইফ ২০*)