টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা নিউজিল্যান্ডের

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 19:51 বুধবার, 23 জুন, 2021

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল জিততে তখনও নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ৩ রান। ততক্ষণে নিউজিল্যান্ডের ড্রেসিং রুমে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। হয়তো শান্তির দেশটাতেও ততক্ষণে রঙ কিংবা শ্যাম্পেন নিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠার প্রহর গুনছিল সমর্থক কিংবা দেশটির আপমোর জনগণ। ঠিক সময় সেই সময় মোহাম্মদ শামির বলে স্কয়ার লেগে দিয়ে চার মেরে পরিমিত উল্লাসে রস টেলর।

অপর প্রান্তে থাকা কেন উইলিয়ামসনও খানিকটা এগিয়ে এসে টেলরকে জড়িয়ে ধরলেও বাঁধনহারা উল্লাসে মেতে ওঠতে দেখা গেল না। তবে ততক্ষণে আনন্দে উল্লাসে মেতে ওঠলো কিউইদের ড্রেসিং রুম। নিজেদের জড়িয়ে ধরে আত্মতৃপ্তি নেয়ার মিছিলে অ্যাজাজ প্যাটেল-ট্রেন্ট বোল্টরা। নিজেদের প্রথম শিরোপা জয় উদযাপনে ড্রেসিং রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আনন্দে আত্মহারা ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামা বিজে ওয়াটলিং, নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের নতুন তারকা ডেভন কনওয়ে-কাইল জেমিসনরা।

বিশ্বকাপ ফাইনাল, হার এবং নিউজিল্যান্ড। আইসিসির সর্বশেষ দুই ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে শব্দগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বটার একেবারে সূদৃঢ় করেছিল কিউইরা। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে বাগে পেয়েও শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি নিউজিল্যান্ডের। অস্ট্রেলিয়ার পর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের ফাইনালে ডাবল সুপার ওভারে হেরে আরও একটি হৃদয় ভাঙার গল্প লিখেছিল কিউইরা।

তাতে তিন তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনালে (১৯৭৫, ২০১৫, ২০১৯) ওঠেও শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে না পারায় আক্ষেপে পুড়তে হয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে। অবশেষে কিউইদের দিকে মুখ তুলে তাকালেন ভাগ্য বিধাতা। আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ৮ উইকেটে হারিয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের চতুর্থ ফাইনালে এসে প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ পেল নিউজিল্যান্ড।

জয়ের জন্য ১৩৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে নিউজিল্যান্ড ৪৪ রানে ২ উইকেট হারালে শেষ বিকেলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে রোমাঞ্চ উঁকি দিচ্ছিলো। সেটা আরও জোরালো হয়েছিল রবিচন্দ্রন অশ্বিনের কল্যাণে। কেন উইলিয়ামসনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেছিলেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। আম্পায়ার আঙুল তুলে আউট দিলেও ততক্ষণাৎ রিভিউ নিয়ে বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন উইলিয়ামসন।

রিভিউয়ে দেখা যায় লেগ স্টাম্প মিস করে অশ্বিনের বলে। তাতে রক্ষা মেলে উইলিয়ামসনের আর স্বস্তি ফিরে নিউজিল্যান্ড শিবিরে। উইলিয়ামসনকে দারুণভাবে সঙ্গ দেয়া টেলরও অবশ্য বড় বাঁচা বেঁচেছেন। জসপ্রিত বুমরাহর বলে স্লিপে ক্যাচ উঠলেও সেটা লুফে নিতে পারেননি চেতেশ্বর পূজারা। তখনও ম্যাচ জিততে আরও ৫৪ রান দরকার ছিল নিউজিল্যান্ডের।

এরপর অবশ্য খুব বেশি সুবিধা করে উঠতে পারেননি শামি-ইশান্ত শর্মারা। তাতে উইলিয়ামসন-টেলরের ৯৬ রানের অনবদ্য জুটিতে ভারতকে ৮ উইকেটে হারায় নিউজিল্যান্ড। ফলে প্রথমবারের মতো আইসিসির কোন টুর্নামেন্টের শিরোপার স্বাদ পেল কিউইরা। উইলিয়ামসন অপরাজিত ছিলেন ৫২ রানে আর চার মেরে জেতানো টেলর অপরাজিত ছিলেন ৪৭ রানে।

এর আগে ১৩৯ রানের লক্ষ্যে নিয়ে খেলতে নেমে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি টম লাথাম ও কনওয়ে। থিতু হলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি লাথাম। বাঁহাতি এই ওপেনার ফিরেছেন ৯ রান করে। আরেক ওপেনার কনওয়ে ফেরেন ১৯ রানে। তাঁদের দুজনকেই সাজঘরে ফেরান অশ্বিন। এই দুজনের বিদায়ের পর আর কোন উইকেট হারাতে দেননি টেলর-উইলিয়ামসন। 

এর আগে ২ উইকেটে ৬৪ রান নিয়ে ষষ্ঠ দিনের ব্যাটিং শুরু করে ভারতের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পূজারা ও বিরাট কোহলি। কিন্তু তাঁদের দুজনের কেউই সুবিধা করতে পারেননি। এদিন মাত্র দলীয় ৭ রান যোগ করতেই সাজঘরে ফেরেন কোহলি।

কাইল জেমিসনের স্টাম্পের বাইরে বল খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক বিজে ওয়াটলিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটেন ২৯ বলে ১৩ রান করা ভারতের এই অধিনায়ক। প্রথম ইনিংসেও জেমিসনের বলে আউট হয়েছিলেন তিনি। যা কিনা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয়বারের মতো জেমিসনের শিকার হয়েছেন কোহলি।

পূজারাও ফিরেছেন জেমিসনের বলে। রস টেলরের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ৮০ বলে ১৫ রান করা পূজারাকে ফেরান ডানহাতি এই পেসার। পান্তের সঙ্গে জুটি গড়লেও আজিঙ্কা রাহানে ফিরেছেন মাত্র ১৫ রানে। বোল্টের বলে ওয়াটলিংয়ের হাতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয়েছে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকে। 

এরপর অবশ্য রবীন্দ্র জাদেজা ও পান্ত মিলে দারুণ এক জুটি গড়েন। সেই সময় খুব বেশি রান না তুললেও নিউজিল্যান্ডের পেসারদের সুবিধা করতে দেননি তাঁরা দুজন। ১৬ রান করে জাদেজা ফিরলে ভাঙে তাঁদের দুজনের ৩৩ রানের জুটি। জাদেজা ফেরার পর পান্তও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেননি। উইকেট ছেড়ে এসে মারতে গিয়ে বোল্টের বলে ক্যাচ আউট হয়েছেন পান্ত।

খানিকটা জায়গা দৌঁড়ে গিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে ৪১ রান করা পান্তকে সাজঘরে পাঠান হেনরি নিকোলস। এরপর আর কেউই সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি। শেষ দিকে মোহাম্মদ শামির ১০ বলে ১৩ রান কেবল ভারতের সংগ্রহ খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সাউদি চারটি, বোল্ট তিনটি ও জেমিসন নিয়েছেন দুটি উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত (প্রথম ইনিংস): ২১৭/১০ (ওভার ৯২.১) (কোহলি ৪৪, রোহিত ৩৪, রাহানে ৪৯, গিল ২৮, অশ্বিন ২২; জেমিসন ৫/৩১, ওয়াগন্যার ২/৪০, বোল্ট ২/৪৭)

নিউজিল্যান্ড (প্রথম ইনিংস): ২৪৯/১০ (ওভার ৯৯.২) (কনওয়ে ৫৪, লাথাম ৩০, উইলিয়ামসন ৪৯, সাউদি ৩০; শামি ৪/৭৬, ইশান্ত ৩/৪৮, অশ্বিন ২/২৮)

ভারত (দ্বিতীয় ইনিংস): ১৭০/১০ (ওভার ৭৩) (রোহিত ৩০, পান্ত ৪১, সাউদি ৪/৪৮, বোল্ট ৩/৩৯)

নিউজিল্যান্ড (দ্বিতীয় ইনিংস): ১৪০/২ (ওভার ৪৫.৫) (উইলিয়ামসন ৫২*, টেলর ৪৭*, কনওয়ে ১৯, অশ্বিন ২/১৭)