বাংলাদেশ ক্রিকেট

এখনও ঘোর কাটেনি রাজ্জাকের

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 14:55 শনিবার, 13 ফেব্রুয়ারি, 2021

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

জীবনের সঙ্গে যে নতুন অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে তা আব্দুর রাজ্জাক জানতেন আগেই। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতার। শনিবার বেলা ১২টায় শেষ হল সেটাও। মঞ্চে দাঁড়িয়ে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের হাত থেকে স্মারক নিয়ে মাইকের সামনে হয়ে গিয়ে হলেন আবেগ আপ্লুত। ঘোষণা আসলো আনুষ্ঠানিক অবসরের। বর্তমান থেকে সাবেক ক্রিকেটার বনে গেলেন রাজ্জাক। সঙ্গে যুক্ত হল নতুন পরিচয়, 'বিসিবির তৃতীয় নির্বাচক'। 

প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও হাবিবুল বাশারের সাথে তৃতীয় নির্বাচকের ভূমিকায় দেখা যাবে রাজ্জাককে। আজ (১৩ ফেব্রুয়ারি) ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবির) আয়োজনে আনুষ্ঠানিকভাবে খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টেনেছেন এই স্পিনার।

রাজ্জাকের সঙ্গে সবধরনের ক্রিকেটকে বিদায় বলেন শাহরিয়ার নাফিসও। তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টার সংলগ্ন এক নম্বর প্লাজায় রাজ্জাক-নাফিস দুজনের জন্য বিদায়ী অনুষ্ঠান আয়োজন করে বিসিবি। যেখানে তাদের সংবর্ধিত করে দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

খেলোয়াড়ি জীবনকে ইতি টানা রাজ্জাক অনুষ্ঠান শেষে কথা বলেন উপস্থিত গণমাধ্যমের সঙ্গে। যেখানে ক্রিকেট খেলাকে বিদায় বলা কঠিন ছিল উল্লেখ করে রাজ্জাক জানান এখনো আছেন ঘোরের মধ্যে। ৩৮ বছর বয়সি রাজ্জাক বলেন, 'গতকাল পর্যন্ত আমি বলতে পেরেছি আমি ক্রিকেট খেলোয়াড়, এখন থেকে বলতে হবে অন্যকিছু, যা আমার পেশা। হয়তো জিনিসটা সহজে বলতে পারছি তবে আমার জন্য এত সহজ না। ঘোরের মধ্যে আছি এখনও। ১৯৯৪ সাল থেকে ক্রিকেটের মধ্যে, তখন বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছি।'

'সেই জিনিসটাকে বিদায় বলা... খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। একটা সময় আসলে প্রত্যেক মানুষকেই এক কাজ থেকে অন্য ভূমিকায় যেতে হয়। তারপরও আবেগ বলে যেহেতু একটা কথা আছে আমার মাঝে সেটা খুব কঠিনভাবে কাজ করছে। খুব ভালোভাবে কিছু বলা, গুছিয়ে বলা আমার জন্য একটু কঠিন।'

রাজ্জাকের ক্রিকেট ক্যারিয়ার প্রায় দুই যুগের। যেখানে ছিল নানা উত্থান-পতন। তবে নিজের লম্বা ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পেছনে পরিবারের অবদান স্বীকার করেছেন বিশেষভাবে। তিনি বলেন, 'পরিবারকে সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ জানাই। এত কম বয়সে বিকেএসপিতে ভর্তি হতে চেয়েছি, তারা রাজি হয়েছে।'

'সাধারণত তার আগে খেলতে গেলে আমরা বকা খেতাম। যত খেলাই খেলেছি সবকিছুতে সাপোর্ট করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় জাতীয় দলে সুযোগ পেলাম। জাতীয় দলে সুযোগ পেলে তো পরিবারের আর কোনো আপত্তি থাকে না। প্রত্যেক সিদ্ধান্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলে নিতাম। আবার নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণেও কখনো আমাকে বাধা দেননি' আরও যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের ক্রিকেট আব্দুর রাজ্জাককে মনে রাখবে স্পিন কিংবদন্তী হিসেবেই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার আশেপাশেও নেই কোন বাংলাদেশি। সেই সঙ্গে দেশের হয়ে খেলেছেন ১৩ টেস্ট, ১৫৩ ওয়ানডে ও ৩৪ টি-টোয়েন্টি। যেখানে উইকেট যথাক্রমে ২৮, ২০৭ ও ৪৪ টি।

এতো বছরের ক্যারিয়ারের বেশ কিছু রেকর্ডেও নাম লিখিয়েছেন রাজ্জাক। বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি পাঁচ উইকেট, বাংলাদেশের প্রথম ও দ্রুততম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট, বিশ্বের দ্বিতীয় বাঁহাতি স্পিনার ও বাংলাদেশের প্রথম  স্পিনার হিসেবে ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক যার মধ্যে উল্লেখযগ্য।
 
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রাজ্জাকের পরিসংখ্যান আরও সমৃদ্ধ। ২০০১-০২ মৌসুমে অভিষেক হওয়া রাজ্জাকের ঝুলিতে ১৩৭ ম্যাচে ৬৩৪ উইকেট। যে পথে এই বাঁহাতি স্পিনার গড়েছেন বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ৫০০ ও ৬০০ প্রথম শ্রেণি উইকেট শিকারি বোলারের রেকর্ড।  রাজ্জাকই  প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি পাঁচ (ইনিংসে) ও ম্যাচে ১০ উইকেট শিকারি বোলার।

লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে এই বাঁহাতির শিকার ২৮০ ম্যাচে ৪১২ উইকেট। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটেও বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি পাঁচ উইকেট শিকারি বোলার রাজ্জাক। দেশের হয়ে সর্বশেষ খেলেছেন ২০১৮ সালে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে। তবে ঘরোয়া লিগে নিয়মিত ছিলেন করোনার কারণে স্থগিত হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও (ডিপিএলে)। মাঠে গড়ানো একমাত্র ম্যাচে খেলেছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে।

রাজ্জাকের অবসর এবং বোর্ডে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, 'আসলে কি বলব, এখানে আব্দুর রাজ্জাক রাজ ওর খেলা এতো দেখেছি, শাহরিয়ার নাফিসের খেলাও এতো দেখেছি । একটা সময় তো সবাইকে বিদায় নিতেই হবে। এটা চাকরি বলেন যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই হোক একটা সময় নিতেই হয় ।’

‘এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে তবে আমি বলব এক দিক দিয়ে তারা ভাগ্যবান । এই কারণে যে তারা ক্রিকেট খেলাটা ছেড়ে ক্রিকেটের সঙ্গেই আবার সম্পৃক্ত হয়েছে। একজন নির্বাচক হিসেবে আরেকজন ম্যানেজম্যান্টে। এটা আমি মনে করি তাঁদের জন্য একটা জিনিস এবং আমরা খুবই ভাগ্যবান, সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবান যে আমরাও ওদেরকে পেয়েছি। ওরা যে এটা করতে রাজী হয়েছে।'