আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট

মানসিকতা বদলে স্বপ্নের ফর্মে স্টার্লিং

মমিনুল ইসলাম

মমিনুল ইসলাম
প্রকাশের তারিখ: 20:56 বৃহস্পতিবার, 28 জানুয়ারি, 2021

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

ওয়ানডেতে সর্বশেষ ৮ ইনিংসের চারটিতেই সেঞ্চুরি, ৮২.২৮ গড়ে করেছেন ৫৭৬ রান। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে এই অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যানটি বিরাট কোহলি কিংবা স্টিভেন স্মিথের। যদিও ভাবনার সঙ্গে পরিসংখ্যানটির ফারাকটা অনেক। ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করা পল স্টার্লিং মূলত এমন পরিসংখ্যানের কারিগর।

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান তোলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবার উপরে তিনি। যেখানে পেছনে ফেলেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল-অ্যারন ফিঞ্চদের মতো ক্রিকেটারদের। ক্যারিয়ারে এমন দারুণ সময় ঠিক কবে পার করেছেন সেটা খুঁজতে হয়তো তাঁকে যেতে হতে পারে স্মৃতির পাতায়। তবে বর্তমানে তিনি যেটা করছেন সেটা মনে করতে খুব বেশি ভাবতে হবে না। পরিসংখ্যানের পাতাটা ঘেটে দেখারও প্রয়োজন হবে না।

ক্যারিয়ারে আর কখনও এতো ভালো সময় কাটাননি স্টার্লিং। ২০০৮ সালে আয়াল্যান্ডের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। প্রথম ৩২ ইনিংসে ৪২.৪৮ গড়ে রান করেছিলেন ৩০ বছর বয়সি এই ব্যাটসম্যান। সেই সময়ের মাঝে ৪টি সেঞ্চুরি করেছিলেন ডানহাতি এই আইরিশ ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ার যত দীর্ঘ হতে থাকে পারফররম্যান্সের গ্রাফটাও তত নিচের দিকে নামতে থাকে।

২০১১-১৭ সাল পর্যন্ত ৪০ ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। ক্যারিয়ারের শুরু দিকে চল্লিশের অধিক গড়ে রান তোলা এই ব্যাটসম্যানের গড় তখন নেমে এসেছিল ২৪.৮২ তে। সেই সময় সেঞ্চুরি করেছিলেন মাত্র একটি। তবে সব পরিসংখ্যান বদলে দিয়েছেন গেল কয়েক বছরে। সফলতাও পেয়েছেন আগের চেয়ে তুলনামূলক বেশি।

সর্বশেষ ৫০ ইনিংসে ৪৯.২ গড়ে রান তুলেছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। শুধু তাই নয়, এই সময়ে তাঁর সেঞ্চুরি রয়েছে সাতটি। এমন রাজসিক পরিবর্তনের পেছনে গল্পটা কেবলই মানসিকতার। নিজের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন এনেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সময়ের অন্যতম সেরা একজন ওপেনার হিসেবে।

একটা সময় ছিল স্টার্লিং উইকেটে আসবেন, কয়েকটি বাউন্ডারি মারবেন আর ২০-৩০ রান করে আউট হয়ে যাবেন। এমন আগ্রসী মনোভাব তাঁকে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানে রুপান্তর করলেও সফল হতে পারছিল না। যে কারণে একটা সময় এসে অনুতাপে ভুগছিলেন তিনি। এরপর থেকে এভাবে আউট না হয়ে উইকেটের থাকার দিকে মনোযোগ দেন ৩০ বছর বয়সি এই ক্রিকেটার। চিন্তা-ধারা পরিবর্তনের পর থেকেই সফলতার মুখ দেখছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।

এ প্রসঙ্গে স্টার্লিং বলেন, ‘তুমি যখন উড়িয়ে মারতে গিয়ে ৩০ রানে আউট হবে তখন বিরক্তিকর লাগবে। সেখান থেকে তুমি ভাবতে পারো আমার এরকম (উড়িয়ে মারা) ব্যাটিং ছেড়ে দেয়া উচিত। আমার মনে হয় আরও বেশি সময় ধরে ব্যাটিং করা উচিত। আমি ওয়ানডেতে ভালো ছন্দে শুরু করছিলাম। আমি সম্ভবত মাঝে কিছুটা সময় ছন্দহীন ছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় ফরম্যাট, যেখানে আমি সবসময় ব্যাটিং করতে পছন্দ করি। আমার কাছে বিষয়টি স্বাভাবিক। আমি চাইলে বেশি কিছু না ভেবে মাঠে যেতে পারি, বল খেলতে পারি এবং এমন একটা স্ট্রাইকরেটও ব্যাট করতে পারি সেটা ঠিকঠাক। ’

যদিও তাঁর জাতীয় দলে খেলা নিয়েই সংশয় ছিল। কারণ আয়ার‌ল্যান্ডের হয়ে খেলার জন্য ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্লাব মিডলসেক্সের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়েছিল এই আইরিশ ব্যাটসম্যানকে। ইংল্যান্ডের অদ্ভুত এক নিয়মে মিডলসেক্সের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক বাতিল করতে হয়েছিল তাঁকে।

ইংল্যান্ডের নিয়ম অনুযায়ী, কোলপাক চুক্তিতে কাউন্টি খেলার জন্য দেশের ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে হয়। সেটার বেড়াজালে পড়েছিলেনে স্টার্লিংও। তবে দেশের স্বার্থে ক্লাবকে না করে দিয়ে নিজের দেশকে বেছে নেন মিডলেসেক্সের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা এই ক্রিকেটার।

অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটারই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আয়ার‌ল্যান্ডেরও বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার কোলপাক চুক্তিতে দেশকে বিদায় বলেছেন। স্টার্লিং চুক্তি নবায়ন না করলেও আয়ারল্যান্ডের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান স্টুয়ার্ট পয়েন্টার ঠিকই ডারহামের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন।

ইংলিশ কাউন্টি ছেড়ে দেশের জার্সিতে আবারও ক্যারিয়ার শুরু করেন স্টার্লিং। এরপরের গল্পটা তাঁর জন্য রীতিমত রূপকথার মতো। দলের সঙ্গে যোগ দেয়ার পর থেকেই দারুণ সময় পার করছেন তিনি। গেল বছর ইংল্যান্ডকে হারানোর দিনে সেঞ্চুরি করে নায়ক বনে গিয়েছিলেন তিনি। সময়ের পালাক্রমে হয়ে উঠেছেন আইরিশ ক্রিকেটের রাজপুত্র।