|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
২০০৭ সালের ১৬ মার্চ, পোর্ট অব স্পেনে বিশ্বকাপের নবম আসরে ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে রীতিমত হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেবারই যে প্রথমবার ছিল এমনটা নয়। এর আগেও ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটা ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। তবে বিশ্বকাপের মতো এত বড় মঞ্চে শচিন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলির মতো ক্রিকেটারদের নিয়ে সাজানো দলকে হারানো তো চাট্টিখানি কথা নয়।
সেদিন পোর্ট অব স্পেনে নায়ক বনে গিয়েছিলেন পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম। বল হাতে মাশরাফি অবদান রাখার পর ভারতীয় বোলারদের ব্যাট হাতে শাসন করেছিলেন সেই সময়ের তিন তরুণ তামিম, সাকিব এবং মুশফিক। তবে সেই ম্যাচে আড়ালে থেকে ম্যাচ জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা।
স্পিনার বলতে বাঁহাতি স্পিনাররা। সেই সময় বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের দাপট না থাকলেও প্রভাব বিস্তার করেছিলেন বাঁহাতি স্পিনাররা। ভারত বধের ম্যাচে দলটির তারকা ক্রিকেটারদের মাঝে শচিন দ্রাবিড়, মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং সৌরভকে সাজঘরে পাঠিয়েছিলেন মোহাম্মদ রফিক এবং আব্দুর রাজ্জাক। সৌরভ, ধোনি এবং দ্রাবিড়কে নিজের ঝুঁলিতে নিয়েছিলেন রফিক। আর শচিন এবং যুবরাজ সিংকে ফিরিয়েছিলেন রাজ্জাক।
যদিও বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনারদের যুগটা শুরু হয়েছিল এনামুল হক মনিকে দিয়ে। এরপর একে এনামুল হক জুনিয়র, রফিক, এনামুল হক জুনিয়র, রাজ্জাক, সাকিবরা অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে। এরপর হালের মোশাররফ হোসেন রুবেল, সানজামুল ইসলাম, আরাফাত সানি, ইলিয়াস সানিরাও বেশ কিছুদিন খেলেছেন টাইগারদের হয়ে। তবে তাঁরা কেউই রাজ্জাক, সাকিব, রফিকদের মতো করে থিতু হতে পারেনি।
বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনারদের কতটা দাপট সেটা বোঝার জন্য আপনাকে একবার পরিসংখ্যান ঘাটতে হবে। ২০০০-২০ এই সময়টায় সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনাররা। এই সময়টায় বাংলাদেশের রফিক, সাকিব, রাজ্জাকরা নিয়েছেন ১ হাজার ৪০৫ উইকেট। এরপর ৯০৬ উইকেট নিয়ে দুইয়ে রয়েছে ভারত।
বিশ্ব ক্রিকেটে রফিকদের দাপট কতটা ছিল সেটা পুরোদস্তুর বোঝা যায় ড্যানিয়েল ভেটরির কথা থেকেই। যদিও সেই কথাগুলো তিনি বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বলেননি। সম্প্রতি ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েসবসাইট ক্রিকইনফোর সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনারদের নিয়ে রীতিমত দুঃস্বপ্ন দেখতো।
এ প্রসঙ্গে ভেটরি বলেন, ‘আমার মনে আছে আমাদের নিউজিল্যান্ডের সব ব্যাটসম্যানদের কাছে বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিন বোলাররা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। তাদের অনেক বাঁহাতি স্পিনার ছিল শুধু এই কারণেই নয়। তাদের ভালো মানের বোলারও ছিল। ২০০০ সালের দিকে রফিক ছিল আর এখন সাকিব।’
একটা সময় দাপট থাকলেও কালের বিবর্তনে কমতে শুরু করেছে বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনারদের সংখ্যা। একটা সময় ছিল এক ম্যাচে তিনজন বাঁহাতি স্পিনার খেলাতো বাংলাদেশ। যদিও সেই সুযোগটা বেশি দিন হয়ে ওঠেনি। তাঁর কারণটা ছিল রফিকের অবসর।
তিনি অবসর নেয়ার আগে সাকিব ও রাজ্জাকের সঙ্গে মাত্র ৯ মাস খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। যেখানে তাঁঁদের পারফরম্যান্সও চোখে পড়ার মতো। এই ৯ মাসে ২৫.৯৬ গড়ে তারা তিনজন নিয়েছিলেন ১০৩ উইকেট। যেখানে তাঁদের ইকোনোমি রেট ছিল মাত্র ৩.৮০।
ওই দিনগুলো মতো এরকম ত্রয়ী না মিললেও এখন বল হাতে দাপট দেখাচ্ছেন সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব। বাংলাদেশিদের মাঝে সবচেয়ে বেশি ৫৬২ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এছাড়া রাজ্জাক ২৭৯, রফিক ২০১, তাইজুল ১২৭ এবং বাকি সবাই মিলে নিয়েছেন ২৩৬ উইকেট।