বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ

মাশরাফি যখন বল করবে, জায়গা মতোই করবে: বাশার

সৈয়দ সামি

সৈয়দ সামি
প্রকাশের তারিখ: 19:13 বৃহস্পতিবার, 24 ডিসেম্বর, 2020

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

বিপিএলে এখনও শিরোপা জেতা হয়নি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। তবে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের শিরোপা জিতে কিছুটা হলেও আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহর মতো অনেক ক্রিকেটারের জন্যই আশীর্বাদ হয়ে এসেছে এই টুর্নামেন্ট। অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এই টুর্নামেন্টে নিজেদের হারানো ফর্ম খুঁজে পেয়েছেন। আবার অনেক তরুণ নিজেদের চিনিয়েছেন ভিন্ন ভাবে। তাদের এমন পারফরম্যান্স মুগ্ধ করেছে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক এবং বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশারকে। এই টুর্নামেন্ট নিয়ে তিনি বিস্তারিত বলেছেন একান্তে আলাপে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপটা কেমন দেখলেন? বেশ কয়েকজন তরুণ ব্যাটসম্যান এই টুর্নামেন্টে আলো ছড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে কয়েকজন বোলারও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন। তাদের পারফরম্যান্সটাকে কিভাবে দেখছেন?

হাবিবুল বাশার: টুর্নামেন্টটাকে যদি এক কথায় ব্যাখ্যা করতে বলেন তিনটা সেঞ্চুরিতে তিনটা তরুণ খেলোয়াড়। আমি মনে করি আপনি আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন। টুর্নামেন্টে আমাদের যে প্লেয়ার আছে তারা তো আছেই। নতুনরা কেমন করে, আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে আমাদের টুর্নামেন্টটা খুব ভালো হয়েছে। তরুণরা ভালো করেছে। ব্যাটসম্যানরা ভালো করেছে, বোলাররা ভালো করেছে। ভালো সংবাদ বলবো বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য। এসব টুর্নামেন্টে এসব দিকেই আমাদের নজর থাকে। খারাপ হয়নি, আমি বলবো ভালোই হয়েছে সব মিলিয়ে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: অভিজ্ঞ মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেনদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারফরম্যান্স করেছেন শরিফুল ইসলাম, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধরা। তাদের পারফরম্যান্স কীভাবে মূল্যায়ণ করবেন?

বাশার: শরিফুল, মুগ্ধ আরও কিছু ফাস্ট বোলার ভালো করেছে। নাঈম ভালো বল করেছে, রাকিবুলও ভালো করেছে। একটা জিনিস খুব ভালো ছিল যে তরুণরা আলো ছড়িয়েছে। কিছু নতুন ফাস্ট বোলার পেয়েছি। আমাদের যে ফাস্ট বোলার তারা তো আছেই। এর বাইরে কিন্তু অনেক ফাস্ট বোলার ভালো করেছে। যেটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের বোলিং গ্রুপটাও কিন্তু এখন খুব শক্ত হয়ে গেছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: নাজমুল হোসেন শান্ত, পারভেজ হোসেন ইমন, নাঈম শেখ সেঞ্চুরি হাঁকালেও অনেক তরুণ ব্যাটসম্যান নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন এই টুর্নামেন্টে। এদের মধ্যে শামীম পাটোয়ারি, আকবর আলী আছেন। তাদের নিয়ে আপনাদের ভাবনা কী?

বাশার: আমরা টি-টোয়েন্টিতে এমন ব্যাটসম্যান খুঁজছিলাম যারা ১৪০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করতে পারবে। এরকম কয়েকজনকে পেয়েছে। এরকম পুরোপুরি পেয়েছি বলবো না। তবে কয়েকজনকে পেয়েছি এটাই স্বস্তির।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: মুস্তাফিজুর রহমান অনেকদিন পর পরিপূর্ণ ছন্দে ফিরেছেন। ১০ ম্যাচ খেলে এই টুর্নামেন্টে ২২ উইকেট শিকার করেছেন। তাঁর এমন পারফরম্যান্স কেমন স্বস্তির?

বাশার: পুরোপুরি অনেকদিন পর ছন্দে মুস্তাফিজ। সে কিন্তু শেষ বিপিএলে খারাপ করেনি। তাঁকে নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা থাকে বেশি। প্রত্যাশা বলতে প্রতি ম্যাচে ৫ উইকেট পাবে ৪ রানের নিচে ওভারে দেবে। এ কারণেই মুস্তাফিজ একটু এদিক ওদিক হলে একটু চোখে বেশি পড়ে। শেষ বিপিএলে যদি দেখো সে এক বা দুই নম্বরের মধ্যে আছে। শেষ বিপিএলে কিন্তু খারাপ করেনি। এই টুর্নামেন্টে যেমন প্রত্যাশা থাকে সেরকম বোলিং করেছে মুস্তাফিজ। এটা দারুণ ভালো। সে দারুণ শেপে আছে। ভালো জায়গায় বল করেছে। মানে পরিপূর্ণ মুস্তাফিজকে এই টুর্নামেন্টে পেয়েছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ১০ ম্যাচে ৩৯৩ রান নিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের সেরা ব্যাটসম্যান হয়েছেন লিটন দাস। ধারাবাহিকতার জায়গা থেকে লিটনকে কোন জায়গায় রাখবেন?

বাশার: লিটন দাসকে এখন অনেক পরিণত লাগছে। সে অনেক পরিণত ব্যাটিং করেছে। যেটা দেখে ভালো লাগছে। আগে যেমন অভিনব ব্যাটিং করতো, খারাপ বলবো না। এখন কিন্তু অনেক পরিণত ব্যাটিং করেছে। ওর ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্যটা চলে যায়নি। এখন সে অনেক পরিণত দলের যেরকম দরকার এখন সে সেভাবে নিজেকে বদলে ফেলছে। এটা ভালো সঙ্কেত লিটন এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আইসিসির নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। এই টুর্নামেন্টে জেমকন খুলনার হয়ে ৯ ম্যাচে ১২.২২ গড়ে করেছেন ১১০ রান আর বল হাতে নিয়েছেন ৬ উইকেট। সাকিব হয়তো প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেনি তাঁর ফেরাটাকে কীভাবে দেখছেন?

বাশার: সাকিবের কাছেও মুস্তাফিজের মতো প্রত্যাশা থাকেই। বল হাতে খারাপ করেছে বলবো না। তবে সে যেহেতু অলরাউন্ডার তাই ব্যাটিংটাও গুরুত্বপূর্ণ। এটা হতেই পারে। এক বছর পর সে টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেছে। যেখানে ডিমান্ড অনেক বেশি থাকে। পরিস্থিতি ভিন্ন থাকে। সেখানে এসেই আগের ফর্মে ফেরাটা একটু কঠিন। সাকিবকে নিয়ে আমার মনে হয় না চিন্তিত হওয়ার কিছু আছে। আমার মনে হয় সে যখন ওয়ানডে খেলবে তখন ঠিক হয়ে যাবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে খেলা হয়নি মাশরাফি বিন মুর্তজার। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের মাঝ পথে ফিরে ৪ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৭ উইকেট। এর মধ্যে প্রথম কোয়ালিফায়ারে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বিপক্ষে ৩৫ রানে ৫ উইকেট। এমন পারফরম্যান্সকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

বাশার: মাশরাফি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। আমি আগেও বলেছি সে দুই দিন তিন দিন অনুশীলন করবে। সে যখন বোলিং করবে ফিটনেসটা হয়তো আগের মতো থাকবে না। তবে ও জায়গা মতোই করবে। এই টুর্নামেন্টে সে উইকেটও পেয়েছে। আমরা ওর কাছে এমনটাই আশা করি। মাশরাফির পারফরম্যান্সে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাঁকে আমরা এরকমই দেখে আসছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: সবাই তামিমের স্ট্রাইক রেট নিয়ে কথা বলছে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর এমন ব্যাটিং কি চিন্তার কারণ?

বাশার: আমি তামিম এবং অন্যদের নিয়ে চিন্তিত নই। ওরা সিনিয়র প্লেয়ার। ওরা জানে দলের কখন কি দরকার হয়। এখানে দলের প্রয়োজনে তাঁকে স্ট্রাইক রেট কমিয়ে ব্যাটিং করতে হয়েছে। দল যেহেতু চেয়েছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত যখন বাংলাদেশের হয়ে খেলবে তখন তো এমন ব্যাটিং করা লাগবে না।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার কী মনে হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মাঝে এখন একজন পরিপূর্ণ অধিনায়কের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে? অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে এই টুর্নামেন্টে কেমন দেখলেন?

বাশার: পরিপক্কতা এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে বেশ ভালো দেখছি। মাঠে ফিল্ডিং পরিবর্তন, বোলিং পরিবর্তন এসব ক্ষেত্রেও সে পরিণত। এই টুর্নামেন্ট খুলনা সেরা দল হলেও এটা কিন্তু সহজ ছিল না। প্রায় তারা হেরে গিয়েছিল। এসব ম্যাচে কিন্তু অধিনায়কের ভালো পরীক্ষা হয়ে যায়। ভালো দল, ভালো অধিনায়ক হলে রুটিন অনুশীলন করলেই হয়। সবাই ভেবেছিল খুলনা সলিড দল। এখানে মাহমুদউল্লাহ রুটিনটা অনুসরণ করলেই হবে। তাঁর দল কিন্তু স্ট্রাগলিং করেছে। কঠিন সময়ে সে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ দেখিয়েছে। সে সব মিলিয়ে একজন পরিপূর্ণ অধিনায়ক এখন।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: তাইজুলকে নিয়ে কি চিন্তার কারণ আছে? তিনি তো টুর্নামেন্টের শেষের দিকে ম্যাচই খেলার সুযোগ পাননি। নাইম হাসানও ইনজুরিতে। এই দুজনকে নিয়ে কী ভাবছেন?

বাশার: তাইজুলকে আমরা লাল বলেই বেশি চিন্তা করি। খেললে ভালো হতো। এটা বড় ভাবনার কারণ না। এখন সে ভালো বলটা ঘুরাতে পারছে। টি-টোয়েন্টিতে ওইরকম হয়নি। এটাও আমার কাছে এতো চিন্তার কিছু মনে হয় না। বরং নাইমের ইনজুরিটা আমার জন্য বড় চিন্তার। ও আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ লাল বলে। ওর ইনজুরিটা নিয়েই বেশি চিন্তিত আমি। আমার মনে হয় লাল বলে তাইজুল ভালো করবে। যেটা বোলিং সেটাই করবে। আমার চিন্তা নাইমকে নিয়ে আশা করি সে টেস্ট ম্যাচের আগে ফিট হয়ে যাবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: মেহেদী হাসান এই টুর্নামেন্টে দারুণ বোলিংয়ের সঙ্গে শেষ দিকে নেমে বেশ কয়েকটি ঝড়ো ক্রিকেট খেলেছেন। তাঁকে কি সাদা বলের পরিকল্পনায় রাখছেন আপনারা?

বাশার: সে কিন্তু জেনুইন অলরাউন্ডার। তাঁর সঙ্গে মিরাজের ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বিশেষ করে সাদা বলের ক্রিকেটে।