বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ

মাহমুদউল্লাহর ‘পুরোনো ঘোড়া’ মাশরাফি

মমিনুল ইসলাম

মমিনুল ইসলাম
প্রকাশের তারিখ: 01:57 মঙ্গলবার, 15 ডিসেম্বর, 2020

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেস্পন্ডেন্ট ||

২০০১ সালে দাপটের সঙ্গে ক্রিকেট ক্যারিয়ারে শুরু করেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। এরপর থেকে দীর্ঘদিন দেশের পেস বোলিং ইউনিটকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের অনেক জয়ে বল হাতে অবদান রেখেছেন ডানহাতি এই পেসার। টেস্ট ক্রিকেট ছেড়েছেন ইনজুরির কারণে, টি-টোয়েন্টিও ছেড়েছেন ২০১৭ সালে।

আর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর না নিলেও সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সিরিজে ছেড়েছেন কাপ্তানি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে পেস দিয়ে ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলেছেন দেশসেরা এই পেসার। যদিও কালের বিবর্তনে নিজের পেস আর পুরোনো বোলিংয়ের ধার ধরে রাখতে পারেননি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবেচেয়ে বেশি উইকেট নেয়া এই পেসার।

চলতি বছরে মার্চে করোনা শুরুর আগে সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) খেলতে নেমেছিলেন এই তারকা পেসার। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ৮-৯ মাস, এরমাঝে হয়েছেন করোনা আক্রান্তও। শুধু কি তাই ? বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট শুরুর আগে পড়তে হয়েছিল হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে।

২০১৯ বিশ্বকাপের খাপছাড়া পারফরম্যান্সের কারণে খানিকটা প্রশ্ন উঠেছিল বর্তমানে তাঁর সক্ষমতা নিয়ে। সেই সঙ্গে বয়সটাও ৩৭ পেরিয়ে গেছে। তাই তো প্রত্যাশার ভারটা যেন কমে গিয়ছিল তাঁর ওপর থেকে। তবে তাঁর ভিন্নতা দেখা গেছে তাকে পেতে দলগুলোর আগ্রহতে। ইনজুরির কারণে টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে খেলার সুযোগ না পেলেও শেষ দিকে লটারি ভাগ্যে সুযোগ পেলেন জেমকন খুলনার হয়ে।

সুযোগ পেয়েও যেন নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারলেন না। প্রথম ম্যাচে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বিপক্ষে ২৮ রান ১ উইকেট নেয়ার পর বেক্সিমকো ঢাকার বিপক্ষে ২৬ রানে নিয়েছিলেন মাত্র একটি উইকেট। টুর্নামেন্টে সুযোগ পাওয়ার পর তাঁর মতো তারকা ক্রিকেটারের কাছে যে পরিমাণ প্রত্যাশা ছিল ঠিক সেটা যেন পূরণ করতে পারছিলেন না। প্রমাণ করার মতো কিছু ছিল না, আবার ছিলও হয়তো। তবুও নিজেকে বিলিয়ে দিলেন তিনি। 

গ্রাম-গঞ্জে একটা প্রবাদ আছে, ‘ওস্তাদের মাইর শেষ রাতে’। ঠিক সেটাই যেন করে দেখালেন মাশরাফি। বড় ম্যাচের জন্য নিজের সবটা যেন জমিয়ে রেখেছিলেন বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক। নিজের সক্ষমতার ঝুঁলি থেকে একে একে সবটা যেন ঢেলে দিতে থাকলেন খুলনাকে ফাইনালে তুলতে।

যার শুরুটা হয়েছিল চলতি টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সৌম্য সরকারকে দিয়ে। এরপর ফিরিয়েছেন এবারের আসরের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রান করা লিটন দাসকে। তারপর কেবলই তাঁর স্লোয়ারের খেলা। অভিজ্ঞ এই পেসারের স্লোয়ারে একে একে বোকা হতে থাকেন মাহমুদুল হাসান জয়, শামসুর রহমান শুভ এবং মুস্তাফিজুর রহমানরা।

সেই সঙ্গে ৩৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে করেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। যা কি-না দীর্ঘ দুই দশকের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এবারই প্রথম পাঁচ উইকেটের দেখা পেলেন মাশরাফি। যে কারণে তিনি কিংবা তাঁর ভক্ত সমর্থকরা আক্ষেপ করে বলতেই পারেন, তুমি কী একবারও আসতে পারো না যেদিন যৌবনে জোয়ার এসেছিল? এখনই কেন আসলে তুমি চলে যাওয়ার বেলায়...

এদিন সাকিব আল হাসান এবং মুস্তাফিজের পর বাংলাদেশের তৃতীয় পেসার হিসেবে ১৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সতীর্থরা তাকে 'পাগলা ঘোড়া' বলে ডাকতেন। দীর্ঘদিন বাইরে থাকা এই ঘোড়ার বাজিমাতেই ফাইনালে জায়গা করে নেয় মাহমুদউল্লাহদের। দলের অন্যতম অভিজ্ঞ এই পেসারকে ফর্মে ফিরতে দেখে দারুণ আনন্দিত মাহমুদউল্লাহ। ম্যাচ তাই তিনি জানিয়েছেন, পুরোনো ঘোড়া দারুণ ভাবে ফিরে এসেছে এবং ৫ উইকেট নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা ম্যাচটা যেভাবে খেলেছি। প্রত্যেকেই দারুণ করেছে। ব্যাটিং ভালো হয়েছে ফিল্ডিংও টি-টোয়েন্টিতে এটাই হওয়া উচিৎ। বিশেষ করে আমাদের ফিল্ডিং ছিল অসাধারণ। এর ফলে আমাদের বোলাররা দারুণ আত্মবিশ্বাস পেয়েছে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। পুরোনো ঘোড়া দারুণ ভাবে ফিরে এসেছে এবং ৫ উইকেট নিয়েছে। সে তাঁর অভিজ্ঞতা যেভাবে কাজে লাগিয়েছে এটা দেখতে পারা দারুণ।’

হুট করেই মাশরাফির এমন বোলিংয়ের রহস্য কি? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মাঝে। যদিও মাশরাফি জানালেন, বোলিংয়ের কোনো রহস্য নেই শুধু মাত্র সঠিক জায়গায় বল করেই সফল তিনি। সেই সঙ্গে ব্যাটিং দল বেশি রান করাও বেশ সুবিধা দিয়েছে বলে জানান এই পেসার।

এ প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘কোনো রহস্য নাই। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে বল সঠিক জায়গায় করতে হবে। আমরা অনেক রান করেছি। ওই সুবিধাটা ছিল। প্রতিপক্ষের উপর সেই চাপটাও ছিল। তাদের শটস খেলতে হবে তাই সঠিক জায়গায় বল করা আমাদের দরকার ছিল। জানি কিছু রান লিক হতে পারে। দিন শেষে ২১০/২১১ তাড়া করা খুবই কঠিন। এই একটা সুবিধা ছিল। মূল পয়েন্টটা হচ্ছে সঠিক জায়গায় বল করা।’