বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ

৬ ওভার, স্পট বোলিং এবং ইয়র্কারে ইতি

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 20:38 সোমবার, 07 ডিসেম্বর, 2020

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

রবিবার সকালেই নিশ্চিত হয়ে যায় ফিটনেস পরীক্ষায় উতরে গেছেন মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে কোন দলের হয়ে খেলবেন তিনি। অবশেষে অপেক্ষার পালা ফুরায় বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। লটারির মাধ্যমে মাশরাফিকে পেয়ে যায় জেমকন খুলনা।

রাতে রাজশাহীর বিপক্ষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া খুলনা রবিবার দলীয় অনুশীলনে আসেনি। তবে অপেক্ষা ছিল মাশরাফির জন্য। কারণ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে একক অনুশীলন করবেন সাবেক এই ওয়ানডে দলপতি। তবে কয়টা নাগাদ আসবেন তিনি তা সঠিক কারও জানা নেই।

এর আগে পহেলা ডিসেম্বর ফরচুন বরিশাল এবং গাজি গ্রুপ চট্টগ্রামের অনুশীলন চলাকালীনই একাডেমিতে অনুশীলন করে আলোচনায় এসেছিলেন মাশরাফি। অজান্তে জৈব সুরক্ষা বলয়ে ঢুকে যাওয়ার পর ঘন্টাখানেক পর বিষয়টি জানতে পেরে বেরও হয়ে গেছিলেন তিনি। এবার একই ভুল করেননি দেশের সবচেয়ে সফল এই অধিনায়ক।

এদিন সকাল ১১টার আগে একাডেমি মাঠে অনুশীলনে আসে ফরচুন বরিশাল। বেলা ১টার খানিক আগে শেষ হয় তাদের অনুশীলন। তখনও আলোচনার বিষয় মাশরাফি কখন আসবেন? বা আদৌ কি আসবেন? ঠিক ১২টা ৫৭ মিনিটে নিশ্চিত হওয়া গেল মাশরাফি এসেছেন। বরিশাল দল বের হয়ে যাওয়ার পরই মাঠে প্রবেশ করেন তিনি।

মিরপুরে আসার আগে অবশ্য করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে মাশরাফির। তাই খুলনা দলের সঙ্গে হোটেলে যোগ দেয়ার আগে মিরপুরে নিজেকে আরও একবার ঝালিয়ে নেন তিনি। পহেলা ডিসেম্বরের পর মাঝেও সিটি ক্লাব মাঠে চলে তার অনুশীলন।

একাডেমি মাঠে প্রবেশ করতেই উপরে থাকা সাংবাদিকদের দিয়ে তাকিয়ে মাশরাফি বলেন, 'নড়াইলে কোন করোনা রোগী নেই'। বলেই ঢুকে যান ছাউনির নীচে। সেখানে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা একটি বল ট্রাউসারের পকেটে ঢুকিয়ে সোজা চলে যান মাঠে। সে সময় বিসিবির তরফ থেকে আরও একটি সাদা বল দেয়া হয় তাকে।

বেলা ১টা ৫মিনিটে হালকা গা গরম শেষে বোলিং শুরু করেন মাশরাফি। শুরুতে শর্ট রান আপে এক ওভার বোলিং করেন তিনি। সে সময় বাতাসে বল হালকা সুইংও করছিল। এই শর্ট রান আপে বোলিং দিয়ে নিজেকে ঝালাই করে নেয়ার পর ফুল রান-আপে বোলিং শুরু করেন তিনি।

একটি স্টাম্প গেড়ে উইকেটের সামনে কোন রেখে শুরুতে স্পট বোলিং দিয়ে ফুল রান আপে বোলিং শুরু করেন মাশরাফি। যদিও সে সময় নিজের লাইন লেন্থ খুঁজে পেতে বেশী সময় নেননি সাবেক এই অধিনায়ক। প্রথম বল অফ স্টাম্পের বাইরে, দ্বিতীয়টি ওয়াইড হওয়ার পর তিন নম্বর বলটি ঠিকই জায়গা মতো ফেলেন তিনি। 

ফুল রান আপে বোলিংয়ের সময় ষষ্ঠ বলটি স্টাম্পে গিয়ে আঘাত করে। এভাবে টানা ৪০ মিনিট বোলিং অনুশীলন চালিয়ে যান তিনি। যার মধ্যে ৫ বার স্টাম্পে আঘাত হানে। ডানহাতি এবং বাঁহাতি দুই ধরণের ব্যাটসম্যানের ছায়া বানিয়েই এদিন অনুশীলন করেছেন তিনি।

৪০ মিনিট ধরে চলা এই অনুশীলনের শেষ ভাগে এসে ইয়র্কার মারতে শুরু করেন তিনি। সে সময়ও স্টাম্পের আগে দুটি কোন রেখে দেন, যাতে একবার আঘাত হানেন মাশরাফি। এছাড়া শেষ তিনটি বল জায়গা মতো আঘাতও করেন। মোট ৬ ওভার বোলিং শেষে আবারও ছাউনির নীচে চলে যান তিনি। এর আগে অবশ্য একবার বসে পানিও পান করেন এই পেসার।

অনুশীলন চলাকালীন ল্যান্ডিং ঠিক আছে কিনা তা দেখতে প্রযুক্তির সাহায্য নেন মাশরাফি। একটি চেয়ারে মোবাইল বসিয়ে ল্যান্ডিং ঠিক আছে কিনা তাও দেখে নিচ্ছিলেন তিনি। বোলিং অনুশীলন শেষে আবারও রানিং শেষে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান। এরপর নিজ গাড়িতে করে চলে যান টিম হোটেলে।

মঙ্গলবার নিজেদের সপ্তম ম্যাচে জেমকন খুলনা মুখোমুখি হবে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের। মিরপুর শেরে বাংলায় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ম্যাচটি শুরু হবে। হয়তো এই ম্যাচ দিয়েই বিরতি ভাঙবেন মাশরাফি। 

এর আগে সাবেক এই অধিনায়ক সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন গত মার্চে। সেই সিরিজেই ওয়ানডের অধিনায়কত্বকে বিদায় জানিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া করোনার কারণে সব ধরণের খেলা বন্ধ হওয়ার আগে  মার্চে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে বিকেএসপিতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। 

এতদিন এটিই ছিল মাশরাফির শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মাশরাফি শেষ ম্যাচ খেলেছেন বঙ্গবন্ধু বিপিএলে। এ বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা প্লাটুনের ওই টুর্নামেন্টে ১৩ ম্যাচে নিয়েছেন ৮ উইকেট।

গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্টস কাপেও খেলার সম্ভাবনা ছিল মাশরাফির। কিন্তু ১৮ অক্টোবর মিরপুরের সিটি ক্লাব মাঠে রানিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ায় সেই সম্ভাবনার ইতি ঘটে। পরে আবার চোট কাটিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ফেরার সম্ভাবনা দেখা দিলেও ইনজুরির কারণে শুরুতে প্লেয়ার্স ড্রাফটে ছিল না তার নাম।