বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ

সন্তুষ্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কোয়ারেন্টাইন জটিলতায় চূড়ান্ত হয়নি দিনক্ষণ

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 15:43 বুধবার, 02 ডিসেম্বর, 2020

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

আগামী বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। করোনার প্রাদুর্ভাবের মাঝে সিরিজ এখনও চূড়ান্ত না হলেও চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশে এসেছেন দেশটির পর্যবেক্ষক দলের দুই সদস্য। বুধবার সংবাদ মাধ্যমে আলাপকালে উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক আকশাই মানসিং জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রস্তাবিত করোনা প্রটোকলে সন্তুষ্ট তারা।

দেশে ফিরে উইন্ডিজ বোর্ডের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। তবে এর আগে জানানো হয়েছিল ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসতে পারে ক্যারবিয়ানরা। কিন্তু কোয়ারেন্টাই ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত সিরিজ শুরুর দিনক্ষণ পেছাতে পারে। 

সেক্ষেত্রে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে মাঠে গড়াতে পারে সিরিজটি। এর আগে দেশ থেকে করোনা পরীক্ষা করিয়েই বাংলাদেশে আসবেন জেসন হোল্ডাররা। এখানে এসে ৭দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হতে পারে সফরকারীদের। যদিও এর সময়সীমা চূড়ান্ত না হওয়ার সিরিজ শুরুর দিনক্ষণ এখনই চূড়ান্ত হচ্ছে না।

বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭দিনের কোয়ারেন্টাইনে সমঝোতায় পৌঁছালে প্রথম ৩দিন রুমে থেকেই কোয়ারেন্টাইন পালন করতে পারেন হোল্ডার-হোপরা। এরপর করোনা পরীক্ষা করিয়ে ফলাফল পাওয়ার পর নিজেদের মধ্যে অনুশীলন করতে পারে উইন্ডিজ শিবির। ৭দিন পার হলে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুশীলন শুরু হতে পারে ক্যারিবিয়ানদের।

এই বিষয়ে আইসিসি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেডিকেল দলের সদস্য আকশাই মানসিং বলেন, 'সময় বদলাচ্ছে এবং সবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে আগ্রহী। এবং আমাদের বাংলাদেশে আসার কারণ ছিলো যে সেটি আগামী বছরের শুরুতে সম্ভব হবে কি না। আমাকে বলতে হবে যে, বিসিবি আমাদেরকে প্রোটোকলসমূহের যে বর্ণনা দিয়েছে, সেগুলো অত্যন্ত গভীর চিন্তার পরিচয় দেয়। এবং যেহেতু আমাদের আসার আগে তাদের তিনটি টুর্নামেন্ট হয়েছে এবং একটি হচ্ছে, সুতরাং তারা অভ্যস্ত। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে আমরা যা দেখেছি তা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট।'

'এখানে সুযোগ-সুবিধা দারুণ, কোভিড প্রোটোকল অত্যন্ত স্পষ্ট এবং নিখুঁত। যে হাসপাতাল এবং হোটেলগুলোয় আমরা গিয়েছি, সেগুলোর আচরণ ও কাজ কোভিড-১৯ এর জন্য সুপারিশ করা আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং, স্বাস্থ্যগত দিক থেকে আমরা খুবই খুশি। এখন আমাদেরকে আমাদের পর্যবেক্ষণগুলো ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোর্ড অফ ডাইরেক্টরসের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী যে, আমরা যা দেখেছি, তা বিশ্বের যেকোন জায়গার আয়োজনের চেয়ে কম নয়। এখন পর্যন্ত আমরা খুবই খুশি' তিনি আরও বলেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের সিকিউরিটি ম্যানেজার পল স্লোওয়ে বলেন, 'আমার প্রাথমিক কাজ ছিলো আগামী জানুয়ারিতে প্রস্তাবিত সিরিজটির নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা। এটি বলতে আমি খুশি যে, আমি যা দেখেছি, সেখানে আমাদের কাছে উপস্থাপন করা নিরাপত্তা পরিকল্পনা এবং প্রোটোকলগুলো খুবই সন্তোষজনক। আমার কোন সন্দেহ নেই যে সেই পরিকল্পনাগুলো যদি যেভাবে লেখা হয়েছে এবং আলোচনা করা হয়েছে সেভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে কোন ধরণের অপ্রিয় ঘটনা ঘটবে না।'

'আমি পুরো আয়োজনের ওপর অত্যন্ত খুশি, এয়ারপোর্ট, হোটেল, প্র্যাকটিস ভেন্যু থেকে ম্যাচের ভেন্যু সবকিছু নিয়ে। আমি এর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে এসেছিলাম অ-১৯ বিশ্বকাপের জন্য। এবং আমি বিশ্বাস করি যে বিসিবির সেই সক্ষমতা আছে একটি আন্তর্জাতিক সিরিজের জন্য প্রয়োজনমাফিক আয়োজন করার। আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের কাছে আমাদের রিপোর্ট পেশ করবো। সফর নিশ্চিত হলে আমি আরেকবার বাংলাদেশে আসবো প্রোটোকলগুলো মানা হচ্ছে কি না সেটি যাচাই করতে' আরও যোগ করেন তিনি।

বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেন, 'উনারা এখানে পরিদর্শনে এসছেন আপনারা সবাই জানেন। কোভিডের এই পরিস্থিতির মধ্যে তাদের আসার কথা। আপনারা জানেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফর আছে। এজন্য তাদের এখানে আসা। উনারা ঢাকা এবং চট্টগ্রাম দুই জায়গায় পরিদর্শন করেছেন। আমি যতটুকু বলতে পারি, তারা বেশ সন্তুষ্ট আমাদের ব্যবস্থাপনায়।’

‘তারা হাসপাতাল এবং ভেন্যু সবকিছু দেখেছেন। হোটেল দেখেছেন, ওখানে থাকার ব্যবস্থা কেমন হবে, নিরাপত্তা কেমন হবে। আশার কথা হচ্ছে, উনারা বেশ সন্তুষ্ট। ভালোই সন্তুষ্ট। এখন আসার ব্যাপার যেটা আছে, সেই অনুমতি দিবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। সবকিছু ঠিক হলে তারা জানুয়ারির মাঝে দিকে আসবে’ আরও যোগ করেন তিনি।

কোয়ারেন্টাইন ইস্যুতে আকশাই মানসিং বলেন, 'প্রথম তিন দিনের জন্য আমরা ইন-রুম কোয়ারেন্টিনের পরামর্শ দেবো। প্রথম টেস্টটি হবে পৌছানোর পর। তিন দিনের পর আমরা আরেকবার টেস্ট করাবো । সেটিতে নেগেটিভ আসলে আমরা আমাদের স্কোয়াডের ভেতর প্র্যাকটিস করতে চাই, কিন্তু সাত দিন পার হবার আগে বাইরের কারো সামনে আসতে চাই না। আমরা ইন্ট্রা-স্কোয়াড প্র্যাকটিস করবো ততদিন, সাত দিনের পর আমরা বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের নিয়ে নেট সেশন করতে পারবো।'

বাংলাদেশে আসার পর বুধবার বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় মিরপুর শের এ বাংলা স্টেডিয়ামে এসেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল। মিরপুরে প্রবেশের পর শুরুতে ২ নম্বর ড্রেসিং রুম দিয়ে মাঝ মাঠে যান তারা। যেখানে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মাঠের চারপাশ লক্ষ করেন। এরপর আবারও ড্রেসিং রুমের ভেতরে প্রবেশ করে ১ নম্বর ড্রেসিং রুম দিয়ে বের হন। সেখান থেকে বেড়িয়ে তারা হাঁটা শুরু করেন ইনডোরের দিকে।

ইনডোর থেকে বেরিয়ে তারা একাডেমি মাঠের দিকটা ঘুরে দেখতে সেখানে যান। একাডেমিতে গিয়ে প্রথমেই তারা জিমে যান, সেখান থেকে বেরিয়ে পরবর্তীতে মাঠে প্রবেশ করেন। এরপর তারা একাডেমি ভবনেও প্রবেশ করেছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে সরাসরি তারা বিসিবিতে ঢুকেন। যেখানে পুরো সময়টা জুড়ে তাদের সঙ্গে ছিলেন ড. দেবাশীষ চৌধুরী এবং সাব্বির খান।

এর আগে শনিবার বাংলাদেশে আসার পর সোমবার বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) এবং এপোলো হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। মূলত বাংলাদেশে আসার পর ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কেমন হবে সেটা পরখ করছেন। মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামও সফর করেছেন।