বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ

মুখোমুখি মিরাজ-মুস্তাফিজ

মমিনুল ইসলাম

মমিনুল ইসলাম
প্রকাশের তারিখ: 14:10 রবিবার, 29 নভেম্বর, 2020

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

অনূর্ধ্ব-১৬ দলে খেলার সময় থেকে পরিচয় মুস্তাফিজুর রহমান এবং মেহেদি হাসান মিরাজের। সময়ের বিবর্তনে সেই পরিচয় থেকে তৈরি হয়ে এই দুজনের বন্ধুত্ব। শুধু যে দীর্ঘদিন একসঙ্গে খেলার কারণে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। তাদের দুজনের বন্ধুত্বের কথা বেশ কয়েকবার গণমাধ্যমে এসেছে। তারা দুজন যে খুব কাছের বন্ধু সেটা অবশ্য মিরাজও কয়েকবার স্বীকার করেছেন।

দুইজনই উঠে এসেছেন বয়সভিত্তিক দল থেকে। মুস্তাফিজ বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে সেভাবে আলো ছড়াতে না পারলেও ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল ছিলেন মিরাজ। অনূর্ধ্ব-১৬ এর পর অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটও দুজন একসঙ্গে খেলেছেন। যেখানে একসঙ্গে তারা ১৪টি ম্যাচ খেলেছিলেন। ইনজুরি ও বিভিন্ন কারণে মুস্তাফিজ খুব বেশি ম্যাচ খেলতে না পারলেও যুব দলের সাবেক এই অধিনায়ক খেলেছেন ৫৬ ম্যাচ।

যুব দল পেরিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়েও প্রতিনিধিত্ব করেছেন এই দুই বন্ধু। যা তাদের দুজনের জন্যই অন্যরকম এক রোমাঞ্চ, অন্য রকম এক অনুভূতি। দীর্ঘদিনের বন্ধু এতদিন সতীর্থ থাকলেও আগামীকাল দেখা যাবে প্রতিপক্ষ হিসেবে। মিরাজ-মুস্তাফিজরা একে অপরকে বলতেই পারেন, 'বন্ধু তুমি, শত্রু তুমি।'

তারা যখনই প্রতিপক্ষ, তখনই কথা উঠে বন্ধুত্বের ব্যাপারে। খেলার বাইরে এ দুজন দুষ্টুমি কিংবা ফাজলামিতে মগ্ন থাকলেও মাঠের ক্রিকেটে দুজনই বেশ সিরিয়াস থাকবেন বলে জানিয়েছেন মিরাজ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওর সঙ্গে তো সবসময়ই দুষ্টামি করি, ফাজলামি করি, দেখা হয়। বিপক্ষে খেললেও দুষ্টামি করি। কিন্তু খেলার সময় তো ও সিরিয়াস থাকবে আমরা সবাই সিরিয়াস থাকবো।

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে মিরাজের ফরচুন বরিশালের চেয়ে ভালো ফর্মে আছে মুস্তাফিজের গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। চলতি টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচেই দাপুটে জয় পেয়েছে মুস্তাফিজের চট্টগ্রাম। আর এখন পর্যন্ত দুই ম্যাচ খেলা বরিশাল হেরেছে একটিতে। প্রথম ম্যাচে জয়ের প্রান্তের থাকলেও শেষ পর্যন্ত আরিফুল হকের এক ওভারে চার ছক্কার কাছে হেরে যায় তারা।

বরিশালের চেয়ে চট্টগ্রাম কিছুটা এগিয়ে থাকলেও নিজেদের শেষ ম্যাচে জয় পাওয়ায় ছাড় দিয়ে কথা বলবে না মিরাজের দলও। গেল দুই ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সে খুশি তিনি। উড়তে থাকা চট্টগ্রামের বিপক্ষে নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্রিকেট খেলতে চান বলে জানিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা বলতে কী আমরা স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলতে চাই। যেভাবে আমরা ক্রিকেট খেলে এসেছি, সেভাবেই খেলতে চাই। দেখেন প্রথম ম্যাচেও আমাদের ব্যাটসম্যানরা মোটামুটি ডমিনেট করেছে। দ্বিতীয় ম্যাচেও ভালো খেলেছে। আমরা আমাদের প্রসেস অনুযায়ী খেলতে চাই। বাকিটা মাঠে হবে।’

আগামীকাল দুপুর দেড়টায় টুর্নামেন্টের সপ্তম ম্যাচে মুখোমুখি হবে এই দুি দল। যেখানে বরিশালের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে লিটন দাস ও সৌম্য সরকারের উদ্বোধনী জুটি। সেই সঙ্গে তাদের চিন্তার কারণ হতে পারে মুস্তাফিজুর ও শরিফুল ইসলামের বোলিংও। গেল দুই ম্যাচেই দারুণ সময় পার করেছেন তারা।

এদিকে চট্টগ্রামের গলার কাটা হয়ে দাঁড়াতে পারেন তামিম ইকবাল ও পারভেজ হোসেন ইমনরা। আফিফ হোসেন ধ্রুব ও ইরফান শুক্কুর প্রথম দুই ম্যাচে নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে না পারলেও জ্বলে উঠতে পারেন তাইজুল ইসলামদের বিপক্ষে। তাসকিন আহমেদ, সুমন খান আর কামরুল হাসানরাও বেশ ভোগাতে পারেন লিটন-মোহাম্মদ মিঠুনদের। 

ক্রিকেট এক অনিশ্চয়তার খেলা। যে কোনো দিন যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। কে জিতবে সেটা বলে দেয়াটা কঠিন। পরিসংখ্যান ছাপিয়ে এ ম্যাচে মাঠের ক্রিকেটে যারা ভালো খেলবে এবং নিজেদের সেরাটা দিতে পারবে তারাই জিতবে বলে মনে করেন এই অফস্পিনার।

মিরাজের ভাষ্য, ‘ক্রিকেট খেলায় সবকিছু হতে পারে। চিটাগাং ভালো ক্রিকেট খেলছে। ভালো টাচে আছে। খেলোয়াড়ও ভালো, টিমও ভালো। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আমরা যে প্রক্রিয়ায় আছি, সেভাবে যদি খেলতে থাকি। অবশ্যই অনেক কিছুই হতে পারে। আর ক্রিকেট খেলা আপনারা জানেন অনেক কিছু হতে পারে। ভালো টিমও হেরে যেতে পারে আবার জেতা ম্যাচও হেরে যায় হারা ম্যাচও জিতে যায়। আগে থেকে কোনো কিছু প্রেডিক্ট করা সম্ভব না। ওরাই জিতবে বা আমরা হারবো অথবা আমরাই জিতবো বা ওরাই হারবো। এটা বলা যায় না। দিনশেষে যারা মাঠে ভালো খেলবে, একশতে একশ দিতে পারবে, ভুল কম করবে। তারাই জিতবে।’

সম্ভাব্য একাদশ:
ফরচুন বরিশাল: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), মেহেদি হাসান মিরাজ, পারভেজ হোসেন ইমন, তৌহিদ হৃদয়, আফিফ হোসেন ধ্রুব, ইরফান শুক্কুর, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, আবু জায়েদ রাহি, তাসকিন আহমেদ, সুমন খান এবং কামরুল ইসলাম রাব্বি।

গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম: লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মাহমুদুল হাসান জয়, মোহাম্মদ মিঠুন (অধিনায়ক), মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, শামসুর রহমান শুভ, জিয়াউর রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম এবং নাহিদুল ইসলাম।