বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ

চট্টগ্রামের চিন্তার কারণ হতে পারে মিঠুন-মোসাদ্দেকদের অফ ফর্ম

মমিনুল ইসলাম

মমিনুল ইসলাম
প্রকাশের তারিখ: 20:19 শনিবার, 21 নভেম্বর, 2020

|| ডেস্ক রিপোর্ট || 

বাংলাদেশের ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ চট্টগ্রাম। যদিও তাদের দেখা গেছে ভিন্ন ভিন্ন নামে। কখনও চিটাগাং ভাইকিংস, চিটাগাং কিংস আবার কখনও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। নামের ভিন্নতা এসেছে আসন্ন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপেও। নতুন মালিকানায় গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম নামে শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে বন্দর নগরীর দলটি।

শিরোপা জয়ের জন্য প্রতি বছর তারকা সমৃদ্ধ দল সাজালেও এখন পর্যন্ত শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি চট্টগ্রামের কোন ফ্রাঞ্চাইজির। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের আসন্ন আসরে জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে নিয়ে দল সাজালেও দলে ভেড়াতে পারেননি সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবাল কিংবা মুশফিকুর রহিমদের মতো কোনো তারকা ক্রিকেটারকে।

প্লেয়ার্স ড্রাফটে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকা পাঁচ ক্রিকেটারের মাঝে থেকে মুস্তাফিজুর রহমানকে বেছে নিয়েছে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। এছাড়াও দলে রয়েছেন লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মুমিনুল হক ও মোহাম্মদ মিঠুনের মতো ক্রিকেটাররা। আর দলটির কোচ হিসেবে আছেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সফল কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। এর আগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে দুইবার বিপিএল শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন এই কোচ।

এ ছাড়াও মোহাম্মদ মিঠুনকে অধিনায়কত্ব দেয়া নিয়ে সমালোচনায় পড়েছে দলটি। অধিনায়কত্বের ভার বয়ে মিঠুন ব্যাট হাতে নিজেকে কতটা প্রমাণ করতে পারবেন সেটাই ভাবনার বিষয়। দলটির অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিলেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। সেই সঙ্গে অভিজ্ঞ মোসাদ্দেক হোসেনকেও ভাবা হচ্ছিলো দলটির অধিনায়ক হিসেবে। তবে তাদেরকে হতাশ করে অফ ফর্মে থাকা মিঠুনকেই অধিনায়কত্বের আর্ম ব্যান্ড দেয় গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম।

দলটির হয়ে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে দেখা যাবে জাতীয় দলের দুই নিয়মিত মুখ লিটন-সৌম্যকে। বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে দলে ভিড়িয়ে অন্য দলগুলো থেকে এই জায়গাটায় একটু এগিয়ে থাকবে চট্টগ্রাম। যদিও প্রেসিডেন্টস কাপে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারেননি তাদের দুজনের কেউই। প্রথম কয়েক ম্যাচে ব্যর্থ হলেও ফাইনালে হাফ সেঞ্চুরি করে ফর্মে ফেরার আভাস দিয়েছেন লিটন। অপরাজিত ৬৮ রান করে দলকে শিরোপাও জিতিয়েছেন তিনি। আর অন্যদিকে নিজেকে একেবারেই মেলে ধরতে পারেননি সৌম্য। যে কারণে দলকে কিছুটা চিন্তায় ফেলতে পারে সৌম্যের অফফর্ম।

দলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা তিন নাম্বারে দেখা যেতে পারে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল কিংবা শামসুর রহমানের যে কোনো একজনকে। জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে নিজের ব্যাটিং দক্ষতা দেখালেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরার সুযোগ পাননি তিনি। টেস্টে যতটা নিয়মিত ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ঠিক ততটাই অনিয়মিত তিনি। বেশ কিছুদিন আগে শেষ হওয়া প্রেসিডেন্টস কাপে দু-একটি ম্যাচে ভালো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দীর্ঘদিন পর ক্রিকেটে ফিরে নিজের সহজাত স্বভাবে না দেখালেও সেখানে খেলার অভিজ্ঞতা এবং সবকিছু মিলে কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারে দলটি।

মুমিনুল ছাড়াও এই জায়গায় খেলতে দেখা যেতে পারে শামসুরকে। একটা সময় বাংলাদেশের প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের মাঝে একজন ধরা হলেও স্থায়ী হতে পারেননি জাতীয় দলে। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকা শামসুর অবশ্য বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিবিপিএল) নিজেকে কিছুটা হলেও মেলে ধরতে পেরেছিলেন। পুরো টুর্নামেন্টে খুলনা টাইগার্সের হয়ে ১৪ ম্যাচের ৮ ইনিংসে ব্যাট করে ১৯১ রান করেছিলেন তিনি। যেখানে দুটি হাফ সেঞ্চুরিও ছিল তার।

শুধু তাই নয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে ৫২ রান করে আলো ছড়িয়েছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেটের বাইরে থাকলেও বিপিএলের পারফরম্যান্স আশা জাগাতে পারে তাকে। যে কারণে তাকে নিয়ে আশাবাদী হতে পারেন দলটির কোচ। তবে দলের জন্য সবচেয়ে আশার ব্যাপার হতে পারে শামসুরের দ্রুত রান তোলার ক্ষমতা।

চট্টগ্রামের হয়ে সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হতে পারে তাদের মিডল অর্ডার। সেখানে মিঠুন, মোসাদ্দেকদের মতো জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা থাকলেও তাদের অফফর্ম ভোগাতে পারে দলটিকে। প্রেসিডেন্টস কাপ কিংবা জাতীয় দলের সর্বশেষ সিরিজগুলোতে নিজেদের চেনা রূপে দেখা যায়নি তাদের। এছাড়া দলটিতে আছেন তরুণ ব্যাটসম্যান মাহমুুদুল হাসান জয়। তবে করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে কবে নাগাদ মাঠে ফিরবেন তিনি সেটির নিশ্চয়তা নেই। তাই মিডল অর্ডার নিয়ে অনেকটা অস্বস্তিতে থাকতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে। 

দলের সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ফিনিশিংয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারে চট্টগ্রামকে। যেখানে দেখা যাবে শেখ মেহেদী হাসানকে। বিপিএলে কিংবা প্রেসিডেন্টস কাপে বেশ আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করতে দেখা গেছে এই অলরাউন্ডারকে। সেই সঙ্গে পাওয়ার প্লেতে স্পিন বোলিংয়েও বেশ পারদর্শী তিনি। এছাড়াও রয়েছেন জিয়াউর, নাহিদুল। যারা কিনা আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ভালো বলও করতে পারেন।

তাদের বোলিং ইউনিটটা সবচেয়ে বেশি ভোগাতে পারে। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলার হলেন মুস্তাফিজুর ও তাইজুল ইসলাম। আর বাকিদের মাঝে কেউবা তরুণ আবার কেউবা অফফর্মে ভুগছেন। দলের পেস ইউনিটে সবচেয়ে বড় অস্ত্র মুস্তাফিজ ও তরুণ শরিফুল। প্রেসিডেন্টস কাপে তারা দুজন বেশ ভালো লাইন লেন্থে বল করলেও উইকেট শিকারে খুব একটা দাপট দেখা যায়নি। যদিও একটি ম্যাচে চার উইকেট নিয়েছিলেন শরিফুল। তারা ছাড়াও পেস বোলিং করতে পারেন জিয়াউর ও সৌম্য। এছাড়া স্পিন ইউনিটটা সামলাবেন মেহেদী, তাইজুল ও সঞ্জিত সাহা। অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মিশেলে তৈরি বোলিং লাইন আপ কতটা বৈচিত্র দেখাতে পারবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম: মুস্তাফিজুর রহমান, লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন, শরিফুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, তাইজুল ইসলাম, শামসুর রহমান শুভ, নাহিদুল ইসলাম, সৈকত আলি, মুমিনুল হক, রকিবুল হাসান, সঞ্জিত সাহা, মাহমুদুল হাসান জয়, মেহেদি হাসান।