সাকিবের প্রত্যাবর্তন

যেভাবে কাটলো সাকিবের 'নিষিদ্ধ' সময়

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 15:50 বুধবার, 28 অক্টোবর, 2020

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

জুয়াড়ির প্রস্তাব পেয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে জানাননি সাকিব আল হাসান। এই প্রস্তাব গোপন করায় ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর সাকিবকে সবধরনের ক্রিকেট থেকে ২ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয় আইসিসি। এর মধ্যে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রেখেছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত কোন ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারবেন না টাইগারদের সাবেক এই অলরাউন্ডার। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল সাকিবের  নিষেধাজ্ঞার এক বছর। দেখে নেয়া যাক এই এক বছর কোথায়, কিভাবে কাটালেন বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক।

নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর দীর্ঘদিন দেশেই ছিলেন সাকিব। দেশে থেকে নিজের কাকড়া ফার্মসহ বেশ কিছু ব্যবসা সামলিয়েছেন। তারপর সারাদেশে জুড়ে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে মার্চের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। পরিবার ও নিজের কথা ভেবে আলাদা একটি হোটেলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন এই ক্রিকেট তারকা।

সেখানে গিয়ে করোনাকালিন সময়ে মানুষের পাশে থাকতে গড়ে তুলেন সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন। তারপরই বিশ্বকাপে দাপট দেখানো ব্যাট নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেন সাবেক বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। এই ব্যাটে দেড় হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রান করেছেন তিনি। গত বিশ্বকাপের পুরোটাই খেলেছেন এই ব্যাট দিয়ে। বিশ্বকাপে তার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ, ৮৬.৫৭ গড়ে করেছিলেন ৬০৬ রান।

ওই ব্যাটের ভিত্তিমূল্য ৫ লাখ টাকা রাখা হলেও উত্তেজনাময় দর কষাকষি শেষে সাকিবের ব্যাটটি শেষ পর্যন্ত নিলামে বিক্রি হয়েছে ২০ লাখ টাকায়। ব্যাটটি কিনেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী একজন বাংলাদেশি। তার নাম রাজ। এই অর্থের পুরোটাই সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশনে দিয়েছেন তিনি। যা দিয়ে সহায়তা করা হয়েঝছে করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগের সময় অসহায় মানুষদের।

ব্যাট নিলাম প্রসঙ্গে সাকিব বলেছিলেন, 'আমি আগেও বলেছিলাম আমার একটি ব্যাট নিলামে তুলতে চাই। গত ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলা ব্যাটটি নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওই ব্যাটটা আমার অনেক প্রিয় একটি ব্যাট। গত বিশ্বকাপে ব্যাটে-বলে আমার পারফরম্যান্স বেশ ভালো ছিল। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল। একটি ব্যাট দিয়েই পুরো বিশ্বকাপে ব্যাটিং করেছি, টেপ লাগিয়েও খেলেছি।'

'এই ব্যাট দিয়ে শুধু বিশ্বকাপে ব্যাটিং করেছি তা নয়। বিশ্বকাপের আগে, বিশ্বকাপের সময় এবং পরে এই ব্যাট দিয়ে দেড় হাজারেরও বেশি রান করেছি। যদিও আমার খুব প্রিয় ব্যাট এটা। করোনা ভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে আমার প্রিয় ব্যাটটি যদি তহবিল গঠনে অবদান রাখতে পারে, এমন ভাবনা থেকে ব্যাটটি নিলামে তুলছি।'

ব্যাট বিক্রির কিছুদিন পরই দ্বিতীয় সন্তানের জনক হন সাকিব। এপ্রিলের ২৪ তারিখে বিকেল সাড়ে চারটায় সাকিবের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরের কোল আলোকিত করে আসে আরও এক কন্যা সন্তান। দ্বিতীয় মেয়ের নাম রেখেছেন ইরাম হাসান।

মাঝে হঠাৎ করে অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার মুখোমুখি হন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। বকেয়া বেতনের দাবিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনীতে বিক্ষোভ করেন সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের কাঁকড়া হ্যাচারির শ্রমিকরা।

তারা চার মাস ধরে বেতন না পাওয়ার অভিযোগ এনে ২০ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ-নীলডুমুর সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এরপর অবশ্য সাকিবের হস্তক্ষেপে সেই শ্রমিকরা নিজেদের পাওনা বুঝে পান।

ফার্মের আরেক অংশীদার সগীর হোসেন পাভেল এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, 'এই ঘটনার পর আমি সাকিবের সঙ্গে গতকাল কথা বলেছি। আমরা আজ ম্যানেজারের সঙ্গে আলোচনায় বসব। সাকিব শ্রমিকদের সকল বকেয়া পরিশোধ করে দিতে বলেছে, যদিও আমরা আগেই বলেছি ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সকল বকেয়া দিয়ে দেওয়া হবে এবং সাকিব এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন। গতকাল যা ঘটেছে তা সত্যিই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং আমরা বিস্মিত।'

এই ঘটনার পর বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতর অবনতি ঘটলে বন্যার্তদের উদ্দেশ্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন সাকিব। বন্যার্ত মানুষের সাহায্যে গালফ অয়েল বাংলাদেশ ও নিজের ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে চ্যারিটি নিলাম আয়োজন করেছিলেন তিনি। সেখান থেকে অর্জিত সকল টাকা দিয়ে সহায়তা পাঠিয়েছিলেন তিনি। সিরাজগঞ্জ, বগুড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় খাদ্য সামগ্রী পাঠানো হয়।

এরপর বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজকে সামনে রেখে প্রায় সাড়ে ৫ মাস পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেন সাকিব। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে দেশে এসে বিকেএসপিতে অনুশীলন শুরু করেন তিনি।

নিজের ফিটনেস ফিরে পেতে সাকিব যখন কঠোর অনুশীলন করে যাচ্ছিলেন তখনই কোয়ারেন্টাইনের সময়কাল নিয়ে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় স্থগিত হয়ে যায় সিরিজটি। সিরিজ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় অনুশীলন বন্ধ করে চলতি মাসের ১ তারিখে আবারও যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার আগে ঢাকাইয়া ভাষায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নতুন টিভিসি করেছেন তিনি। যেখানে দেখা যায় চাল-ডালের আড়তদার ঢাকাইয়া কুট্টির সাজে সাকিব। সহজ বাংলায় পুরান ঢাকার একজন ব্যবসায়ী। বেশ ভালোভাবেই চলছিল তার এ ব্যবসা। 

হঠাৎ করে আশেপাশের মানুষের কথা শুনে বিনিয়োগ করেন শেয়ার বাজারে। কিছু না জেনে না বুঝে বিনিয়োগ করার ফলে বড় অঙ্কের লসের মুখ দেখতে হয় তাকে। কীভাবে বিনিয়োগ করলে লসের মুখ দেখবেন না-এই শিক্ষা দিতেই ঢাকাইয়া কুট্টির সাজে দেখা গেছে তাকে।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসের ১০ তারিখের দিকে আবারও দেশে ফিরবেন সাকিব। ১৫ নভেম্বন থেকে কর্পোরেট লিগ আয়োজন করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তখন সাকিবের নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ওই লিগ খেলতেই দেশে আসবেন তিনি। জানা গেছে একটি দলের নেতৃত্ব দিতেও দেখা যেতে পারে তাকে।