বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ

অপেক্ষার পালা ফুরাচ্ছে তাদেরও

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 17:37 বৃহস্পতিবার, 08 অক্টোবর, 2020

 || ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

স্থগিত হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কা সফরের কথা মাথায় রেখে অনেক আগেই অনুশীলন শুরু করেছিলেন তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিমরা। তবে শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা সফরে না গেলেও, মাঠের লড়াইয়ে ঠিকই ফিরেছেন তাঁরা। নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে খেলেছেন দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ। 

করোনার বিরতির পর সিনিয়ররা ক্রিকেট মাঠে খেলার স্বাদ পেলেও অপেক্ষায় ছিলেন যুব বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটাররা। অবশেষে অপেক্ষার পালা ফুরাচ্ছে এই তরুণদেরও। ১১ই অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া তিন দলের ওয়ানডে সিরিজের জন্য সুযোগ দেয়া হয়েছে যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের ৮ ক্রিকেটারকে। 

শুরুতে ৯ জনের নাম থাকলেও চোটের কারণে ছিটকে গেছেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী নিপুন। আকবর আলী, তানজিদ তামিম, পারভেজ হোসেন ইমনরা আগামী ৯ অক্টোবর ৫০ ওভারের টুর্নামেন্টের দলের সঙ্গে যোগ দেবেন।

এই মুহূর্তে বিশ্বকাপ জয়ীরা ব্যস্ত আছেন ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হাই পারফরম্যান্স দলের (এইচপি) ক্যাম্পে। এখান থেকেই ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ক্যাম্পে যাবেন তাঁরা। এইচপি ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ২৬ জনের মধ্যে ১২জন বিশ্বকাপজয়ী স্কোয়াডের সদস্য।

বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফেরার পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিসিবি একদশের হয়ে খেলেছিলেন আকবর-তামিমরা। এরপর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) খেললেও করোনার প্রকোপে আপাতত তা বন্ধ। যে কারণে প্রায় ৭ মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরছেন তামিম-রাকিবরা।

লম্বা সময় পর ক্রিকেট মাঠে ফেরার পাশাপাশি এতো বড় প্ল্যাটফর্মে খেলতে পারার সুযোগটাকে বড় করেই দেখছেন এই তরুণরা। তানজিদ হাসান তামিম ক্রিকফ্রেঞ্জিকে জানিয়েছেন, বিশ্বকাপের পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেই চোখ ছিল তার। করোনায় সেই সুযোগ হাতছাড়া হলেও বড়দের সঙ্গে খেলতে মুখিয়ে আছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

তামিম বলেন, 'আসলে ভালো লাগার বিষয়। কারণ বিশ্বকাপের পর থেকে আমাদের প্রিমিয়ার লিগ শুরু হয়েছিল। ওখানে নিজেদের প্রমানের সযোগ ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সবকিছু স্থগিত হয়ে গেছে। পুরো বিশ্বেই তো একই অবস্থা। এখন আবার নতুন করে সব শুরু হবে। তখন একটা ফ্লোতে ছিলাম। এখন নতুন চেষ্টা করতে হবে। ইনশাআল্লাহ সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবো। আবার আগে যে ফর্মে ছিলাম, সেটাতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করবো।'

যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি হাঁকানো মাহমুদুল হাসান মুখিয়ে আছেন বড়দের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার জন্য। সিনিয়রদের সঙ্গে খেলায় চাপ থাকলেও সেটাকে উপভোগ করতে চান এই তরুণ। 

মাহমুদুল বলেন, 'এখন সিনিয়রদের সঙ্গে খেলা একটু চাপ থাকবে কিন্তু এটা যদি আমরা উপভোগ করি। তাহলে ইনশাআল্লাহ ভালো ফলাফল করতে পারবো উনাদের সঙ্গে আমরা ড্রেসিং রুম শেয়ার করবো। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ। উনাদের সঙ্গে কথা বলে চেষ্টা করবো বিভিন্ন বিষয়ে জানার।'

ওপেনার পারভেজ হোসেন ঈমনের লক্ষ্য নিজের শতভাগ দেয়ার। তবে বাড়তি কিছু নিয়ে ভেবে চাপ বাড়াতে নারাজ এই তরুণ। তিনি বলেন, 'এটা খুবই এক্সাইটিং। খেলা শুরু হচ্ছে অনেক দিন পর। তাও আবার অনেক ভালো একটা টুর্নামেন্টে সুযোগ দেয়ার। এখানে ভালো করলে আমার ভবিষ্যতেও কাজে লাগবে। তবে এসব নিয়ে এতো ভাবছি না। ভাবলে চাপ হয়ে যায়। আমি চেষ্টা করছি যত স্বাভাবিক থাকা যায়।'

স্পিনার রাকিবুল হাসান অবশ্য সিনিয়র কাছ থেকে শিখতেই বেশী আগ্রহী। তিনি বলেন, 'প্রিমিয়ার লিগে যে  দলে খেলেছি, তেমন সিনিয়র খেলোয়াড় ছিল না। চেষ্টা করবো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস, লিটন দাস ভাইরা যারা আছে তাদের কাছ থেকে শেখার।'

বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক আকবর আলীর কাছে খেলা উপভোগ করাটাই প্রধান। উইকেট রক্ষক এই ব্যাটসম্যান তাই তো বাড়তি কিছু ভাবতে চাইছেন না। তবে এখানে সিনিয়রদের থেকে শিখতে চান তিনিও। তবে বাড়তি পরিকল্পনা নেই ঠাণ্ডা মাথার এই ব্যাটসম্যানের। 

আকবর বলেন, 'আমি খুব বেশি কিছু চিন্তা করতেছি না। হ্যাঁ এক্সাইটেড আছি। কিন্তু চেষ্টা করবো যতটুকু উপভোগ করা যায় আর শেখা যায়। খুব বেশি পরিকল্পনা করছি না। অনেক কিছু শেখার থাকবে অবশ্যই। সবাইকে কাছ থেকে দেখতে বা থাকতে পারলে অবশ্যই কিছু না কিছু শিখতে পারবো।'

১১ অক্টোবর শুরু হবে তিন দলের টুর্নামেন্টটি। যার নাম দেয়া হয়েছে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ। টুর্নামেন্টের ফাইনাল হবে ২৩ অক্টোবর। এই তিন দলের নেতৃত্বে থাকবেন দেবেন তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও নাজমুল হোসেন শান্ত।

মোট ৪৫ ক্রিকেটার এই সিরিজে অংশ নিচ্ছেন। ডাবল লিগের প্রত্যেকটি ম্যাচ হবে দিবারাত্রির। ফাইনাল ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে টেলিভিশনে। একই সঙ্গে সবকটি ম্যাচই হবে জৈব সুরক্ষিত পরিবেশে এবং দর্শক শুন্য স্টেডিয়ামে।

১১ অক্টোবর মিরপুরে হবে প্রথম ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে লড়বে মাহমুদউল্লাহ একাদশ এবং নাজমুল একাদশ। পরের ম্যাচ ১৩ অক্টোবর। এই ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ একাদশের প্রতিপক্ষ তামিম একাদশ।। ১৫ই অক্টোবর তামিম একাদশের মুখোমুখি হবে নাজমুল একাদশ।

১৭,১৯ এবং ২১ অক্টোবর আবারও একই সূচীতে হবে আরও তিনটি ম্যাচ। প্রতি ম্যাচের পর একদিনের রিজার্ভ ডে রাখা হয়েছে। ফাইনাল হবে ২৩ অক্টোবর। পরেরদিন রিজার্ভ ডে। টুর্নামেন্টে জয়ী দলের জন্য থাকছে প্রাইজ মানিও। 

স্কোয়াডঃ

মাহমুদউল্লাহ একাদশ: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), নাঈম শেখ, লিটন দাস, মুমিনুল হক, মাহমুদুল হাসান, নুরুল হাসান সোহান, সাব্বির রহমান, ইমরুল কায়েস, হাসান মাহমুদ, এবাদত হোসেন, রুবেল হোসেন, আবু হায়দার রনি, মেহেদী হাসান মিরাজ, রাকিবুল হাসান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।

স্ট্যান্ডবাই: সানজামুল ইসলাম ও হাসান মুরাদ।

নাজমুল একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান, আফিফ হোসেন, মুশফিকুর রহিম, তৌহিদ হৃদয়, ইরফান শুক্কুর, পারভেজ হোসেন ঈমন, তাসকিন আহমেদ, আল আমিন হোসেন, আবু জায়েদ রাহী, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ, নাঈম হাসান, নাসুম আহমেদ, রিশাদ হোসেন।

স্ট্যান্ড বাই: সুমন খান, সাদমান ইসলাম ও তানভীর ইসলাম।

তামিম একাদশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ মিঠুন, শাহদাত হোসেন, ইয়াসির আলী, আকবর আলী, এনামুল হক বিজয়, সাইফ উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, খালেদ আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, তাইজুল ইসলাম, মিনহাজুল আবেদিন আফ্রিদি।

স্ট্যান্ডবাই: শফিকুল ইসলাম, মাহিদুল অঙ্কন ও মেহেদী হাসান রানা