জোন্সের বিদায়

একজন আধুনিক ক্রিকেটের রূপকারের গল্প

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 20:35 বৃহস্পতিবার, 01 অক্টোবর, 2020

|| ডেস্ক রিপোর্ট || 

পুরোদস্তুর একজন ব্যাটসম্যানের পরিচয় ছাপিয়ে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকাতেই বেশি জনপ্রিয় ছিলেন ডিন জোন্স। এমনকি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার আগের দিনও ধারাভাষ্য দিয়েছিলেন তিনি।

তাই যারা এই অস্ট্রেলিয়ানের ব্যাটিং দেখেননি, তাদের কাছে জোন্স যে শুধুই একজন ধারাভাষ্যকার হিসেবে পরিচিত হবেন, এতে আর আশ্চর্য কি! তবে যারা ক্রিকেটের পাঁড় ভক্ত এবং যাদের রক্তে খেলাটি মিশে আছে তাঁদের কাছে 'একজন' জোন্সের মহিমা ভিন্নধর্মীই বটে।

আধুনিক ব্যাটিংয়ের রূপকার হিসেবে বরাবরই আখ্যা দেয়া হয় সদ্য প্রয়াত জোন্সকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর শুরুতে কোচিংয়ে মনোনিবেশ করেছিলেন প্রতিথযশা এই ব্যাটসম্যান। পরবর্তীতে ধারাভাষ্যকার হিসেবে আবির্ভাব ঘটে তাঁর। ক্রিকেটের মতো এখানেও সাফল্যের চূড়ায় উঠেন তিনি। কিন্তু জীবনের লড়াইয়ে জোন্সের সফলতার গল্পটা খুব একটা দীর্ঘ হলো না। 

আইপিএল সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হলেও অফ-টিউব ধারাভাষ্য দেয়া হচ্ছে মুম্বাই থেকে। স্টার ইন্ডিয়ার আমন্ত্রণে ডিন জোন্সও গিয়েছিলেন সেখানে। সিলেক্ট ডাগ আউট নামে অফ-টিউব সেই ধারাভাষ্য অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তাও পেয়ে গিয়েছিল তাঁর কল্যাণে। কিন্তু পুরো আইপিএল জুড়েই জোন্সের ধারাভাষ্য এবং বিশ্লেষণ দেখার আশায় বসে ছিলেন যারা, তাদের হতাশ করে আকস্মিকভাবে গত ২৪ সেপ্টেম্বর হার্ট অ্যাটাকে বিদায় নেন এই অজি। তাঁর স্বদেশি ব্রেট লির প্রাণান্তকর চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি তাঁকে।  

অনেকের কাছে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের নায়ক ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তী ভিভ রিচার্ডস। তবে কারো কারো কাছে ১৯৮০-৯০ দশকে ডিন জোন্স সবার চেয়ে আলাদা। তাঁর সময়ের দানব পেস বোলারদের অহম মাটিতে নামিয়ে আনতে যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯৮৭ সালে বিশ্বকাপ জিতেছেন জোন্স। ছিলেন মর্যাদার অ্যাশেজ জয়ী দলের সদস্যও। তবুও টি-টোয়েন্টির এই যুগে অজি কিংবদন্তি যে হতেন ‌‌'সোনার হরিণ', সেটা এখনো বিশ্বাস করেন অনেকে। তার প্রমাণ দিতেই ডিন হয়তো ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে। কখনো কোচ, কখনো ধারাভাষ্যকার অথবা কখনো বিশ্লেষক হিসেবে।

গ্রেগ চ্যাপেল যখন বিদায় বলেছেন ক্রিকেটকে, তখন একজন তরুণ প্রতিভা খুঁজছিল অস্ট্রেলিয়া। সেসময়েই বেঁছে নেয়া হয় ডিন জোন্সকে। আর তিনি নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন নিজের সবটা উজাড় করে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৫২ টেস্টে ৩৬৩১ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি।

জোন্সকে আলাদা করে মনে রেখেছেন যারা, তাদের স্মৃতিতে জ্বলজ্বলে হয়ে আছে ১৯৮৬ সালের চেন্নাই টেস্ট। সেই ম্যাচে অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল অবধি যেতে হয়েছিল তাঁকে। অথচ এর আগে পর্যন্ত হাল ছাড়েননি তিনি। লড়াই চালিয়ে ২১০ রানে থামেন এই অজি ব্যাটসম্যান। 

শুধু তাই নয়, পেস বোলারদের ডাউন দ্য উইকেটে এসে আক্রমণ করারও উদ্ভাবক ডিন জোন্স। একই সঙ্গে বেশ জোরে দৌড়াতে পারতেন তিনি। ছিলেন দুর্দান্ত ফিল্ডারও। অবশ্য ফিল্ডার বলতেই ডিনের আরো একটি ‌নতুন শুরুর কথা এসে যায়।

চশমা পরে ফিল্ডিংয়ের সূচনা হয় জোন্সেরই হাত ধরে। একই সঙ্গে ব্যাটিংয়েও আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি। সবমিলিয়ে আধুনিক ক্রিকেটের পথিকৃৎ হিসেবে সকল গুণই ছিল তাঁর মধ্যে। অকালে বিদায় নেয়া এই কিংবদন্তি নিজের কীর্তি দিয়ে অমর হয়ে থাকবেন কোটি ক্রিকেট প্রেমীর হৃদয়ে।