বাংলাদেশ ক্রিকেট

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাজপুত্রের ১৪ বছর

নাহিয়ান আরেফিন

নাহিয়ান আরেফিন
প্রকাশের তারিখ: 14:09 বৃহস্পতিবার, 06 আগস্ট, 2020

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

সময়টা ২০০৬ সাল। ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে জিম্বাবুয়ে সফরে যায় বাংলাদেশ। প্রথম চার ম্যাচের ভেতর তিন ম্যাচে জয় পাওয়ায় পঞ্চম এবং শেষ ম্যাচে টিম ম্যানেজমেন্ট অভিষেক করায় দুই তরুণ ক্রিকেটারের। এদের ভেতর একজন ছিলেন জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম, এবং অপরজন সাকিব আল হাসান।

দিনটি ছিল ৬ আগস্ট। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৩ তম ওভারে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বোলিংয়ের সুযোগ পান সাকিব আল হাসান। ম্যাচের ৪১ তম ওভারের ৩য় বলে শূণ্য হাতেই ফেরান সে সময়কার ত্রাস এলটন চিগাম্বুরাকে। বাগিয়ে নেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট। এরপর ব্যাট হাতে খেলেন ৪৯ বলে অপরাজিত ৩০ রানের এক ইনিংস। দলকে এনে দেন ৮ উইকেটের বড় জয়।

এরপর কেটে গেছে ১৪টি বছর। সেদিনকার সেই সাকিব দেখতে দেখতে পৌঁছে গেছে বিশ্বসেরার তালিকায়। ঠিক ১৪ বছর আগে আজকের এই দিনেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন সাকিব। তখন কে জানতো একদিন এই সাকিব বিশ্ব ক্রিকেট রাজত্ব করবে... ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই রাজার আসনে বসবে। দেশ ছাড়িয়ে রাজত্ব করবে বিশ্ব ক্রিকেটেও...

আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষিক্ত হওয়ার তিন বছরের দেশকে চেনান বিশ্বের কাছে। অলরাউন্ড নৈপূণ্যে সাকিব অভিষেকের তিন তিন বছরের ভেতর পৌঁছান ওয়ানডে অলরাউন্ডার র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে, তারও দুই বছর পর নিজের জায়গা করে নেন তিন ফরম্যাটেরই র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে।

অভিষেকের পর থেকে পার করা ১৪ বছরে দেখেছেন ক্যারিয়ারের অনেক চড়াই উৎরাই। কিন্তু প্রতিবারই সেগুলো পেরিয়ে ফিরে এসেছেন সদর্পে। চিনিয়েছেন নিজেকে। ভরসার জায়গা হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন ক্রিকেট ভক্তদের মনে। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন সম্মানজনক অবস্থানে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখার পর কেটে গেছে ১৪টি বছর। পা রাখলেন আজ সাকিব আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ১৫ তম বছরে। এই লম্বা সময় ধরে নিজের শ্রেষ্ঠত্বেরই প্রমাণ দিয়ে চলেছেন সাকিব। একবারও বাদ পড়তে হয়নি ফর্মহীনতার কারণে।

এখন পর্যন্ত সাকিব আল হাসান সফলতার সঙ্গে খেলেছেন ৩৩৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এর ভেতর সাদা পোশাকে ৫৬টি, ওয়ানডে ২০৬টি এবং ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন সাকিব ৭৬টি।

টেস্ট ক্রিকেটে ৫৬ ম্যাচে ৫ সেঞ্চুরি ও ২৪ হাফসেঞ্চুরিতে সাকিবের সংগ্রহ ৩ হাজার ৮৬২ রান, যেখানে তার গড় ৩৯.৪০। বল হাতে রয়েছে ইনিংসে ১৮ বার পাঁচ উইকেট এবং ম্যাচে দুইবার  ১০ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। দেশের একমাত্র বোলার হিসেবে দুইশত টেস্ট উইকেট পাওয়া সাকিবের বর্তমান শিকারকৃত উইকেট সংখ্যা ২১০।

এবার আসা যাক রঙ্গিন পোশাকের ক্রিকেটে। ওয়ানডে ফরম্যাটে ২০৬ ম্যাচ খেলে ৯ সেঞ্চুরি ও ৪৭ ফিফটিতে করেছেন ৬৩২৩ রান। ব্যাটিং ৩৭.৮৬, রান করেছেন ৮২.৭৫ স্ট্রাইকরেটে খেলে। একদিনের ক্রিকেটে বল হাতে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ২ বার আর তার এঈ ফরম্যাটে মোট শিকার ২৬০ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে ৭৬ ম্যাচ খেলে ১৫৬৭ রানের পাশাপাশি ৯২ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন সাকিব।

গেল বছরের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কর্তৃক দুই বছরের জন্য (এক বছরের এর স্থগিতাদেশ) ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন ক্রিকেটের এই বরপুত্র। জুয়ারির আহ্বানে সাড়া না দিয়েও সেই তথ্য গোপন করায় এই নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন সাকিব। চলতি বছর কাটবে তা নিষেধাজ্ঞা। এরপর আবার ফিরবেন সাকিব ২২ গজে, আবার মাতাবেন গ্যালারী। মাতাবেন ক্রিকেট দুনিয়াকে।