করোনা পরিস্থিতি

সবই তো আছে, শুধু ক্রিকেটটাই নেই

আংকিত নন্দী

আংকিত নন্দী
প্রকাশের তারিখ: 18:10 সোমবার, 13 জুলাই, 2020

|| স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ||

সোমবার (১৩ জুলাই), সকাল ১০টা ৪০ মিনিট।

দেশের হোম অব ক্রিকেট মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মেইন গেইটে তখন এক আগুন্তক দাঁড়িয়ে। গেইটটা বন্ধ। কোনো নিরাপত্তা কর্মীও নেই। ভদ্রলোক ফাইল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষণ পরই এক নিরাপত্তা কর্মী আসলেন হাতে মোবাইল নিয়ে। একটু পর বোঝা গেল মোবাইলটা ওই আগুন্তকের। হয়তো কোনো কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে পাঠিয়েছিলেন।

কিছুক্ষণ পর আবার ওই নিরাপত্তা কর্মী ফিরে আসলেন। উদ্দেশ্য সফল হয়নি, তার মুখায়ব তাই বলছিল। অগত্যা মোবাইল নিয়ে ফিরে গেলেন সেই আগুন্তক।

ওই নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে তখন গেইটের দিকে এসেছিলেন বিসিবির নিরাপত্তা কর্মীদের পরিচিত মুখ আলী হোসেন। পরে দুজনই ফিরে গেল বিসিবি একাডেমির দিকে।

রোদ ততক্ষণে চড়ে উঠেছে। মেইন গেইট আবারও শুনশান নীরবতায় আচ্ছন্ন হলো। গেইটে আর কোনো নিরাপত্তাকর্মী থাকলো না। অবশ্য দরকারও পড়ে না, কারণ গেইটের তালা খুলে দেয়ার কাজ নেই বললেই চলে।

সোমবার ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে টানা ৪০ মিনিট অবস্থান করে স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরে প্রবেশে ইচ্ছুক আর কোনো দর্শনার্থীর দেখা মিললো না। করোনাকালে এটাই হয়তো শেরেবাংলার নিয়মিত চিত্র।

গেইট থেকে দৃষ্টি সরিয়ে স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরে তাকালেও খুব বেশি মানুষ চোখে পড়বে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দুলকি চালে চলছেন এমন দৃশ্যই দেখা যায়। আশ্চর্য এক নীরবতায় আচ্ছন্ন মিরপুর স্টেডিয়াম। কোলাহল মুখর স্টেডিয়ামে মানুষের দেখা পাওয়াই যেন ভার।

বিসিবি কার্যালয়ের দোতলায় গেম ডেভলপমেন্ট বিভাগে কয়েকবার নিরাপত্তাকর্মীকে আসা-যাওয়া করতে দেখা গেছে। হয়তো কোনো কর্মকর্তা অফিসে ছিলেন। চার তলায় বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির রুমেও নিরাপত্তা কর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কয়েকজন হাজির হয়েছিল। খানিক পরে দেখা গেল টুর্নামেন্ট কমিটির সহকারী ম্যানেজার সাইদুল ইসলাম অফিসে প্রবেশ করলেন।

করোনার সময়ে নিয়মিত অফিস করতে হচ্ছে না বিসিবির কর্মকর্তাদের। সিংহভাগই বাসা থেকে কাজ করছেন। জরুরী প্রয়োজনে কেউ কেউ অফিসে আসছেন। যার ফলে প্রতিদিনই কেউ না কেউ অফিসে আসেন। বিসিবি একাডেমির সুরম্য ভবনটা নিথর পড়ে আছে। কোনো শব্দ নেই। প্রধান ফটক খোলা। অভ্যর্থনা কক্ষে বরাবারের মতোই নিরাপত্তা কর্মী আলী হোসেন বসে আছেন।

একাডেমি ভবনের পর এক নম্বর গেইট পেরিয়েই একটি লোহার গেইট। যার ফাঁক-ফোকর দিয়ে একাডেমি মাঠে ক্রিকেটারদের অনুশীলন দেখতে ভিড় করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। এদিন চোখ ফেলতেই দেখা গেল, একাডেমি মাঠটা সবুজে আচ্ছাদিত হয়ে আছে। মুগ্ধতা ছড়াবে, চোখে প্রশান্তি যোগাবে মাঠের সবুজ ঘাস। যেন ঘাসের মখমল বিছিয়ে রাখা হয়েছে মাঠে। এই সবুজের বেড়ে উঠা নির্বিঘ্ন হচ্ছে। এখন আর একাডেমি মাঠে মানুষের পা পড়ে না।

তিন-চার নম্বর গেইট দিয়ে গণমানুষের চলাচলের সুযোগ রয়েছে। গেইট দুটিই খোলা। কারণ স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরে থাকা ফার্নিচারের দোকানগুলো খোলা আছে। সঙ্গত কারণেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের অবস্থান চোখে পড়ে। দোকান থাকায় ভ্যানচালকরা ছিলেন, অনেক মানুষ আবার গাছের ছায়ায় বসে ক্লান্তি দূর করছেন।

করোনার ঝুঁকি বিবেচনায় মিরপুর স্টেডিয়ামে ক্রিকেটারদের একাকী অনুশীলনকেও নিরুৎসাহিত করেছে বিসিবি। কারণ মিরপুর অঞ্চলও করোনার রেড জোনে পড়ে গেছে। অথচ এই রেড জোনেই দোকানগুলো খোলা থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা মিলে শ’শ মানুষের পদচারণা রয়েছে স্টেডিয়াম চত্বরেই। স্টেডিয়ামের সামনে রাস্তায় দোকানপাট খোলা আছে। জীবন থেমে নেই। সর্বস্তরের মানুষই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। সামগ্রিক আবহ ঘুরে দেখার পর নিশ্চিতভাবে আপনার মনে উঁকি দিবে, সবই তো আছে, শুধু ক্রিকেটটাই নেই!

ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু হয়ে গেছে। করোনায় বিপর্যস্ত পাকিস্তানও তাদের দলকে ইংল্যান্ড সফরে পাঠিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনার মাঝেই ক্যাম্প পরিচালনা করেছে। জনা দশেক ক্রিকেটারের করোনা পজেটিভ হওয়ার খবরও দমাতে পারেনি পিসিবিকে। ঠিকই ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা। অনুশীলনে নেমেছে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানও। সর্বত্রই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্রিকেট শুরু হয়েছে।  

বাংলাদেশে কবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তা কারোই জানা নেই। পরিবেশের উন্নতি দেখলেই ক্রিকেট শুরু করতে চায় বিসিবি। যদিও খোদ ক্রিকেটাররাই বিসিবির অপেক্ষায় বসে নেই। ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন জায়গায় অনুশীলন করছেন মুশফিকুর রহিম-সাইফউদ্দিনরা। তবে আভাস মিলেছে শেরেবাংলায় প্রাণ ফিরতে পারে আগামী মাসে। আগস্টে শুরু হতে পারে জাতীয় দলের ক্যাম্প।

তখন নিস্তব্ধতা ভেঙে শের-ই-বাংলাও ফিরবে আপন মহিমায়।