ক্রাইস্টচার্চ হামলা

ক্রাইস্টচার্চের স্মৃতি আজও পোড়ায় সৌম্যকে

নাহিয়ান আরেফিন

নাহিয়ান আরেফিন
প্রকাশের তারিখ: 13:14 মঙ্গলবার, 26 মে, 2020

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

২০১৯ সালের ১৫ মার্চ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের টেস্ট খেলতে ক্রাইস্টচার্চে অবস্থান করছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দিনটি শুক্রবার হওয়ায় জুমার নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন জাতীয় দলের কয়েকজন খেলোয়াড়। কিন্তু যেই মসজিদে যাচ্ছিলেন তাঁরা, পথিমধ্যেই জানতে পাড়েন, সেই মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। এলোপাতারি গুলিতে ঘাতক কেড়ে নিয়েছিল ৫১টি তাজা প্রাণ। কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।

সেই ঘটনার পর অনেকটা ট্রমার ভেতর ছিলেন হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া ক্রিকেটাররা। ঘটনার এক বছর কেটে গেলেও সেদিনকার স্মৃতি ভুলতে পারছেন না জাতীয় দলের ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার। এখনও সেদিনকার কথা মনে পড়লে শিউরে উঠেন এই ক্রিকেটার।

সম্প্রতি ক্রিকফ্রেঞ্জিকে দেয়া এক লাইভ সাক্ষাৎকারে হামলার দিনের স্মৃতিচারণ করছিলেন এই টাইগার ব্যাটসম্যান।

সৌম্য বলেন, 'সর্বপ্রথম বলবো যে এরকম যেন কারো সাথে না হয়। ওই সময় মনে হয়েছিল যে মরে যাচ্ছি। মরার যে একটা ভয়, মরার সময় যে কেমন লাগে সেই ফিলটা চলে এসেছিল কিছু সময়ের জন্য। আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না যে আমি কি করবো। বাসের ভেতর সবাই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম যে কি করা উচিৎ।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সৌম্য বলেন, 'ওখানকার ড্রাইভাররা নিয়ম বেশ মানে। সে পেছনে যেতে চাইছিল না। সামনেই যাবে সে। আর সামনেই সেই মোড়টা ছিল। সেখানে মানুষ রাস্তায় মরে পড়ে আছে, লোকজন হাতে গুলি খেয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে হাত ধরে। সবাই একটা আতঙ্কে, আমরাও বেশ আতঙ্কে ছিলাম। তখন একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে বাসের পেছনের দরজা খুলে আমরা হেঁটে চলে যাব।'

'যেখানে ছিলাম আমরা ওখানে একটা পার্কের মতো ছিল। পার্কের ভেতর দিয়ে গেলেই খোলা মাঠ। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ভেতর দিয়ে যাবো না। ভেতর দিয়ে গেলে হয়তো পুলিশই আমাদের চার্জ করা শুরু করলো বা অন্য কিছু হতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত নেয়া হল বাস থেকে নেমে সোজা হেঁটে চলে যাব স্টেডিয়ামে। ওই ছবিটাই সবখানে ভাইরাল হয়েছিল যে আমরা হাটছি।'

হামলার সেই স্মৃতি আজও সৌম্যের মনে দগদগে ক্ষতের মতো বিরাজ করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ড্রেসিংরুমে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরা থাকবো না, চলে যাবো। সে সময় এই কথা ছাড়া কারো মুখে কিছু শুনি নাই। কেউ বলে নাই যে খেলবো। সেই রাতে হোটেলে গিয়ে আমরা কেউ ঘুমাইনি। ওই রাতটা মনে করলেই... কি বলবো। আমার মনে হয় আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের রাত ছিল সেটা। সবচেয়ে বড়ও। মনে হচ্ছিলো শেষ হচ্ছিলো না রাতটা।'