তামিমের উপহার

উপহার ব্যাগে তামিমের নাম দেখে অবাক ১৫০ ঊর্ধ্ব পরিবার

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 21:44 শুক্রবার, 24 এপ্রিল, 2020

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের খেটে খাওয়া মানুষজন। এই কঠিন সময়ে এই দুস্থ এবং অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছেন বিত্তবানরা। এগিয়ে এসেছেন ক্রিকেটাররাও। 

সমাজকর্মী নাফিসা খানের ডাকে সাড়া দিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ২৪ এপ্রিল (শুক্রবার) ঢাকা শহরের ৯টি এলাকায় তামিমের পক্ষ থেকে উপহার পৌঁছেছে  ১৫০ ঊর্ধ্ব পরিবারের কাছে। যার মধ্যে ৮০ শতাংশ মধ্যবিত্ত এবং ২০ শতাংশ পরিবার ছিলেন দিনের খাবার দিনে যোগাড় করেন।

সকাল ১১টার পর মিরপুর এলাকা থেকে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই উপহার দেয়া শুরু করেন নাফিসা। প্রত্যেকটি প্যাকেটের গায়ে 'আপনার জন্য আমার উপহার-তামিম ইকবাল' কথাটি লিখা ছিল। উপহার হাতে পেয়ে অনেকেই চমকে গেছেন বলে জানিয়েছেন নাফিসা।

ক্রিকফ্রেঞ্জিকে নাফিসা খান বলেন, 'আমার কিছু বাজার বাকি ছিল, সকালে সেগুলো সেরে ফেলি। এরপর সাড়ে ১০টা থেকে প্যাকিং শুরু করি। এর মাঝে আমরা ছোট কাগজে তামিম ইকবালের ছবি এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লাগিয়ে খাবারগুলো প্যাকিং করি। যেন মানুষ বুঝতে পারে উপহারগুলো তামিম ইকবালের পক্ষ থেকে যাচ্ছে। 

প্রথমে আমরা মিরপুরে উপহার দেই। এরপর উত্তরা বিবানবন্দর এলাকায়, বাড্ডা, রামপুরা, শনিরআখড়া, লালবাগ, বঙ্গবাজার সহ পুরান ঢাকা এবং ওয়ারি সহ মোট ৯টি জোনে যাই। আমরা যে পরিমাণ খাবার দিয়েছি তাঁর ৮০ শতাংশই ছিলে মধ্যবিত্ত পরিবার। ২০ শতাংশ ছিল দিন আনে দিন খায় এমন মানুষ। 

প্রতিটি প্যাকেটে মোট ১৪টি আইটেম ছিল বলে আরও জানিয়েছেন নাফিসা। ছোট বাচ্চাদের জন্য এক লিটার দুধ এবং ওষুধও ছিল সেখানে। তামিমের উপহারের পাশাপাশি তিনি নিজেও সাহায্য করেছেন। এক দিনে ২৬০-২৬৫ জন পরিবারের কাছে পৌঁছেছে এই সাহায্য।  

নাফিসা আরও বলেন, ''মোট ১৪টির মতো আইটেম আমরা প্রত্যেককে দিয়েছি। এর মধ্যে ছিল চাল, মুশুরের ডাল, আলু, পেয়াজ, আটা, ছোলা, চিনি, ট্যাং, স্যালাইন, ওষুধ (নাপা-প্যারাসিলামল), বিস্কুট, এক লিটার করে দুধ ছিল (ঘরে ছোট বাচ্চা থাকলে তাদের জন্য), লবন এবং সোয়াবিন তেল ছিল। তামিম ইকবাল ভাইয়ার যে কন্ট্রিবিউশন ছিল এর সঙ্গে আমি নিজেও কিছু যোগ করেছিলাম। মোট ২৬০-২৬৫ পরিবারকে আমরা আজ উপহার দিয়েছি। এর মধ্যে তামিম ভাইর সাহায্য ছিল ১৫০'র ওপর।'

উপহার পেয়ে চমকে যাওয়া মানুষদের প্রসঙ্গে এই স্বেচ্ছাসেবী বলেন, 'আমি যাদেরকেই খাবার দিয়েছি তাঁদের কাওকেই জানানো হয়নি যে এটা তামিম ইকবালের পক্ষ থেকে। এটা দেখে চমকপ্রদ গেছেন অনেকেই। যখন ব্যাগটা হাতে পেয়েছে তারা এর সামনে ছিল 'আপনার জন্য আমার উপহার' ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। ঘরে থাকুক, সুস্থ থাকুন। এটা দেখে তারা অবাক হয়েছে।'

নাফিসা খান এখন পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি পরিবারের কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সিএনজিতে দিয়ে দিয়েছেন নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বর। ফোনে কেউ সাহায্য চাইলে তাদের ঘরে পৌঁছে যান নাফিসা।

কেউ সাহায্য করতে চাইলে তাদের ঘরেও চলে যান তিনি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাব থেকে পড়াশোনা শেষ করা নাফিসা জানিয়েছেন, তিনি সরাসরি কারো কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নিচ্ছেন না। যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের কাছ থেকেও প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী নিচ্ছেন।  

করোনা ভাইরাস প্রভাব বিস্তারের শুরু থেকেই দেশের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোতে সক্রিয় ভূমিকা তামিম ইকবালের। ওয়ানডে অধিনায়ক ২৭ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে নিজেদের বেতনের অর্ধেক করে দিয়ে বড় অঙ্কের তহবিল অনুদান দিয়েছেন।

করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া জুনিয়র এক অ্যাথলেটের পরিবারের তিনমাসের খরচ বহন করেছেন। নারায়ণগঞ্জে ক্রিকেটার নাজমুল ইসলাম অপুর ত্রান বিতরণ কার্যক্রমে অংশ হওয়া থেকে সামাজিক সংগঠন ফুট স্টেপকে বড় অঙ্কের অনুদান দিয়েছেন। এছাড়া টিম বয় এবং ম্যাসাজম্যানদের সাহায্যার্থে সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক, রিয়াদদের সাথে ১ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন এই ওপেনার।