সাক্ষাৎকার

'বাংলাদেশের থেকে কেনিয়ার শিক্ষা নেয়া উচিত'

তামজিদুর রহমান

তামজিদুর রহমান
প্রকাশের তারিখ: 20:59 শুক্রবার, 20 মার্চ, 2020

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

একটা সময় জায়ান্ট কিলার হিসেবে বিশ্ব ক্রিকেটে পরিচিতি ছিল কেনিয়ার। ২০০৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে সেমিফাইনালেও খেলে আন্ডারডগের তকমা লাগানো দলটি।

কিন্তু কালের গর্ভে কেনিয়ার সেই সোনালী অতীত হারিয়ে গেছে এরই মধ্যে। অঘটন ঘটাতে ওস্তাদ সেই দলটি বর্তমানে ক্রিকেটে টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে। কেনিয়ার অবস্থা এখন এতটাই খারাপ যে তারা আইসিসির তৃতীয় বিভাগের দেশগুলোর কাতারে রয়েছে।

সম্প্রতি ধ্বংসের পথে থাকা কেনিয়া ক্রিকেটের অবকাঠামো, তাদের অতীত সাফল্যগাঁথা এবং নানা দিক নিয়ে ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন ২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়া দলের সদস্য আসিফ করিম। ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো সাবেক এই অলরাউন্ডার স্মৃতিচারণ করেছেন বাংলাদেশকে নিয়েও। সাক্ষাৎকারটি এখানে বিস্তারিত দেয়া হলোঃ   

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ক্রিকেট থেকে অবসরের পর এখন কি করছেন? 

আসিফ করিমঃ আমি যখন খেলতাম তখনও ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতাম। আমি বীমা কোম্পানির ব্যবসা করেছি, রিয়েল এস্টেটের করেছি। খেলাধুলার উন্নয়নের জন্য স্পোর্টস ম্যাগাজিন বের করেছি এবং গত দুই বছর ধরে একটি খেলাধুলা সংক্রান্ত অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছি। আমি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও কাজ করছি।  

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ কোন ম্যাচটি আপনার কাছে স্মরণীয় এবং কেন?

আসিফ করিমঃ দেশের হয়ে যেকোনো ম্যাচ খেলতে পারাই সম্মানের। তবে ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং কেনিয়ার মধ্যকার ম্যাচটি আমার কাছে সবচাইতে স্মরণীয়। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনার দেশের ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থা কি? 

আসিফ করিমঃ মৃতপ্রায় এবং ধ্বংসের পথে। দীর্ঘ দিন থেকেই আমাদের দেশের ক্রিকেট মৃত। এখন কেনিয়া থার্ড ডিভিশনে রয়েছে এবং আরো নিচে নামছে। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ কেনিয়া ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে নিতে করণীয় কি? 

আসিফ করিমঃ আমাদের নতুন, উপযুক্ত এবং দক্ষ মানুষ প্রয়োজন যারা এগিয়ে আসবে এবং শুন্য থেকে শুরু করবে।   

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের কিছু উল্লেখযোগ্য স্মৃতি শেয়ার করুন 

আসিফ করিমঃ অনেক স্মৃতি রয়েছে। এক নাম্বার হলো ৯৬,৯৯ এবং ২০০৩ বিশ্বকাপে খেলা। দুই নম্বর ৯৮ সালে কমনওয়েলথ গেমসে খেলা।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বাংলাদেশকে নিয়ে কোনো স্মৃতি? 

আসিফ করিমঃ ১৯৯৫ সালে আমি প্রথম বাংলাদেশে খেলতে আসি। এরপর ৯৯ এবং ২০০৬ সালে আসি ধারাভাষ্যকার হিসেবে। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশর বিপক্ষে শেষ বলে আমরা হেরে যাই। সেই স্মৃতি এখনও মনে পড়ে। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনি ২০০৩ বিশ্বকাপের একজন সদস্য, আপনার দল দারুণ খেলেছিল সেবার। এর পেছনে রহস্য কি? 

আসিফ করিমঃ এটা আসলে বেশ কিছু বিষয়ের সমন্বয় ছিল। টুর্নামেন্টটি ছিল আফ্রিকায় এবং আমাদের কয়েকটি ম্যাচ ছিল কেনিয়ার মাটিতে। শ্রীলঙ্কা এবং নিউজিল্যান্ড কেনিয়ার মাটিতে খেলেনি এর আগে। আমরা সেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়ের মতো তিনটি টেস্ট খেলুড়ে দেশকে হারিয়েছিলাম। প্রথম রাউন্ডে পাওয়া পয়েন্ট আমাদের সাহায্য করেছে টুর্নামেন্টে আরো শক্ত জায়গা করার।  

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বিশ্বকাপের পর, কেনিয়া প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে ক্রিকেট থেকে। এর কারণ কি?   আসিফ করিমঃ অসমর্থ এবং অদক্ষ প্রশাসন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ব্যবস্থা, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব এবং ঘরোয়া ক্রিকেট দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়া এর প্রধান কারণ। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ রাজনৈতিক কারণে কি ধ্বংসের পথে কেনিয়া ক্রিকেট? 

আসিফ করিমঃ আমি যেটা বলেছি যে আইসিসির কাছ থেকে প্রাপ্ত ফান্ড সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি এবং হচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসনের কোনো প্রকার দায়বদ্ধতা নেই এই অর্থ কাজে লাগানোর এবং ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে নেয়ার। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ  একজন প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসেবে কেনিয়ার ক্রিকেট বাঁচাতে আপনার পরামর্শ কি? 

আসিফ করিমঃ বর্তমান প্রশাসনকে সরে দাঁড়াতে হবে এবং বাকি সবাইকে একত্রে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে মাথা খাটিয়ে একটি কার্যকরী উপায় বের করতে হবে সামনে এগিয়ে যেতে। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনি একটি প্রসিদ্ধ ক্রিকেট পরিবার থেকে উঠে এসেছেন, তরুণদের জন্য কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন? 

আসিফ করিমঃ আমার ছেলে একজন পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে যুক্তরাজ্যে খেলছে, একই সঙ্গে কেনিয়া দলেও খেলছে। সে সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে অন্য দেশে খেলার কারণ এখানে তেমন কোনো আশা নেই।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনি কোন ফরম্যাট বেশি পছন্দ করেন এবং কেন? 

আসিফ করিমঃ সব ফরম্যাটের ক্রিকেটই চ্যালেঞ্জিং এবং রোমাঞ্চকর। প্রতিটি ফরম্যাট গুরুত্বপূর্ণ।  

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনার যুগের সঙ্গে বর্তমান যুগের ক্রিকেটের পার্থক্য কি? 

আসিফ করিমঃ ক্রিকেটে দারুণ উন্নতি হয়েছে এবং আমি খুশি যে খেলোয়াড়েরা ভালো উপার্জন করছে। এটি খেলার মান বৃদ্ধি করেছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং খেলোয়াড়দের ধারাবাহিক পারফর্ম করতে হচ্ছে। আমি পরামর্শ দিব যেন খেলোয়াড়দের উপযুক্ত বিশ্রাম দেয়া হয় যেন তারা দীর্ঘ দিন খেলতে পারে। বর্তমান ক্রিকেটের সূচি অনেক বড়।   

পরিশেষে আমি বলবো আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নিয়ে গর্বিত এবং একজন পাঁড় ভক্ত। তারা গত ২০ বছরে যে উন্নতি করেছে ক্রিকেটে তা অসাধারণ। এটা ধরে রাখো এবং সর্বোচ্চ মান বজায় রাখো। একই সঙ্গে দক্ষ প্রশাসন এবং উন্নয়নের অবকাঠামো ধরে রাখো। পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটের মানও বজায় রাখতে চেষ্টা করো। বাংলাদেশের ক্রিকেটের থেকে কেনিয়ার শিক্ষা নেয়া উচিত।