সাক্ষাৎকার

বেশি বেশি মাংস খাওঃ ডেলপোর্ট

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 13:34 বুধবার, 08 জানুয়ারি, 2020

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

টি-টোয়েন্টি যেখানে, সেখানেই ক্যামেরন ডেলপোর্ট। বিশ্ব ক্রিকেটের প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার অভিজ্ঞতা আছে দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের। তৃতীয়বারের মতো বিপিএল খেলতে এসেছেন তিনি। রংপুর রেঞ্জার্সের হয়ে বঙ্গবন্ধু বিপিএল খেলা ডেলপোর্ট ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে কথা বলেছেন নিজ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট, সেখানকার ক্রিকেটের রদবদল, বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর, বিপিএল অভিজ্ঞতা নিয়ে। সঙ্গে জানিয়েছেন, কীভাবে হার্ড হিটার হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে হয়। 

ক্রিকফ্রেঞ্জির পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বিপিএলে এখন পর্যন্ত কেমন অভিজ্ঞতা হলো?

ক্যামেরন ডেলপোর্টঃ এখন পর্যন্ত খুব ভালো সময় কেটেছে এখানে। বাংলাদেশে বার বার ফিরে আসতে ভালো লাগে। উপভোগ করি। এ নিয়ে তৃতীয়বার এসেছি খেলতে। ভালো লাগছে। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ড্রেসিং রুমের পরিবেশ কেমন? স্থানীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে কেমন কথাবার্তা হচ্ছে?

ডেলপোর্টঃ ড্রেসিং রুমের পরিবেশ এখন অনেকটা ভালো। দল শুরুতে খারাপ করেছে। এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিয়মিত কথা হচ্ছে। তাদের থেকে এখানকার কন্ডিশন এবং উইকেটের ধারণা নিচ্ছি। এখানকার কন্ডিশন এবং উইকেট বুঝে ওঠার জন্য তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া বিদেশি অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা আছেন, তারাও অনেক দিক দিয়ে অনেক সাহায্য করছে। বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ।
 
ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ টুর্নামেন্টের শুরুতে টানা চার ম্যাচ হার, এরপর এভাবে ঘুরে দাঁড়ালো দল। এখন প্লে-অফ খেলার আশা করছে রংপুর। এমন পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব হলো?

ডেলপোর্টঃ শুরুর দিকে আমি ছিলাম না। ৩ ম্যাচ পর এসেছি। এখন আমরা দল হিসেবে খেলছি। শুরুতে এটা হতে পারেনি। সবাই একেক জায়গা থেকে এসেছে। মানিয়ে নিতে সময় লাগছিলো হয়তো। এখন আমরা ভালো অবস্থানে আছি। বোলাররা দারুণ করছে। আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলছি। খেলা উপভোগ করছি। এ কারণেই হয়তো ফলাফল আমাদের পক্ষে আসছে। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ এ নিয়ে তৃতীয়বার এসেছেন বিপিএল খেলতে। বার বার ফিরে আসতে কোন বিষয়টি উদ্বুদ্ধ করে আপনাকে?

ডেলপোর্টঃ এখানকার মানুষ ক্রিকেট পাগল এবং অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ। বিপিএল খুব ভালো একটি টুর্নামেন্ট। এখানে এসে কন্ডিশনের বিপক্ষে পরীক্ষা দিতে উপভোগ করি। এ ছাড়া পরিবেশও ভালো। বিশ্বের সব টি-টোয়েন্টি লিগের মতোই। বাংলাদেশের কন্ডিশনে খেলতে উপভোগ করি।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা বলা হয় আপনাকে। পিএসএল, সিপিএল, আইপিএল, বিগ ব্যাশ, এমজানসিসহ আরও অনেক জায়গায় খেলেছেন। টি-টেন লিগেও খেলার অভিজ্ঞতা আছে। বিপিএলের সঙ্গে বাকি লিগগুলোর পার্থক্য কোথায় খুঁজে পান?

ডেলপোর্টঃ বিপিএল বাকি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর মতোই। তবে উপমহাদেশের টুর্নামেন্টগুলোতে শুরুর দিকে মানিয়ে নেয়া কঠিন থাকে। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়। এখানকার স্থানীয়রা আমাদের আগে থেকে অনুশীলন শুরু করে। তাই যতো দ্রুত সম্ভব মানিয়ে নিতে হয়। চেষ্টা করতে হয় সেরাটা খেলার জন্য।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনার বয়স প্রায় ৩১। বিশ্বের সব জায়গায় খেলেছেন, কিন্তু দেশের হয়ে এখনও খেলা হয়নি। এখনও কি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখেন?

ডেলপোর্টঃ অবশ্যই। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলার স্বপ্ন তো আছেই। বিশেষ করে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে। আমাদের ওইখানে এমজানসি সুপার লিগ হয়। এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি কয়েকদিন আগে। নিজের দেশে খেলি, চেষ্টা থাকে ভালো করার। আশা করছি এসব জায়গায় পারফর্ম করতে করতে একদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারব।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বড় একটা রদবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটা কি বদলে দেবে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটকে?

ডেলপোর্টঃ অবশ্যই, এসব জায়গায় সঠিক লোকদের প্রয়োজন। এখন যারা দায়িত্বে আছেন তারাই যথেষ্ট। তারা দেশের জন্য দীর্ঘদিন খেলেছেন। উচ্চপর্যায়ে এসব মানুষদেরই প্রয়োজন, যারা একটা সময় দেশকে দীর্ঘদিন প্রতিনিধিত্ব করে এসেছে। ওনারা অনেক অভিজ্ঞ। এ রকম মানুষদের অধীনে থাকলে আফ্রিকার ক্রিকেট অনেক দূর যাবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ দক্ষিণ আফ্রিকার নামের আগে ‘চোকার’ তকমা আছে। বড় যেকোনো টুর্নামেন্টে ভালো অবস্থানে থেকে ছিটকে যাওয়া বা বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। চোকার তকমা নিয়ে আপনার অভিমত কী? 

ডেলপোর্টঃ এটা আসলে আমি বলতে পারব না। আমি নিজেও জনি না। এ ছাড়া দেশের হয়ে এখনও খেলিনি। সেই অভিজ্ঞতা নেয়া হয়নি। তবে আমি নিজে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগের ফাইনালে খেলেছি। জিতেছিও। এসব জায়গায় আপনি বেশি চিন্তা করার সময় পাবেন না বা বাড়তি দুশ্চিন্তা অনেক সময় মাথায় আনতে হয় না। সবাইকে নিজের সেরা খেলাটা খেলতে হয়।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ এমজানসি ক্রিকেট লিগ শুরু হওয়ার বেশিদিন না হলেও অনেক উন্নতি করেছে লিগটি। বিপিএল অনেক বেশি সময় ধরে হচ্ছে। কিন্তু অনেক দিক থেকে এতো দ্রুত উন্নতি করতে পারেনি। বিপিএলের কোথাও সমস্যা চোখে পড়েছে আপনার?

ডেলপোর্টঃ আমাদের কন্ডিশন আর এখানকার কন্ডিশনে বিরাট পার্থক্য। বেশি ব্যাটিং সহায়ক। সেখানে ঘরোয়া বোলারদের মান অনেক উন্নত। লিগের খেলা অনেকটা একই তবে দীর্ঘমেয়াদী। কন্ডিশন এবং বিশ্বের দুই প্রান্তে দুটি হওয়ায় হয়তো পার্থক্য বেশি চোখে পড়ছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ টি-টোয়েন্টিতে অনেক রান করেছেন। ৫টা সেঞ্চুরি আছে। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের জন্য আপনি বেশ সুপরিচিত। এমন ব্যাটিংয়ের রহস্য কী?

ডেলপোর্টঃ আমি ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই এমন। চেষ্টা ছিল যেকোনো একদিক লক্ষ্য করে এগোনোর। ক্যারিয়ার যখন শুরু করি, তখন এটাকেই বেছে নিই। আমি পেশির শক্তির ওপর বেশি জোর দেই, ঝুঁকি নেয়ার চেষ্টা করি। হতে পারে আমার এই উপায়গুলো ঠিক না, কিন্তু আমি বদলাবো না।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বাংলাদেশে হার্ড হিটার নেই তেমন। অনেক চেষ্টা চলছে খুঁজে বের করার। হার্ট হিটার তৈরিতে কোনো পরামর্শ আছে আপনার?

ডেলপোর্টঃ বেশি করে মাংস খেতে হবে। নিজেকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। একদিনে হবে না। ধীরে ধীরে এগোতে হবে। যদিও এখানে এভাবে মেরে খেলার কাজটা সহজ না। কারণ উইকেটে বাউন্স কম, বল নিচু থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেক বাউন্স। সেটাকে কাজে লাগানো যায়। এ কারণেই সেখানে সবাই হিটিং করতে পারে। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ সিলেটের কোচ হার্শেল গিবস বলেছেন, স্থানীয় ক্রিকেটাররা ইংরেজি বুঝতে পারেন না। আপনার সঙ্গে কি এমন কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে?

ডেলপোর্টঃ না, তবে এটা একটা চিন্তার বিষয়। অনেক সময় এমন হতে পারে যে কোচ কিছু একটা বলতে চাচ্ছেন কিন্তু খেলোয়াড় আরেকটা বুঝছে। তখন বড় সমস্যা। বিশ্বের সব জায়গাতেই এই সমস্যা আছে। এমন না যে নতুন শুনছি। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ পিএসএল খেলতে পাকিস্তান গিয়েছিলেন। সেখানের নিরাপত্তা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

ডেলপোর্টঃ তারা আমাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে গেছে। খুব ভালো লেগেছে গিয়ে, উপভোগ করেছি। সেখানে অনেক সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হচ্ছিলো না। অনেক মানুষ এসেছে খেলা দেখছে, ভালোই লেগেছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বাংলাদেশেরও কি পাকিস্তান যাওয়া উচিত? 

ডেলপোর্টঃ আমার মতে যাওয়া উচিত। তারা আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তা দিয়েছিল। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ একজন খেলোয়াড়ের ওপর। তারা নিরাপদ মনে করলে যাবে, না করলে যাবে না।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের খুব কাছ থেকে দেখছেন। এসব ক্রিকেটারদের জন্য কোনো পরামর্শ?

ডেলপোর্টঃ বেশি বেশি পরিশ্রম করতে হবে। ডেডিকেশন থাকা লাগবে। সঙ্গে ফিট থাকাটা অনেক জরুরী। আপনি কঠোর পরিশ্রম করলে ফলাফল আসবেই।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে যদি একটু বলতেন...

ডেলপোর্টঃ এখানকার মতোই। প্রফেশনাল ক্রিকেট খেললে অনেক খেলোয়াড় এমনি বের হয়ে আসে। লিগের ক্ষেত্রেও এমন। বিশ্বের সব জায়গার মতোই পঞ্চাশ ওভার এবং চার দিনের টুর্নামেন্ট আছে। আমাদের এখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়। তাই অনেক খেলোয়াড় উঠে আসছে। অনেকে ৬-৭ বছর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে জাতীয় দলে সুযোগ পায়। রাসি ভান ডার ডাসেন-পিটার মালানরা এই পরিকল্পনারই অংশ। ওরা ১০ বছরের মতো ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছে। পরিশ্রম করলে অবশ্যই কাজে আসে। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলের সম্পদে পরিণত হবেন, রংপুরে এমন কোনো ক্রিকেটার দেখতে পাচ্ছেন?

ডেলপোর্টঃ অবশ্যই নাঈম। ওর অনেক ভালো ভবিষ্যত আছে আমি মনে করি। তবে পরিশ্রম করতে হবে। সে ভালো হিটিং জানে। বোলারদের বিপক্ষে চড়াও হয়ে খেলে, ভয় পায় না।