সাক্ষাৎকার

বিপিএলই বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছেঃ সিবান্দা

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 17:29 রবিবার, 15 ডিসেম্বর, 2019

|| আবিদ মোহাম্মদ || 

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দ্বিতীয়বারের মতো ধারাভাষ্য দিতে এসেছেন ভুসিমুজি সিবান্দা। ক্রিকেটকে বিদায় না বললেও আগেভাগেই ধারাভাষ্যকে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করছেন জিম্বাবুয়ের এই ক্রিকেটার। বিপিএলের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে চান নিজেকে। খেলোয়াড় জীবনে বেশ কয়েকবার এসেছেন বাংলাদেশে। এবার এসেছেন ধারাভাষ্যকার হিসেবে। 

বাংলাদেশকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে স্বীকার করলেন সিবান্দা। ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্তে আলাপকালে বাংলাদেশের আতিথেয়তার প্রশংসা করার পাশাপাশি সিবান্দা কথা বলেছেন জিম্বাবুয়ে জাতীয় দল ও দেশটির ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে। এ ছাড়া ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফরের স্মৃতি রোমন্থন করতে দেখা গেল টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যানকে।   

ক্রিকফ্রেঞ্জির পাঠকদের জন্য সিবান্দার পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বিপিএলে দুই মৌসুম ধরে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন, নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন...

ভুসিমুজি সিবান্দাঃ ভালোই লাগছে এখন পর্যন্ত, উপভোগ করছি। মাত্র তো শুরু করলাম। এখনও শেখার মাঝে আছি। ক্রিকেট ছেড়ে ধারাভাষ্যকে পেশা বানানোর আগে এখানে এসে অভিজ্ঞতা নিচ্ছি, শিখছি। উপভোগও করছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ধারাভাষ্যকার হিসেবে সামনের মৌসুমগুলোতেও আসার ইচ্ছা আছে?

সিবান্দাঃ আমাকে আমন্ত্রণ করা হলে অবশ্যই আসব। কেন না? এখানে আতিথেয়তা দারুণ, আমি অনেক উপভোগ করি। আমার খুব ভালোভাবে দেখভাল করছে। কোনো বিষয় নিয়ে আমার অভিযোগ নাই। অবশ্যই আসবো সামনে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ সর্বশেষ বিপিএল আর এবারের বিপিএলের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

সিবান্দাঃ আগের মৌসুমের তুলনায় এবার অনেক তরুণ ক্রিকেটারকে দেখছি বিপিএলে। যেটা খুবই ভালো একটি দিক। তরুণরা সুযোগ পাচ্ছে, দেখতে ভালো লাগছে। সঙ্গে অভিজ্ঞরা তো আছেই। তরুণরা অভিজ্ঞদের থেকে শিখছে, শিখবে। বিসিবির জন্যও ভালো হবে। নতুন অনেক খেলোয়াড় উঠে আসবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের দেখে কী মনে হয়?

সিবান্দাঃ এখানের মানুষ ক্রিকেটকে অনেক উপভোগ করে। সব সময়ই দেখেছি। এরা ক্রিকেটকে অনেক ভালোবাসে। ক্রিকেটভক্তদের নিয়ে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। আমি যখন খেলোয়াড় হিসেবে এসেছি, তখনও ভক্তদের উপচে পরা ভিড় দেখেছি। এটা যে কোনো দেশের জন্যই খুবই ভালো একটি দিক।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বিপিএলের ভবিষ্যৎ কেমন, কী মনে হয়?

সিবান্দাঃ বিপিএলের ভবিষ্যত উজ্জ্বল। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে খেলা দেখতে মানুষ অনেক ভালোবাসে। তাই বিপিএলের জনপ্রিয়তা কখনোই কমবে না। যদিও টেস্ট ক্রিকেট হচ্ছে আসল খেলা। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটকে অনেকেই বিবেচনা করে। বোলাররাও এখানে সুবিধা পায়, অনেকেই বলে টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের খেলা। কিন্তু আমি মনে করি দুই বিভাগের গুরুত্বই সমান। অনেক তরুণরা উঠে আসছে, তাই বিপিএলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, বলতেই হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাররা এসে এখানের মান বাড়াচ্ছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ক্রিকেটার এবং ধারাভাষ্যকার হিসেবে অনেকবার আসা হয়েছে বাংলাদেশে। এটাকে আপনার দ্বিতীয় বাড়ি বলা যায়?

সিবান্দাঃ হ্যাঁ, বললে ভুল হবে না। এখানে অনেকবার আসা হয়েছে। খেলোয়াড় হিসেবে এসেছি। আর এখন ধারাভাষ্যকার হিসেবে এখন আসছি। দ্বিতীয় বাড়ির মতোই মনে হয়।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে ঠিক সমস্যাটা কোথায় বলে মনে করেন?

সিবান্দাঃ আমি বিশ্বাস করি, আপনি বাড়িতে থাকুন বা যেখানেই থাকুন। সমস্যা থাকবেই। অনেক সময় মানুষ অনেক কিছুতে খুশি হবে না, আপনাকে আবার অনেক চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে। জিম্বাবুয়ে বোর্ড এখন কঠিন পরিস্থিতিতে আছে। অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। আশা করছি তারা সব সমস্যা সমাধান করতে পারবে। অনেক সমস্যাই সমাধান হয়েছে, আমরা নিষিদ্ধ হয়েছিলাম কয়েক মাসের জন্য। মনোযোগটা অন্যদিকে চলে গিয়েছিল। একজন খেলোয়াড়ের দিক দিয়ে বলতে গেলে, বিষয়টি আমাদের সত্যি ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল। কারণ খেলোয়াড় সব সময়ই চায় খেলতে। আপনি যতো বেশি খেলবেন, ততো আপনার ক্রিকেটের উন্নতি হবে। আপনি কম খেললে বুঝবেন না, আপনার ক্যারিয়ার কোথায় যাচ্ছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ  ২০০৩ বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুয়ে দলে ফ্লাওয়ার ব্রাদার্স, হিথ স্ট্রিক, অ্যালেস্টার ক্যাম্বেলদের মতো ক্রিকেটাররা ছিলেন। এখন সেই মানের ক্রিকেটার নেই। তাঁদের মানের খেলোয়াড় কী কারণে উঠে আসছে না বলে মনে করেন?

সিবান্দাঃ আমাদের দেশে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। কিন্তু আমরা তেমন বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই না। এই বিষয়টা খেলোয়াড় তৈরি করতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। আপনি যতো বেশি খেলবেন ততো বেশি পরিণত হবেন। বেশি ম্যাচ না খেলার কারণে উন্নতি হচ্ছে না। তারা যতো বেশি খেলার সুযোগ পাবে, ততো বেশি উন্নতি করবে। তখনই ফ্লাওয়ার ব্রাদার্স-স্ট্রিকদের মতো খেলোয়াড় বেড়িয়ে আসবে। আমরা ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিকভাবে এতো বেশি খেলার সুযোগ পাচ্ছি না। এগুলো বড় ভুমিকা পালন করে যে কোনো দেশের ক্রিকেটের উন্নতির পথে। আমাদের সামনে অনেক খেলা আছে। আশা করছি সেখান থেকে অনেক প্রতিভা বের হয়ে আসবে। এটা বললে ভুল হবে যে, আমাদের ট্যালেন্ট নেই বা বিশ্বমানের খেলোয়াড় নেই। আমাদের আছে। কিন্তু আপনি না খেলতে দিলে, তাদের খেলতে না দেখলে তো জানবেন না।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডে কোনো সমস্যা আছে? তাদের থেকে সহযোগিতা কম পাচ্ছেন খেলোয়াড়রা?

সিবান্দাঃ বোর্ডের থেকে সব সময়ই সহায়তা আসছে। কিন্তু কথা হচ্ছে এই শক্তিটা কোন দিকে যাচ্ছে। অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা সন্তুষ্ট আবার অনেকে না। আপনি যেখানেই থাকেন না কেন, চ্যালেঞ্জ থাকবে। সেটা হোক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বা সাপোর্টের ক্ষেত্রে। সবাই তো সব সময় এক জিনিস ভাববে না। একেক সময় মানুষের একেকটা মনে হয়। যাত্রাটা কারও জন্য সহজ না। অনেকেই ভাববে বোর্ড তাদের সঙ্গে আছে আবার অনেকে উল্টোটা ভাববে। আমি বিশ্বাস করি, বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে খেলোয়াড়দের সহযোগিতা করতে। আমি বলব না বোর্ড ঠিকভাবে কাজ করছে না, এটা ভুল হবে। বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যে কোনো সমস্যা সমাধান করার।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ এতো বছর ক্রিকেট খেলার পর আইসিসি নিষিদ্ধ করে দিল। সে সময় কেমন মনে হচ্ছিল? দেশের মানুষ বা ক্রিকেট মহলের অবস্থা কেমন ছিল?

সিবান্দাঃ হৃদয় ভাঙার মতো মুহূর্ত ছিল। এতো বছর ধরে ক্রিকেট খেলার পর ধারাবাহিকভাবে সব যখন বন্ধ হয়ে যায়, একজন খেলোয়াড় হিসেবে ছন্নছাড়া মনে হচ্ছিল। দেশের অনেকেই বুঝে উঠতে পারেনি কী হচ্ছে। ভক্তরাও হতাশ হয়ে পড়েছিল। আমাদের দেশ ক্রিকেট খেলতে পারবে না, কী হচ্ছে কী হবে! কিছু বুঝতে পারছিলাম না সে সময়। তারা কি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেবে? নাকি থাকবে? তবে শেষ পর্যন্ত সব সমস্যার সমাধান হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা ওঠে গেছে। সব স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগে। এতেই ধারণা করা যাচ্ছে সব আস্তে আস্তে সমাধানে আসছে। সময়ই বলে দেবে আমরা কোন পথে যাচ্ছি। সঠিক না অন্যদিকে। আমি আশাবাদী সব ঠিকঠাকভাবেই যাবে। তারপরও সময়ই সব প্রশ্নের উত্তর দেবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ একটা সময় জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট অনেক ভালো পর্যায়ে ছিল, উন্নতি করছিল। এখন বাংলাদেশ উন্নতি করছে। এমনকি কোনো সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট হুট করে নিচের দিকে চলে যেতে পারে? সম্প্রতি সময়ে সব ঠিকভাবে যাচ্ছে না, সাকিবও নিষিদ্ধ হলো। আফগানিস্তানের কাছে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতেও হেরেছে। সব মিলিয়ে কী মনে হয়?

সিবান্দাঃ আমার মনে হয় এখানে আফগানিস্তানকে কৃতিত্ব দিতে হবে। তারা তাদের ক্রিকেট নিয়ে অনেক পরিশ্রম করছে। তারা এসে বাংলাদেশকে টেস্টে হারিয়েছে। কারণ তারা ভালো ক্রিকেটই খেলেছে। এটা বললে অবশ্য ভুল হবে, বাংলাদেশের ক্রিকেট নিচের দিকে যাচ্ছে বা নিচের দিকে যেতে পারে। এটাই ক্রিকেট, আপনি কখনও হারবেন আবার কখনও জিতবেন। এটাই হবে সব সময়। বাংলাদেশও ভালো করবে সামনে। এই বিপিএলই বলে দিচ্ছে, তারা যে এগিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে পেছনে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। সামনে ঠিকভাবে যেতে পারলে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকবে। আফগানিস্তানও এমন। তারাও উন্নতি করছে। আসলে এগুরো প্রতিযোগিতা বাড়াচ্ছে। এটা যেমন ক্রিকেটের জন্য ভালো, সবার জন্যই ভালো।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো টেস্ট ম্যাচ ও সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। আপনি সে সময় জিম্বাবুয়ে দলের সঙ্গে ছিলেন। একটা টেস্টেও খেলেছেন। সেই ম্যাচে হারের পর দলের অবস্থা কেমন ছিল? ওই টেস্টে সিরিজে পাওয়া জয় কি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে?

সিবান্দাঃ বাংলাদেশ তখন টেস্ট খেলছে মাত্র ৪-৫ বছর হবে। এতো তাড়াতাড়ি টেস্টে জয় পাওয়া যে কোনো দলকে আত্মবিশ্বাস দেবে। আপনি যদি ভালো করেন এটা যে কোন ক্ষেত্রেই আপনাকে সামনের দিনের জন্য সহায়তা করবে। ব্যক্তগতভাবে হোক বা দলীয় ভাবে হোক। এটাই হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমার মনে আছে এখনও হারের পর ড্রসিংরুমে সবাই অনেক হতাশ ছিল। অনুভূতিটা ভালো ছিল না। কিন্তু আমরা ভালো ক্রিকেট খেলিনি সেই সিরিজে। তবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম জেতার জন্য। আমরা তখন মাঠে নামলে সব সময় চেষ্টা করতাম জেতার জন্য। কিন্তু সেই সিরিজে আমাদের কোনো পরিকল্পনা পক্ষে যায়নি। সব উল্টো হচ্ছিলো। আমরা বাজেভাবে হেরেছি। এটাই ক্রিকেট। কোনোদিন হারবেন তো কোনোদিন জিতবেন। সব সময় সব আপনার পক্ষে যাবে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঘুরে দাঁড়ানো এবং লড়াই করা।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে কাকে কাকে প্রতিশ্রতিশীল মনে হয়? উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে, এমন ক্রিকেটার চোখে পড়েছে।?

সিবান্দাঃ বাংলাদেশ থেকে অনেক তরুণ ক্রিকেটার উঠে আসছে। আমার কাছে প্রশ্নটা বেশ কঠিন। কারণ অনেক ট্যালেন্টেড ক্রিকেটার উঠে আসছে। বিপিএলে আবার অনেক তরুণ ক্রিকেটার খেলছে না, এখানে দল পাওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। সব তরুণদের নাম উল্লেখ করা কঠিন হবে। তবে নাঈম, আফিফ, বিপ্লব, এবাদতরা ভালো করছে। এদের দেখাশোনা করলে আরও উন্নতি করবে। আমি তো অল্প কয়েকজনের নাম বললাম আরও অনেকেই আছে।  

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য কোনো পরামর্শ?

সিবান্দাঃ ক্রিকেট সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং খেলা। আজ দলে এসেছো ভালো করতে পারছো না, এর মানে এই না যে তুমি খেলতে পারো না। তোমাকে তখন বেসিকে ফিরে যেতে হবে, লড়াই করতে হবে, অনুশীলন করতে হবে। একটা ম্যাচ তোমার সব বদলে দিতে পারে। তারপরও লড়াই তো থাকবেই, মানসিক লড়াইটা সবচেয়ে বড়। এটা সহজ মনে না হলেও নিজেকে নিজের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তখনই তোমার উন্নতি হবে এবং ভালো করবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ  ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন, সেটাও ছিল মিরপুরে। কখনও মনে হয়েছিল যে, এটাই আপনার শেষ টেস্ট ম্যাচ?

সিবান্দাঃ না, আসলে আমার কোনো প্রকার ধারণা ছিল না। মিরপুরেই শেষ টেস্ট খেলেছি এখন মিরপুরে দাঁড়িয়েই কথা বলছি। বেশিদিন হয়নি। আপনি খেলার মধ্যে থাকলে কোনোদিনই জানবেন না কোন সময় আপনি আপনার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলছেন। এটা নির্বাচকদের ওপর নির্ভর করে যে, তারা তোমাকে ভবিষ্যতের জন্য ভাবছে কি ভাবছে না। আমার ক্ষেত্রে সেটাই ছিল শেষ। আমাকে এটা মেনে নিতে হয়েছে। হয়তো যা হয় ভালোর জন্য হয়, এখানে দাঁড়িয়ে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট নিয়ে কথা বলছি। সব কিছুর পেছনে কোনো না কোনো কারণ থাকে। আপাতত ভবিষ্যৎ বা সামনের দিনগুলো নিয়ে ভাবছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ অবসর নিয়ে আপনার কী ভাবনা?

সিবান্দাঃ আমি ক্রিকেট ছাড়ছি তাড়াতাড়ি। এখনও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেইনি। সময় আসলেই বলে দেবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনি আর মাসাকাদজা প্রায় একই সময় জাতীয় দলের হয়ে খেলা শুরু করেন, সে সম্প্রতি অবসর নিয়েছে। এখন জিম্বাবুয়ে বোর্ডের সঙ্গে কাজ করছেন। তাঁর সঙ্গে একত্রে খেলার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

সিবান্দাঃ হ্যামিল্টনের পরপরই আমি জাতীয় দলে ঢুকি। একসঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি দুজন। সে অসাধারণ একজন মানুষ। ক্যারিয়ারে সব সময় ক্রিকেটকে প্রাধান্য দিয়েছে। এখন জিম্বাবুয়ের বোর্ড পরিচালক। এটা জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের জন্য খুবই ভালো হয়েছে। ওর অভিজ্ঞতা দেশের ক্রিকেটকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ১৫ বছর ক্রিকেট খেললেন, সফরটা কেমন ছিল? কোনো আক্ষেপ রয়ে গেছে?

সিবান্দাঃ না, আক্ষেপ নেই। সৃষ্টিকর্তা সুযোগ দিয়েছে আমায় এখানে খেলার। সে জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ। সে আমার মধ্যে এই প্রতিভা দিয়েছে। জিম্বাবুয়েকে প্রতিনিধিত্ব করেছি ১৫ বছর। গর্ব হয়। সব সময় চেয়েছি এটা এবং পেরেছি। তবে কিছু কিছু ম্যাচে আমি অনেক ভালো খেলতে পারতাম, সেখানে নিজের ভুলের কারণে আউট হয়ে গেছি। এই বিষয়গুলো এখনও পোড়ায় আমাকে। চাইলে ভালো খেলতে পারতাম, কিন্তু পারিনি। উন্নতির সুযোগ সব সময়ই ছিল। তবে দেশকে এতো বছর প্রতিনিধিত্ব করেছি, আমি খুশি দিন শেষে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটের গঠন বা মান কেমন, যদি একটু বলতেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা নির্বাচকদের ভূমিকা কেমন?

সিবান্দাঃ আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান ভালো। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অনেক খেলোয়াড় বের হয়ে আসছে। কিন্তু বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়ায় প্রতিভার বিকাশ ঘটছে না। নির্বাচকদের ব্যাপার বলতে গেলে আমি এখন জানি না তারা কোন পরিপ্রেক্ষিতে বা কিসের ওপর ভিত্তি করে দল নির্বাচন করে থাকেন। হয়তো তারা তাদের কাজটাই করছেন। কিন্তু কীভাবে করছেন, কারা করছেন এই ব্যাপারে এখন আর ধারণা তেমন নেই। তবে এতোটুক জানি, আমাদের দেশের ক্রিকেট অনেক বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে সম্প্রতি। সবাই সব কিছু ঠিক করার চেষ্টা করছে। গঠনগত দিক দিয়ে সবাই চেষ্টা করছে কীভাবে সব সমস্যার সমাধানে যাওয়া যায়। যদিও আমি সেখানে নেই, তাই এই বিষয়ে বাড়িয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি কোনো পরামর্শ আছে আপনার?

সিবান্দাঃ আমি শুধু চাই আমার দেশের ক্রিকেট অনেক উন্নতি করুক, অনেক নতুন নতুন খেলোয়াড় বা প্রতিভা বের হয়ে আসুক। সে জন্য যা করা প্রয়োজন, এটা দায়িত্বে থাকা লোকরা হয়তো অনেক ভালোভাবেই জানেন। বোর্ড অভিজ্ঞ, অভিজ্ঞ লোকরা আছেন, তারা ভালো বুঝবেন কী করলে কী হবে। আমি শুধু দেশের ক্রিকেটের উন্নতি চাই।