বিপিএল

বিসিবির আরেকটি হ-য-ব-র-ল প্রযোজনা

শান্ত মাহমুদ

শান্ত মাহমুদ
প্রকাশের তারিখ: 21:58 মঙ্গলবার, 10 ডিসেম্বর, 2019

|| সিনিয়র ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট ||

জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিবিপিএল)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর আগে মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার মাঠের লড়াইয়ের অপেক্ষা, যেটা শুরু হচ্ছে ১১ ডিসেম্বর।

মাঠের লড়াইয়ের আগেরদিন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মনে হয়েছে, সাত অধিনায়ককে এক করে একটা ফটো সেশন করা উচিত। অনেকটা তাড়াহুড়ো করে মঙ্গলবার দুপুর দুইটার দিকে বিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে সাত দলের অধিনায়ককে নিয়ে ফটো সেশন করা হবে। যদিও শেষ পর্যন্ত এই কাজটি ঠিকভাবে করতে পারেনি প্রথমবারের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজিবিহীন বিপিএল আয়োজন করা বিসিবি।

বিপিএলের সাত অধিনায়ককে এক করতে পারেনি দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ফটো সেশনে দেখা গেল ছয়জন ক্রিকেটারকে। একজন অধিনায়ককে ছাড়াই করা হয়েছে বিপিএলের অধিনায়কদের অফিসিয়াল ফটো সেশন অবশ্য উপস্থিত এই ছয়জনের মধ্যে একজন আবার অধিনায়ক নন। তিনি ছিলেন তার দলের অধিনায়কের ‘প্রক্সি’ হিসেবে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একাডেমি মাঠে একটি ব্যানার দাঁড় করিয়ে অধিনায়কদের ফটো সেশন করা হয়। এই ফটো সেশনে উপস্থিত ছিলেন না ঢাকা প্লাটুনের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং রংপুর রেঞ্জার্সের অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি। মাশরাফির বদলে ঢাকা প্লাটুনের পক্ষ থেকে ফটো সেশনে ছিলেন মুমিনুল হক।

মোহাম্মদ নবির না থাকার কারণটা বেশ অদ্ভুত, ঢাকার যানজট। মঙ্গলবার সকালে মিরপুরের একাডেমি মাঠে দলের সঙ্গে অনুশীলন করেন নবি। দুপুরে দলের জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে হোটেলে ফিরে যান আফগান অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। ফটো সেশনের জন্য রওয়ানা দিয়ে যানজটের কারণে সময় মতো পৌঁছাতে পারেননি নবি। পথে থাকলেও তাঁকে ছাড়াই সেরে ফেলা হয় ফটো সেশন। তবে মাশরাফি কী কারণে ছিলেন না, সেটা জানা যায়নি।  

অধিনায়কদের ফটো সেশন বলা হলেও ঢাকা প্লাটুন একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েই দায় সেরে নিয়েছে। বিসিবিও এতে খুব বেশি আপত্তি দেখায়নি বলেই জানা গেছে। তবে ফটো সেশনে যেটা দেখা গেল, সেটা হয়তো কিছুটা বিব্রতকরই। চারজন অধিনায়ক ম্যাচ জার্সি পরা থাকলেও মুমিনুল ও খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের গায়ে প্র্যাকটিস কিট ছিল। প্র্যাকটিস কিট পরেই ফটো সেশনে দাঁড়িয়ে যান তাঁরা। শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও এটা দেখার মতো কেউ ছিল না সেখানে!  

‘জোড়া-তালির’ ফটো সেশনে এসব অসংলগ্নতার পাশাপাশি অনুপস্থিত ছিল টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আগ্রহের বস্তুটা, সেটা অবশ্যই ট্রফি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ট্রফি উন্মোচনের প্রয়োজন মনে করেনি বিসিবি। সাত অধিনায়কের অফিসিয়াল এই ফটো সেশনে ট্রফি উন্মোচনের কাজটি সেরে নিতেই পারতো আয়োজকরা। কিন্তু সেটা করেনি বিসিবি। ট্রফিটা দেখতে কেমন হবে কিংবা ট্রফিতে কোনো নতুনত্ব আসছে কিনা, সেটা হয়তো রহস্য হিসেবেই রেখে দিতে চায় বিসিবি!

দায় সারা গোছের এই ফটো সেশনের কল্যাণে অবশ্য সাত দলের অধিনায়কের নাম জানা গেছে। মাশরাফি বিন মুর্তজা ঢাকা প্লাটুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স এবং মোসাদ্দেক হোসেন সিলেট থান্ডারের নেতৃত্বে থাকবেন; এটা কদিন আগে জানা যায়। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর দুদিন আগেও অজানা ছিল বাকি চার দলের অধিনায়কের নাম। আসর শুরুর একদিন আগে করা এই ফটো সেশন দিয়ে বাকি চার অধিনায়কের নাম জানা গেছে।

খুলনা টাইগার্সের নেতৃত্বে থাকবেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। রংপুর রেঞ্জার্সের অধিনায়ক করা হয়েছে আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবিকে। ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল নেতৃত্ব দেবেন রাজশাহী রয়্যালসের। কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সকে পথ দেখাবেন লঙ্কান অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা।   

শুরুর আগেই হ-য-ব-র-ল অবস্থা বঙ্গবন্ধু বিপিএলের। ক্রিকেটারবিহীন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে এমন জোড়া-তালির ফটো সেশন, যেখানে ট্রফিটাও উন্মোচন হলো না। এর সঙ্গে দলগুলোর দায়িত্ব পাওয়া স্পন্সর কোম্পানিগুলোর অপেশাদারিত্ব আচরণের সঙ্গে আরও অসংলগ্নতা আছে। সব মিলিয়ে এখন অবস্থাটা এমন, যেন মাঠের লড়াই শুরু হলেই বাঁচা যায়!