বাংলাদেশ ক্রিকেট

মাশরাফি মুক্ত হবেন কবে?

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 21:59 বুধবার, 04 ডিসেম্বর, 2019

|| সিনিয়র ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট ||

‘ক্রিকেট নিয়ে কোনো কথা নয়’- লম্বা বিরতির পর মাঠে ফেরার দিন বলে দিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। কথাটা বললেন একজন সাংবাদিককে, কিন্তু বার্তা পৌঁছে গেল অন্যদের কাছেও। অনুশীলনে ফেরা বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক কোনো ইস্যুতেই কথা বলবেন না, সেটা সহজেই বুঝে নিলেন মিরপুরের একাডেমি মাঠে হাজির হওয়া সাংবাদিকরা। তবে ‘মিডিয়া ফ্রেন্ডলি’ ও সদা হাস্যোজ্জ্বল মাশরাফির এমন ‘স্ট্যান্ডে’ কিছুটা ফিঁসফাঁস চললো। প্রশ্ন উঠলো, ‘এই অবস্থা থেকে মাশরাফি মুক্ত হবেন কবে?’

যে অবস্থা থেকে মাশরাফির বেরোনোর আলোচনা, সেই অবস্থাটা আসলে কেমন? মাশরাফিকে যারা কাছ থেকে দেখেছেন, তাদের জন্য এই উত্তরটা খুব সহজ। রিপোর্টিংয়ের সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারকে দেখে আসা সাংবাদিকদের কাছে এই মাশরাফি পুরোপুরি উল্টো চরিত্রের। এই মাশরাফি ঘরমুখো, আড্ডা থেকে মুখ লুকিয়ে থাকা একজন মানুষ।

ওয়ানডে অধিনায়কের গত কয়েক মাসের কার্যক্রমে চোখ রাখলেই আগের মাশরাফির সঙ্গে এখনকার মাশরাফির পার্থক্য পরিষ্কার হয়ে যাবে। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ শেষে বাংলাদেশ দল দেশে ফেরে গত ৭ জুলাই। দেশে ফিরে ক্রিকেট থেকে পুরোপুরিভাবে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন তিনি। সেটাও দীর্ঘ পাঁচ মাস মাসের মতো। এই সময়ে ক্রিকেটীয় কোনো কার্যক্রমে তাঁকে দেখা যায়নি।

মাঝের এই সময়ে কোনো ওয়ানডে না থাকায় মাঠমুখো হতে হয়নি মাশরাফিকে। এমনকি অনুশীলনও করেননি তিনি। ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি মিডিয়াকেও কাছে ভিড়তে দেননি মাশরাফি। সাধারণত কোনো সফর শেষে দেশে ফেরার পর অধিনায়ক হিসেবে দল নিয়ে কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু এবার সেটা হয়নি, বিশ্বকাপের পর দেশে ফিরে ক্রিকেট নিয়ে একটি বাক্যও খরচ করেননি মাশরাফি।

বিভিন্ন ইস্যুতে যোগাযোগ করেও মাশরাফিকে দিয়ে কোনো মন্তব্য করাতে পারেনি সংবাদমাধ্যমগুলো। তাঁকে খুঁজে পাওয়াটাই এক প্রকার ধাঁধার মতো হয়ে উঠেছিল। লম্বা এই সময়ে পরিবার নিয়ে নিজের মতো করে ব্যস্ত থেকেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই অধিনায়ক। পাশাপাশি নতুন ক্ষেত্র রাজনীতির পেছনেও সময় দিতে হয়েছে তাঁকে। ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার এই সময়টায় মাশরাফি মাঠে এসেছেন, তবে সেটা দুই-একবার।

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপটা একেবারেই ভালো যায়নি মাশরাফির। ৮ ম্যাচ খেলে পেয়েছেন মাত্র একটি উইকেট। আর এই পারফরম্যান্সের কারণে পরের সময়টাও বিষাদময় হয়ে ওঠে তাঁর জন্য। এর সঙ্গে আবার যোগ হয় বেশ কয়েকটি ইস্যু, অন্যতম ছিল অবসর প্রসঙ্গ। এ নিয়ে বিশ্বকাপ চলাকালীনই বেশ কয়েকবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে মাশরাফিকে। যে কারণে খানিকটা বিব্রতই হয়েছেন ওয়ানডে অধিনায়ক। কারণ অবসর নিয়ে আপতত ভাবনা নেই তাঁর।

বিশ্বকাপের পর মাশরাফির অবসরের ইস্যুটায় আরও রং যোগ হয়। তার পারফরম্যান্স টেনে অনেকেই অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের সমালোচনা শুরু করেন। এমনকি বিসিবির কয়েকজন পরিচালকও নাকি ছিলেন এই তালিকায়। যদিও মাশরাফি এসব গায়ে মাখেননি। বরং নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন সবকিছু থেকে।

এখানেই শেষ নয়। আরও বিব্রতকর অবস্থা মোকামেলা করতে হয়েছে মাশরাফিকে। বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে অধিনায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, ইংল্যান্ডের কোনো এক আড্ডায় ড্রেসিং রুমের কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি। মাশরাফিকে কোট করে একটি সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে খবরও প্রকাশ করেছিল। এমন খবরে যারপরনাই হতাশ হয়েছিলেন তিনি।

এর সঙ্গে বিশ্বকাপে দলের অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স আর নিজের অচেনা রূপে থেকে যাওয়ার বিষাদময় স্মৃতি তো ছিলই। সব মিলিয়ে হয়তো অচেনা এক সময়ের মধ্যে পড়ে যান মাশরাফি। যে কারণেই ক্রিকেট, ক্রিকেট মাঠ, মিডিয়া; সবকিছুকে একটা পাশে সরিয়ে রেখেছেন তিনি। তাই অনেক দিন পর মাঠে ফিরলেও সেই আগের মাশরাফির দেখা মিলছে না।

লম্বা সময় অনুশীলন, জিম না করে ওজন বেড়ে গিয়েছিল মাশরাফির। পরিবার আর রাজনীতির মাঠ সামলাতে গিয়ে ফিটনেসের দিকে নজর দেয়া হয়নি তাঁর। একটা পর্যায়ে এসে দেখেন, ফিটনেস নিয়ে কাজ না করলেই নয়। তখন আর দেরি করেননি। ৩০ নভেম্বর অনুশীলন শুরু করার আগে ওজন কমানোয় মন দেন তিনি। মাঠের লড়াইয়ে ফিরতে ১০ কেজির মতো ওজন কমিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।

প্রাণবন্ত মাশরাফির দেখা নেই বহুদিন হয়। অনুশীলনে ফিরেছেন, বঙ্গবন্ধু বিপিএলে ঢাকা প্লাটুনের হয়ে খেলতে নিজেকে প্রস্তুতও করে যাচ্ছেন দলটির নেতৃত্বভার পাওয়া অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। কিন্তু বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ের মতো এখনও তাঁর মুখে ক্রিকেট নিয়ে কোনো কথা নেই। উল্টো বলে রেখেছেন, ‘ক্রিকেট নিয়ে কোনো কথা নয়।’