ক্রিকেটের সাম্প্রতিক অবস্থা

অদ্ভুত উটের পিঠে বাংলাদেশের ক্রিকেট!

ইনতেছার

ইনতেছার
প্রকাশের তারিখ: 21:28 সোমবার, 02 ডিসেম্বর, 2019

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামোসহ বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবকাঠামোগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে লম্বা সময় ধরে। এই আলোচনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে এসেছে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ভরাডুবির পর। অথচ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ডামাডোল বেজে উঠতে না উঠতেই সব আলোচনা যেন ম্লান হয়ে গেছে! বিপিএলের প্রস্তুতি উৎসবে মনে হচ্ছে দেশের ক্রিকেট বহাল তবিয়তেই আছে!


ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে লড়াই করার মানসিকতাই নিয়ে গিয়েছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। কিন্তু বিশ্বকাপে মাত্র তিনটি ম্যাচ জিততে পেরেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আফগানিস্তানকে ছাড়া কাউকেই হারাতে পারেনি তাঁরা।

দশ দলের বিশ্বকাপে অষ্টম স্থানে থেকেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় মাশরাফিবাহিনীকে। পুরো আসরে সাকিব আল হাসানের অতিমানবীয় পারফরম্যান্স ছাড়া অর্জনের খাতা ছিল শূন্য।

বিশ্বকাপের পরও হারের বৃত্তে বন্দী ছিল বাংলাদেশ। মাশরাফি এবং সাকিব না থাকায় শ্রীলঙ্কা সফরে অধিনায়ক হিসেবে যান তামিম ইকবাল। ওয়ানডে সিরিজের ফলাফল শ্রীলঙ্কা ৩, বাংলাদেশ ০।

এরপর ঘরের মাটিতে আফগানিস্তান এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে মোটামুটি ভালোই করে বাংলাদেশ। যদিও আফগানদের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়।

বাংলাদেশের টেস্টের গল্প অবশ্য আরও করুণ। টেস্ট ক্রিকেটের নব্য দল আফগানিস্তান ঘরের মাটির বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয়। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান আলোচনার টেবিলে আবারও ওঠে তখন।

এরমাঝে তামিম ইকবালের অফ ফর্মের কারণে খেলা থেকে দূরে থাকা বা বিশ্বকাপে বল হাতে ব্যর্থ হওয়া মাশরাফির অবসর না নেওয়াসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরগরম ছিল দেশের ক্রিকেট। ভারত সিরিজের আগমুহূর্তে দেশের সকল পেশাদার ক্রিকেটার নিয়ে খেলা বয়কটের ঘোষণা দেন সাকিব।

ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ উঠে আসে তখন। বিসিবিও বরাবরের মতো আশ্বাস দিতে থাকে। এই ঘটনার কয়েকদিন পরই ফিক্সারের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য গোপন করায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের পক্ষ থেকে শর্তসাপেক্ষে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা পান সাকিব।

মুমিনুল হককে টেস্ট অধিনায়ক বানিয়ে দল পাঠানো হয় ভারতে। সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে সময় দিতে এই সিরিজেও থাকেননি তামিম। ভারতে দুই টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। স্বাগতিক দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলিও প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো নিয়ে।

অথচ এতো কিছুর পরও বঙ্গবন্ধু বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে আয়োজনে কমতি রাখছে না বিসিবি। ভারত থেকে আনা হচ্ছে সালমান খান, ক্যাটরিনা কাইফদের মতো বলিউড সুপার স্টারদের। এ জন্য প্রচুর টাকাও খরচ করছে বিসিবি। যে টাকা দিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের অনেক উন্নতি সাধন করা সম্ভব।

যে ঘরোয়া ক্রিকেট অবকাঠামো নিয়ে গত কয়েকমাস এতো আলোচনা হয়েছে, সবই যেন বিপিএল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। টানা হার, টানা বাজে পারফরম্যান্স- সবকিছুই যেন ঢেকে দিচ্ছে বিপিএলের এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি দিয়েই!

অদ্ভুত উটের পিঠে চলছে স্বদেশ-  কবিতার এ উপমার দেশটির নাম বাংলাদেশ। এখানে স্বদেশ যদি হয় ক্রিকেট আর উট যদি হয় বিসিবি, খুব কি অমিল হবে?