সাক্ষাতকার

জানালা দিয়ে দেখতাম আর চোখ দিয়ে পানি পড়তোঃ খালেদ

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 19:40 রবিবার, 01 ডিসেম্বর, 2019

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

৬ মাসের বেশি সময় ধরে মাঠের বাইরে আছেন খালেদ আহমেদ। চলতি বছর ইনজুরিতে পড়ার পর জুনে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে বাংলাদেশের ডানহাতি এই পেসারকে। এরপর থেকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে নিজেকে ফিট করে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন খালেদ। এর আগে একাডেমি ভবনে পুনর্বাসনের সময়টা একাই কাটিয়েছেন তিনি। সে সময় সতীর্থদের মাঠে খেলতে বা অনুশীলন করতে দেখে কান্না করতেন খালেদ। সব বাধা পার করে গত ২৭ নভেম্বর থেকে রানিং শুরু করেছেন বাংলাদেশের হয়ে দুটি টেস্ট খেলা এই পেসার। খালেদের ইচ্ছা আছে বিপিএল দিয়ে ফেরার। তবে টেস্ট দলের সদস্য হওয়ায় বিপিএলের চেয়ে লঙ্গার ভার্সনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন তিনি।

ইনজুরি, পুনর্বাসন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ অনেক কিছু নিয়েই ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন খালেদ। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলোঃ  

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ রানিং শুরু করেছেন কবে থেকে?

খালেদঃ গত মাসের ২৭ তারিখ থেকে রানিং শুরু করেছি। এখন তিন নম্বর সেশন চলছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ যেদিন রানিং শুরু করেছেন, সেদিন কতোটা স্বস্তি পাচ্ছিলেন?

খালেদঃ ভালো লেগেছে। ৫ তারিখের আগে আরেকটা সেশন আছে সেখানে
আরেকটু জোরে দৌড়াব। যেটা ১৫ সেকেন্ডে হচ্ছে, চেষ্টা থাকবে সেটা যেন ১২ সেকেন্ডে হয়। হাই ইন্টেন্সিটি হচ্ছে ১২ সেকেন্ডের ভেতর শেষ করা।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ পুনর্বাসন প্রোগ্রাম চলাকালীন একাডেমিতে ছিলেন?

খালেদঃ হ্যাঁ, পুনর্বাসন চলাকালীন পুরো সময়টা এখানে ছিলাম। বাড়িতে যাইনি। ফোনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। পুনর্বাসনে থাকলে ফিজিওরা যেতে দেয় না আসলে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ পুনর্বাসন চলাকালীন কোনো ট্রেইনার দেয়া হয়েছিল আপনাকে?

খালেদঃ নভেম্বরের ৩ তারিখ আমাকে ট্রেইনার দেয়া হয়। এর আগে সব কিছু একা একাই করতাম। সে সময় সকাল-বিকাল দুই বেলাই করতাম। নামতাম ৮টা বাজে, উঠতাম ১২টার সময়। আবার ৩টায় নেমে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতাম। একা একা জিম সেশন করতাম, কেউ থাকতো না। আর এই পুনর্বাসনের কাজগুলা একা একা করা অনেক কঠিন। দুনিয়ার সব থেকে বিরক্তিকর কাজ তবে শান্তি আছে। একটা সময় এসে খুব বিরক্ত লাগতো। তারপরও চিন্তা করতাম আমাকে খেলতে হলে এটা করতেই হবে। এটা চিন্তা করেই করতাম। এখন দৌড়ানোর সময় মনে হচ্ছে থেমে যাই পারছি না। কিন্তু তখন মনে হয় আমার বোলিং করতে হবে। আরেকটু দৌড়াই। এটা মাথায় চলে আসে যে বোলিং করতে হবে আমাকে। ফাঁকি দিতে চাই না কখনও।

 ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ দীর্ঘদিন বসে থাকার পর রানিং শুরু করেছেন। কেমন লাগছে?

খালেদ আহমেদঃ একাডেমি ভবনে যে রুমে থাকতাম সেখান থেকে সবাইকে দেখতাম। চোখ দিয়ে পানি পড়তো। এতো কষ্ট করলাম খেলার জন্য আর কোনো কারণ ছাড়াই ইনজুরি হলো। এর থেকে বড় কিছু হতে পারে না। অনেক কষ্ট। এই যে রানিং করছি, অনেক শান্তি লাগছে।    

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ কী দেখলে খারাপ সময়ের কথা মনে পড়ে? 

খালেদঃ আমার রুমে যে লাঠিটা আছে, সেটা সব সময় দেখি। প্রথম ১৫দিন অনেক কষ্টে গেছে। পা মাটিতে লাগাতে মানা করা হয়েছিল। এক মাস পরে লাঠি ধরেছি। এরপরের মাসে লাঠি ছেঁড়ে জিম শুরু করি। সেটাই চলছে এখন। প্রায় ৪ মাস হয়ে গেছে অপারেশনের। জুনে হয়েছে, এর আগে দুই মাস গিয়েছে বিভিন্ন ইস্যুতে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ এখন ফিটনেসের কেমন অবস্থা? বিপিএলে খেলতে পারবেন বলে মনে হয়?

খালেদঃ বিপিএলে চিটাগাং পর্বের পর থেকে খেলতে পারব। তবে আমার চিন্তা হচ্ছে এখন যেহেতু অনেকখানি ঠিক হয়ে গেছে, আমি চাইবো যে ফিরে আসাটা যেন আগের চেয়ে আরও ভালো হয়। যেন আরও ভালোভাবে ফিরে আসতে পারি। বিপিএল খেললাম, খেলতে পারবো ঠিক আছে। সমস্যা নেই। ধরেন হুট করে যেতে চাচ্ছি না। আরও এক মাস লাগবে। বোলিং করব, লাইন-লেংথ নিয়ে কাজ করব। সব কিছু পারফেক্ট হতে সময় লাগবে। জোরাজোরি করতে চাচ্ছি না। যদি সুযোগ থাকে খেলার অবশ্যই খেলব। যদি কোনো দল আমার বোলিং দেখে আগ্রহ প্রকাশ করে, তাহলে গেলাম। এখন এটা আমার ওপর। আমি যদি পা নিয়ে লম্বা চিন্তা করি যে আমাকে টেস্ট খেলতে হবে তাহলে বিপিএল কিছুই না। আমি আমার জায়গাটায় আবার ফিরতে চাই।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ মাঝের এই সময়ে ফিটনেস কীভাবে ঠিক রেখেছেন? 

খালেদঃ ছয় মাস হয়ে গেছে ভাত খাচ্ছি না। এমনকি রুটিও না। ফল সবজি এসব খেয়ে ছিলাম। তারপর ওটস খাই, এগুলাই চলছে। মাঝে লন্ডন গিয়েছিলাম, তখন ভাত খাওয়া হয়েছে।