সাক্ষাৎকার

কথায়-আড্ডায় গুরু-শিষ্য

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 22:53 সোমবার, 14 অক্টোবর, 2019

|| সিনিয়র ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট ||

গুরু-শিষ্য সম্পর্ক। যদিও এই সম্পর্কটা এতদিন আড়ালে থেকে গেছে। কারণ দুজনের কেউই লাইম লাইটে ছিলেন না। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেক ম্যাচ রাঙিয়ে আমিনুল ইসলাম বিপ্লব নিজেকে তো চিনিয়েছেনই, আলোচনায় নিয়ে এসেছেন গুরু সোহেল ইসলামকেও। বিসিবির এই কোচের পরামর্শেই ভালোভাবে লেগ স্পিন করতে শুরু করেন বিপ্লব। যে লিগ স্পিন ব্যাটসম্যান বিপ্লবকে এনে দিয়েছে জাতীয় দলের টিকেট। তাই বড় স্বপ্নে লম্বা পা ফেলার চেষ্টায় থাকা তরুণ এই ক্রিকেটার সময় পেলেই দ্বারস্থ হন সোহেল ইসলামের। সোমবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একাডেমি মাঠে এক সঙ্গে পাওয়া গেল গুরু-শিষ্যকে। নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বললেন তাঁরা দুজন। বিপ্লব-সোহেল ইসলামের সেসব কথা-ভাবনা ক্রিকফ্রেঞ্জির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।  

প্রশ্ন: দলে বিপ্লবের ভূমিকা কী? লেগ স্পিনার নাকি অলরাউন্ডার হিসেবে তাঁকে বিবেচনা করা হবে?

সোহেল ইসলাম: যেহেতু লেগ স্পিনার হিসেবে সে দলে সুযোগ পেয়েছে, এটাই এখন তার ফার্স্ট ডিউটি। এই জায়গায় যত বেশি সে উন্নতি করতে পারবে দলে এবং সব ফরম্যাটে খেলার সুযোগ হবে। তার মধ্যে সম্ভাবনা আছে। সে নিজেকে ভালো অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। ব্যাটিং স্কিলটা যদি উন্নত করে, তাহলে তার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো হবে।

প্রশ্ন: বিপ্লবের লেগ স্পিনার হয়ে ওঠার গল্পটা কেমন?

সোহেল ইসলাম: লেগ স্পিন একটা সহজাত ব্যাপার। এটা সবার মধ্যে থাকে না। ছোটবেলা থেকেই সে লেগ স্পিন করত। ওর মধ্যে ওই গুণগুলো ছিল যা লেগ স্পিনার হওয়ার জন্য লাগে। এটাই সে বেশি করে অনুশীলন করছে।

প্রশ্ন: বিপ্লবের অনেক বিষয়ই আপনি দেখভাল করেন। তাঁর ব্যাটিং নিয়ে কাজ করছেন কিনা?

সোহেল ইসলাম: আমিতো ব্যাটিং নিয়ে কাজ করি না। আমি ওর স্পিনটাই দেখি। আমি এই ডিপার্টমেন্টটা বলতে পারব। ওর এখন যে বোলিংটা আছে এটাই ওকে ধরে রাখতে হবে এবং স্টক বলটা ওভার এন্ড ওভার বল করতে হবে। সামনে জাতীয় লিগ আছে। এটা একটা ভালো জায়গা, এখানে যদি স্টক বলটা আরও বেশি করে করতে পারে তাহলে আরও বেশি কনফিডেন্স থাকবে। নতুন যে ভেরিয়েশনগুলো সে অনুশীলন করছে, তাহলে কার্যকারীতা আরও বাড়াতে পারবে।

প্রশ্ন: বোলিংয়ের উন্নতিতে এই মুহূর্তে কী কী কাজ করছেন?

আমিনুল ইসলাম বিপ্লব: আমার আগে যে বোলিং ছিল, ওইটা নিয়েই কাজ করছি। দেখছি কীভাবে উন্নতি করা যায়। এখন বিভিন্ন ভেরিয়েশন নিয়ে কাজ করছি। গুগলি-ফ্লিপার এগুলো যদি কন্ট্রোলে ভালোভাবে করা যায়, তাহলে আরও ভালো হবে।

প্রশ্ন: আপনি মূলত ব্যাটসম্যান, লেগ স্পিনার হয়ে উঠলেন কীভাবে?

বিপ্লব: এটা এবারের আগেরবার যখন মোহামেডানে খেললাম তখনকার। তখন থেকেই সোহেল স্যার বলতেন যে কীভাবে বোলিং করলে আরও ভালো করা সম্ভব। এগুলো নিয়েই আসলে সামনে এগিয়ে যাওয়া। চেষ্টা করছি আরও ভালো করার।

প্রশ্ন: জাতীয় দলের হয়ে কতোটা পথ পাড়ি দিতে চান? এই মুহূর্তে কোনো লক্ষ্য স্থির করা আছে আপনার?

বিপ্লব: এখন তো শুরু মাত্র। সব সময় নিজের সেরাটা দিতে চেষ্টা করব। দেশকে ভালো কিছু দেয়ার চেষ্টা করব।

প্রশ্ন: কোচিং করানোর সময় কোন সব বিষয় মাথায় রাখেন? আপনার কোচিং করানোর তরিকা কী?

সোহেল ইসলাম: আমি যখন কোচিং করাই বাচ্চাদেরকে আমি অনেক ফ্রিডম দেই যে, তোমরা এটা করো, ওইটা করো। ওরা অনেক সাহস নিয়ে বল করে। ওরা যেকোনো কিছু করলে আমার ম্যাথডের মধ্যে পড়লে আমি অনেক ফ্রিডম দেই। ওরা অনেক রিস্ক নেয় যে, আমি এটা করতে পারব। আমার মনে হয় এই সাহস তাদের কাজে দেয়। ওই ভয়টা থাকে না। ওরা নতুন কিছু চেষ্টা করতে পারে। 

প্রশ্ন: এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাইপ লাইনে লেগ স্পিনারের সংখ্যা কেমন?

সোহেল ইসলাম: আমি মূলত অনূর্ধ্ব-১৭ দেখি। দলটিতে লেগ স্পিনার আছে। এখন বয়সভিত্তিক দলের প্রতিটিতেই দুই-একজন লেগ স্পিনার আছে। যেটা আগে ছিল না। এখন স্কোয়াডের মধ্যে আছে কেউ কিছু ম্যাচ খেলে। তারা যখন উন্নতি করবে, দুই-এক বছর পর আমরা আরও লেগ স্পিনার পাব।

প্রশ্ন: জাতীয় দলের স্পিনারদের নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? তারা কতোটা উন্নতি করছেন?

সোহেল ইসলাম: ওরা তো ফিঙ্গার স্পিনার। তারা নিজেদের জায়গায় আরও উন্নতি করার চেষ্টা করছে। বলের একটু পেস বাড়ানো, বলের শেপ ঠিক রাখা। সাথে সাথে রিস্ট স্পিনার হিসেবে বিপ্লব এসেছে। রিশাদ বলে আরেকটা ছেলে আছে। সে পাইপলাইনে আছে। এরাও কাজ করছে। এদের সময় দিতে হবে। এরা যেহেতু তরুণ। এক্ষেত্রে সময় দিতে হবে। আমরা যদি তাদের ভালো ব্যাকআপ দিতে পারি তাহলে ওরাও এক সময় ভালো করবে।

প্রশ্ন: ডেনিয়েল ভেটরির সঙ্গে কাজ করে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা কতোটা লাভবান হতে পারবেন বলে মনে করেন?

সোহেল ইসলাম: খেলোয়াড় হিসেবে ভেটরির পরিসংখ্যানই বলে সে অনেক অভিজ্ঞ। কোন পরিস্থিতিতে একজন বোলার মনস্তাত্ত্বিকভাবে শক্ত থাকবে, কীভাবে পরিকল্পনা করবে সে জানে। আমি মনে করি আমাদের ছেলেরা যদি এই জায়গায় তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারে, তাহলে আমরা ভালো করতে পারব।

প্রশ্ন: অনেক তরুণ ক্রিকেটার দলে আসছেন, তাদের মধ্যে ভয়কে জয় করার তাগিদ দেখতে পান কিনা?

সোহেল ইসলাম: আমাদের মতো করে আমরা চিন্তা করছি যে আমরা বাচ্চাদের ফ্রিডম দিব যে তোমরা রিস্ক নাও, খেলো। আমরা ফ্রিডম না দিলে তারা কখনও রিক্স নেবে না। রিস্ক না নিলে তারা একটা লেভেল থেকে আরেকটা লেভেলে যেতে পারবে না। এই জিনিসটা আমরা এরই মধ্যে পরিকল্পনা করছি। তাহলেই ভয়হীন ক্রিকেটার তৈরি হবে।