জাতীয় ক্রিকেট লিগ

পাঁচটি কারণে এবারের জাতীয় লিগ ব্যতিক্রম

ইনতেছার

ইনতেছার
প্রকাশের তারিখ: 20:02 বুধবার, 09 অক্টোবর, 2019

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) অবদান অনস্বীকার্য। আদর্শ টেস্ট ক্রিকেটার গঠনে এই টুর্নামেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। 


যদিও প্রতি বছরই জাতীয় লিগ আয়োজন করা হয় অনেকটা দায়সারাভাবেই। গত কয়েক আসরে বলতে গেলে তেমন প্রতিযোগিতাই দেখা যায়নি এই টুর্নামেন্টটিতে। এই আসরের উইকেট এবং মাঠ প্রস্তুত করার ক্ষেত্রেও আয়োজকদের যথেষ্ট উদাসীনতা দেখা যায়।

শুধু তাই নয়, জাতীয় লিগে প্রতিযোগিতার অভাবও প্রকটভাবে দেখা যায় প্রতিবার। এসব কারণে দেশের ক্রিকেটের পাইপলাইন সেভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে না। ফলে টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহও হারিয়ে ফেলছে অনেক ক্রিকেটার।

এ কারণে টুর্নামেন্টটিকে অনেকেই তুলনা করে থাকেন পিকনিক অর্থাৎ চড়ুইভাতির সঙ্গে। তবে এবার টনক নড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে এবার জাতীয় লিগের প্রতি আলাদা নজর দিতে যাচ্ছেন বিসিবি।

আঁটঘাট বেঁধেই মাঠে নামছে বিসিবি। যে কারণে ১০ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া জাতীয় লিগ হতে পারে গেল কয়েক আসর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কী কী কারণে এবারের জাতীয় লিগ আলাদা হতে পারে, দেখে নেয়া যাক।

১। ভারত সফরঃ আগামী নভেম্বরে তিনটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি টেস্ট খেলতে ভারত সফরে যাবে বাংলাদেশ। ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলার আগে জাতীয় লিগে খেলে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে পারবেন ক্রিকেটাররা।

এ কারণে জাতীয় দলের মূল ক্রিকেটাররা জাতীয় লিগের প্রথম দুই রাউন্ডে খেলবেন। স্বাভাবিকভাবেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবালদের উপস্থিতি জাতীয় লিগের জৌলুশ বাড়াবে। 

দলগুলোতে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা খেলার কারণে তরুণ ক্রিকেটাররাও টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ খুঁজে পাবে এবং সিনিয়রদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন। 

বিসিবির নির্বাচক হাবিবুল বাশার বলেন, 'জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা অন্তত দুটি যেন খেলতে পারে। আমার মনে হয় আমরা যদি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো করতে চাই, তাহলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বড় রান করাটা অভ্যাস। দশদিন নেট অনুশীলন করার চেয়ে দুটি চার দিনের ম্যাচ খেলা ভালো।’

২। ফিটনেস টেস্টঃ গত বছর জাতীয় লিগের আগে ফিটনেস টেস্ট থাকলেও এবার তা আরও বড় আকারে আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় লিগে অংশ নিতে হলে খেলোয়াড়দের বিপ টেস্টে পাস করা বাধ্যতামূলক করেছে বিসিবি। যেখানে সর্বনিম্ন পয়েন্ট (পাস মার্ক) বেধে দেয়া হয় ১১।

এই পরীক্ষায় শুরুতেই পাস করেন আবু হায়দার রনি, আরাফাত সানি, জাহিদুজ্জামান, সৈকত আলী, শামসুর রহমান, আল আমিন জুনিয়র, মেহেদী মারুফ, শুভাগত হোম, নাজমুল ইসলাম অপু, জুবায়ের লিখন, আলী আহমেদ মানিক, নাদিফ চৌধুরী এবং মোহাম্মদ শাকিল।

অবশ্য প্রথম দফায় পাশ করতে পারেননি মোহাম্মদ আশরাফুল, নাসির হোসেন ও আব্দুর রাজ্জাকদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা। ম্যাচ ফিটনেস এবং বিপ টেস্টের মানের মধ্যে পার্থক্য আছে বলেও দাবি করেন নাসির, আশরাফুলরা।

যদিও তাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করেন বিসিবির নির্বাচক হাবিবুল বাশার। তিনি বলেন, ‘ম্যাচ ফিটনেস আর বিপ টেস্টের মধ্যে পার্থক্য অবশ্যই আছে। তবে আপনি যদি বিপ টেস্টে ফিট না থাকেন তাহলে আসলে ১-২ ম্যাচ পর হলেও আপনার ফিটনেস কমে যাবে।’

একইসঙ্গে নাসির-আশরাফুলদের পাস করাতে বিশেষ ব্যবস্থাও গ্রহণ করে বিসিবি। এই সুবাদে অল্প নম্বর পেয়ে (১০ পয়েন্ট) বিপ টেস্টের দ্বিতীয় দফায় পার পেয়ে যান আশরাফুল, নাসিররা।

৩। উইকেটের মান এবং ভেন্যু বাড়ানোঃ জাতীয় লিগের ২১তম আসরে খেলা হবে মোট ১০টি ভেন্যুতে। ভেন্যুগুলো হচ্ছে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম, রাজশাহীর শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়াম, খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম, ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম, বরিশাল বিভাগীয় স্টেডিয়াম, কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ১ ও ২ নম্বর গ্রাউন্ড, রংপুর ক্রিকেট গার্ডেন, মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম।

অনেকগুলো ভেন্যুতে খেলা হওয়ার কারণে উইকেটেও থাকবে বৈচিত্র্যতা। শুরুতে অবশ্য স্পোর্টিং উইকেটের পরিকল্পনা করছে বিসিবি। কারণ ভারত সফরে স্পোর্টিং উইকেটেই খেলবে সাকিব আল হাসানের দল।

বিগত বছরগুলোতে অবশ্য মানসম্পন্ন উইকেট ছিল না জাতীয় লিগে। যে কারণে বেশিরভাগ ম্যাচই শেষ হয় নিষ্প্রাণ ড্রয়ে। এবার এমনটা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী।  

‘বিষয়টিতে আমরা নজর দিয়েছি। কিছু নির্দেশনা মাঠ পরিচালনা কমিটি থেকে দেয়া হয়েছে। উইকেট তৈরি, মাঠ তৈরির বিষয়ে কিছু নির্দেশনা তো দেয়া হবেই।’

৪। প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশাঃ

জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের উপস্থিতি, উইকেটের মান বৃদ্ধিতে স্বাভাবিকভাবেই জৌলুস বাড়তে যাচ্ছে জাতীয় লিগের। দলগুলোও সাজানো হয়েছে আকর্ষণীয়ভাবে। তাই অনুমেয়ভাবেই এবারের জাতীয় লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়তে যাচ্ছে।

জাতীয় লিগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে এবার বাড়তে যাচ্ছে, সেটা বোঝা গিয়েছে মুশফিকুর রহিমকে দেখে। জাতীয় লিগ উপলক্ষে হোম অব ক্রিকেটে বেশ কয়েকদিন ফিল্ডিং অনুশীলন করতে দেখা গিয়েছে মুশফিককে।

জাতীয় দলের যেকোনো ফরম্যাটে কিপিং গ্লাভসকে একরকম নিজের করে রেখে দিয়েছেন মুশফিক। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে উইকেটকিপিংয়ের প্রতি মুশফিকের ভালোবাসা প্রদর্শিত হয়েছে বার বার। কিন্তু এবারের জাতীয় লিগে মুশফিক কিপিং করবেন কিনা, সে সম্পর্কে তিনি নিজেই অবগত নন। 

 

এ কারণেই ফিল্ডিং অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছেন মুশফিক। কিপিং ছেড়ে ফিল্ডিংয়ের প্রতি মুশফিকের এমন নিবেদন এটাই প্রমাণ করে যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে এবারের জাতীয় লিগ।

৫। নতুন কোচঃ ঘরোয়া ক্রিকেটে গেল কয়েক বছর ধরে কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন দুই সাবেক ক্রিকেটার আফতাব আহমেদ ও রাজিন সালেহ। এবার তারা জাতীয় লিগের প্রধান কোচ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া বেশ কয়েকজন সাবেক ক্রিকেটারও এবার জাতীয় লিগে প্রধান কোচ ও সহকারী কোচ হিসেবে থাকছেন। আফতাবকে চট্টগ্রাম বিভাগের এবং রাজিনকে সিলেট বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জাতীয় দলের সাবেক পেসার ডলার মাহমুদ থাকছেন খুলনা বিভাগের সহকারী কোচ হিসেবে।

রাজিনের সহকারী হিসেবে থাকবেন সাবেক পেসার নাজমুল হোসেন। এ ছাড়া জাতীয় লিগে টানা তৃতীয়বারের মতো ঢাকা মেট্রোর প্রধান কোচের ভূমিকায় থাকবেন তালহা জুবায়ের। জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটাররা কোচ হিসেবে থাকায় নিঃসন্দেহে বাড়তে যাচ্ছে জাতীয় লিগের সৌন্দর্য।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোর প্রধান কোচ তালহা জুবায়ের বলেন, ‘এবার যেটা আলোচনায় এসেছে, তা হলো তরুণ কোচরা। রাজিন ভাই আসছেন, আফতাব এসেছে, আমি আছি এদিকে, নাসির উদ্দিন ফারুক আছে, ডলার মাহমুদ আছে। ক্রিকেটারদের থেকে যতো বেশি নেয়া যায় আমরা সেই চেষ্টা করব। আমরা যেহেতু এই পর্যায়ে খেলেছি।’